যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত কুমিল্লাবাসীদের নিয়ে গঠিত বৃহত্তর কুমিল্লা সমিতির সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে নিউইয়র্কে। গত ১৯ অক্টোবর জ্যাকসন হাইটসের একটি পার্টি হলে অনুষ্ঠিত এই সভায় সর্বসম্মতিক্রমে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করা হয়।
নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন বর্তমান কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি, আর সাধারণ সম্পাদক পদে পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক। পাশাপাশি কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন নতুন একজন সদস্য। সভায় সংগঠন থেকে পূর্বে বহিষ্কৃত কয়েকজন সদস্যের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়, যা উপস্থিত সদস্যদের করতালির মাধ্যমে গৃহীত হয়।
সভাটি সভাপতিত্ব করেন সমিতির সভাপতি এবং পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক। মঞ্চে আরও উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র সহ-সভাপতি, সহ-সভাপতি, কোষাধ্যক্ষসহ অন্যান্য দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ। এতে বৃহত্তর কুমিল্লার বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠন ও প্রবাসী নেতৃবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
সাধারণ সভার শুরুতে সভাপতি স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন। এরপর সাধারণ সম্পাদক তার বার্ষিক রিপোর্ট উপস্থাপন করেন এবং কোষাধ্যক্ষ আর্থিক প্রতিবেদন তুলে ধরেন।
সাধারণ সম্পাদক তার প্রতিবেদনে বলেন, প্রবাস জীবনের ব্যস্ততার মধ্যেও সবাই ভ্রাতৃত্ববোধে একত্রিত হওয়ার প্রত্যয়ে সংগঠনের কাজ করে যাচ্ছেন। বর্তমানে সমিতির আজীবন সদস্য ১২০ জন এবং সাধারণ সদস্য ২৬১ জন। তিনি বলেন, “আমরা দায়িত্ব পাওয়ার পর গঠনতন্ত্র অনুসরণ করে পরিকল্পিতভাবে কাজ শুরু করেছি। তবে সময়ের অভাব ও সিদ্ধান্তহীনতার কারণে কিছু সীমাবদ্ধতা থেকে গেছে, যার জন্য সদস্যদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, সংগঠনের সফলতা অর্জনে কার্যকরী পরিষদ ও সদস্যদের সহযোগিতা অপরিসীম। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন, দোয়া মাহফিল, ইফতার অনুষ্ঠান, মতবিনিময় সভা এবং বনভোজন।
আর্থিক প্রতিবেদনে কোষাধ্যক্ষ জানান, পূর্ববর্তী কমিটি থেকে পাওয়া অর্থের পরিমাণ ছিল ৩৬,৩৪৮ ডলার। ২০২৩ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত আয় হয়েছে ১১,৬৫১ ডলার এবং ব্যয় হয়েছে ৭১,৭৩০ ডলার। বর্তমানে সমিতির হাতে অবশিষ্ট রয়েছে ৪৪,৭৮৫ ডলার, যার মধ্যে ব্যাংকে ৪১,৯৫২ দশমিক ৬০ সেন্ট এবং নগদ ৩,৯২০ ডলার। সংগঠনের মোট সম্পদ দাঁড়িয়েছে ৭৯,৩৭২ ডলার। এছাড়া সমিতির মালিকানাধীন কবরের সংখ্যা ৬৫টি, যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৩২,৫০০ ডলার।
প্রতিবেদন উপস্থাপন পর্বে প্রশ্নোত্তর পর্বে কিছুটা উত্তেজনা সৃষ্টি হলেও, সভা শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়। সভাপতি বলেন, “আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকতে চাই। অতীতের ভুলবোঝাবুঝি ভুলে নতুনভাবে এগিয়ে যেতে চাই।” সেই সঙ্গে সংগঠনের কয়েকজন সাবেক সদস্যের ওপর থাকা বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেন।
এরপর অনুষ্ঠিত হয় নির্বাচন। তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে ভোটগ্রহণ ছাড়াই সর্বসম্মতিক্রমে নতুন সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক এবং কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত হন। কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, নির্বাচনের পুরো প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ও সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর নবনির্বাচিত সভাপতি সবাইকে ধন্যবাদ জানান এবং সংগঠনের ঐক্য ধরে রাখার অঙ্গীকার করেন। পুনর্নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদকও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে ভবিষ্যতে আরও দায়িত্বশীলভাবে সংগঠনের উন্নয়নে কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে নতুন কমিটির পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হবে বলে জানানো হয়।
এই নির্বাচন ও সাধারণ সভা প্রবাসে বসবাসরত বৃহত্তর কুমিল্লাবাসীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা ও ঐক্যের বার্তা বয়ে এনেছে।



