Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeআন্তর্জাতিকমার্কিন নাগরিকের বিরুদ্ধে ৫০ কোটি ডলারের ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ

মার্কিন নাগরিকের বিরুদ্ধে ৫০ কোটি ডলারের ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ

ভারতীয় বংশোদ্ভূত এক মার্কিন নাগরিক ও টেলিকম খাতের উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে বিশাল অঙ্কের ঋণ জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, এই জালিয়াতি পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের মূল কারিগর তিনিই। তাঁর নেতৃত্বে সংঘটিত এই আর্থিক কেলেঙ্কারির ফলে আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত একাধিক বিনিয়োগকারী ও ঋণপ্রদানকারী সংস্থা প্রায় ৫০ কোটি ডলারেরও বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে বলে জানা গেছে।

এই ঘটনাকে যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রভাবশালী গণমাধ্যম তাদের বিশেষ প্রতিবেদনে সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম “বিস্ময়কর আর্থিক জালিয়াতি” হিসেবে বর্ণনা করেছে।

কে এই অভিযুক্ত উদ্যোক্তা
অভিযুক্ত ব্যক্তি টেলিকম খাতে তুলনামূলকভাবে অপরিচিত দুটি প্রতিষ্ঠান—ব্রডব্যান্ড টেলিকম ও ব্রিজভয়েসের সঙ্গে যুক্ত। এই দুটি প্রতিষ্ঠানই ব্যাঙ্কাই গ্রুপ নামের একটি কর্পোরেট কাঠামোর অধীনে পরিচালিত হয়। ২০২৫ সালের জুলাই মাসে ব্যাঙ্কাই গ্রুপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ একটি পোস্টে তাঁকে প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেয়।

গ্রুপটির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিজেদের পরিচিতিতে বলা হয়েছে, তারা বিশ্বব্যাপী টেলিকমিউনিকেশন শিল্পে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান, যারা অপারেটর, টেলকো এবং প্রযুক্তি অংশীদারদের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতা বজায় রেখে টেলিকম খাতের উন্নয়নে কাজ করে। তাদের ওয়েবসাইটে উল্লেখ রয়েছে, এই প্রতিষ্ঠান বিশ্বের বিভিন্ন দেশের টেলিকম অপারেটরদের জন্য অবকাঠামো ও সংযোগ সরঞ্জাম সরবরাহ করে।

তবে বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, অভিযুক্ত ব্যক্তির পেশাগত সামাজিক প্রোফাইল সরিয়ে ফেলা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, কয়েক মাস আগেও তিনি নিউইয়র্কের গার্ডেন সিটি এলাকায় তাঁর অফিস পরিচালনা করছিলেন।

জালিয়াতির ধরন ও অভিযোগের বিবরণ
২০২৫ সালের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রে দায়ের করা মামলার অভিযোগ অনুযায়ী, অভিযুক্ত ব্যক্তির প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ৫০ কোটি ডলারের বেশি ঋণ বকেয়া রয়েছে। ঋণদাতাদের মধ্যে অন্যতম ব্ল্যাকরকের একটি সহকারী বিনিয়োগ সংস্থা এবং আরও কয়েকটি আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান। তাদের অভিযোগ, অভিযুক্ত ব্যক্তি ও তাঁর সহযোগীরা ভুয়া চালান এবং ভুয়া পাওনা হিসাব তৈরি করে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়েছেন। এই ভুয়া কাগজপত্রগুলো ঋণের জামানত হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল।

অভিযোগে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানগুলোর তহবিল ভারতের পাশাপাশি মরিশাসে স্থানান্তর করা হয় এবং সেখানে একটি মিথ্যা আর্থিক শক্তির চিত্র তুলে ধরে বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করা হয়।

ঋণদাতারা আরও অভিযোগ করেছেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি কারিওক্স ক্যাপিটাল ও বিবি ক্যাপিটাল এসপিভি নামের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি জটিল নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিলেন। এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ব্ল্যাকরকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ঋণপ্রদানকারী সংস্থা থেকে কোটি কোটি ডলার সংগ্রহ করা হয়।

মামলার নথিতে উল্লেখ আছে, ভুয়া গ্রাহক চালান ও কাগজপত্র তৈরি করে তিনি প্রায় ৫০ কোটি ডলারের বেশি ঋণ নিয়েছেন এবং পরবর্তীতে সেই অর্থ ভারত ও মরিশাসে স্থানান্তর করেছেন। বর্তমানে অভিযুক্ত ব্যক্তি ও তাঁর দুটি প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া ঘোষণার আবেদন করেছেন।

অভিযোগগুলোর বিষয়ে তাঁর আইনজীবী বলেছেন, এই মামলার অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং তাদের মক্কেল কোনো ধরনের আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে জড়িত নন। আইনজীবীর দাবি, এই মামলার অভিযোগে যে তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে তা বাস্তবতার সঙ্গে মেলে না।

এই ঘটনার তদন্ত এখনো চলমান, এবং যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো বিষয়টি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারী মহলে এই ঘটনাটি নতুন করে আর্থিক নিরাপত্তা ও ঋণ যাচাই পদ্ধতির প্রতি সতর্কতা সৃষ্টি করেছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments