এবার যুক্তরাজ্যে শীতকালীন ফ্লু মৌসুম শুরু হয়েছে সাধারণ সময়ের তুলনায় প্রায় পাঁচ সপ্তাহ আগেই। স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, এই আগাম সূচনা দেশটির জন্য বাড়তি উদ্বেগের কারণ হতে পারে। বিশেষ করে শিশু ও তরুণদের মধ্যে ফ্লু আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে, যা অল্প সময়ের মধ্যেই বয়স্ক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে সংশ্লিষ্ট সংস্থা।
দেশটির স্বাস্থ্য নিরাপত্তা সংস্থা জানায়, ফ্লু সংক্রমণ সাধারণত ডিসেম্বর নাগাদ বাড়তে শুরু করে, কিন্তু এবার অক্টোবরের আগেই উল্লেখযোগ্য হারে রোগী বাড়ছে। সংস্থাটি জনগণকে সতর্ক করেছে এবং ফ্লু টিকা নেওয়ার জন্য যোগ্য সবাইকে দ্রুত টিকাগ্রহণে উৎসাহিত করেছে।
যদিও এখনই নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না, এই বছরের ফ্লু মৌসুম কতটা গুরুতর হবে বা কেমন প্রভাব ফেলবে, তবে আগাম সংক্রমণ পরিস্থিতিকে বিশেষজ্ঞরা গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছেন।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, মৌসুমের শুরুটা আগেভাগে হওয়ায় অনেক ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী এখনো টিকা গ্রহণ করতে পারেননি। টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়েছে মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে, ফলে সংক্রমণ যদি এরই মধ্যে তীব্র আকার নেয়, তাহলে ঝুঁকি আরও বাড়বে।
তথ্য অনুযায়ী, গত তিন বছরের মধ্যে দুটি মৌসুম ছিল গত দশকের সবচেয়ে ভয়াবহ ফ্লু মৌসুম। কোভিড-১৯ মহামারির সময় দীর্ঘদিনের বিধিনিষেধে ফ্লু ভাইরাসের প্রাকৃতিক ছন্দ ব্যাহত হওয়ায় এবং মানুষের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। শুধু গত বছরেই প্রায় আট হাজার মানুষ ফ্লু-জনিত কারণে প্রাণ হারিয়েছেন, আর ২০২২–২৩ মৌসুমে সেই সংখ্যা প্রায় ১৬ হাজারে পৌঁছেছিল।
স্বাস্থ্য বিভাগের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, “আমরা উদ্বিগ্ন, কারণ ফ্লু ভাইরাস এবার স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কিছুটা আগে ছড়াতে শুরু করেছে। এটি শুধুমাত্র সাধারণ সর্দি-কাশি নয়, বরং একটি গুরুতর অসুস্থতা। প্রাথমিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া তরুণ এবং স্কুলপড়ুয়া শিশুদের মধ্যে সংক্রমণ বেশি দেখা যাচ্ছে। পরবর্তী সপ্তাহগুলোতে এটি পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়বে বলে আমরা আশঙ্কা করছি।”
বিশেষজ্ঞরা টিকা গ্রহণে গুরুত্ব আরোপ করেছেন। ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে সবাই, গর্ভবতী নারী এবং দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিরা বিনামূল্যে ফ্লু টিকা নিতে পারবেন। স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের পরামর্শ, এই শ্রেণির নাগরিকদের যত দ্রুত সম্ভব টিকা গ্রহণ করা উচিত, কারণ এদের মধ্যে গুরুতর অসুস্থতার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের মতে, “প্রতি বছর হাজার হাজার মানুষ ফ্লুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন এবং অনেকের মৃত্যু ঘটে। তাই যারা টিকার জন্য যোগ্য, তাদের দেরি না করে এখনই অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করা উচিত। টিকাই আমাদের সবচেয়ে কার্যকর প্রতিরক্ষা।”
একইসঙ্গে ১৬ বছরের নিচের শিশুদের টিকা দেওয়ার বিষয়েও অভিভাবকদের সচেতন হতে বলা হয়েছে। স্কুলে দেওয়া সম্মতিপত্র ফিরিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে, যাতে শিশুদের সহজে টিকা দেওয়া যায়। দুই থেকে তিন বছরের শিশুদের জন্য স্থানীয় চিকিৎসকের মাধ্যমে টিকার ব্যবস্থা রয়েছে। শিশুদের জন্য নাসাল স্প্রে টিকা দেওয়া হয়, যা রোগ প্রতিরোধে কার্যকর এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সংক্রমণ থেকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে।
যাদের মধ্যে ফ্লু বা কোভিডের উপসর্গ দেখা দিচ্ছে—যেমন জ্বর, কাশি, শরীর ব্যথা বা ক্লান্তি—তাদের অন্যদের সংস্পর্শ কমাতে বলা হয়েছে, বিশেষ করে বয়স্ক ও দুর্বল ব্যক্তিদের কাছ থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে বাইরে গেলে মাস্ক পরা, নিয়মিত হাত ধোয়া এবং ঘরের বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখা গুরুত্বপূর্ণ বলে বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন।
অন্যদিকে, স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে যে বর্তমানে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে এবং ভাইরাসের মাত্রা এখন মূলত স্বাভাবিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, মৌসুমী সংক্রমণ সবসময় পরিবর্তনশীল, তাই জনগণকে সচেতনতা ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা অব্যাহত রাখতে হবে।



