Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeইমিগ্রেশন তথ্যনিজ শহরে গায়ককে ঘিরে বিতর্ক: অভিবাসন নীতি নিয়ে বিভক্ত মতামত

নিজ শহরে গায়ককে ঘিরে বিতর্ক: অভিবাসন নীতি নিয়ে বিভক্ত মতামত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি ছোট শহরে জন্ম নেওয়া জনপ্রিয় কান্ট্রি সংগীতশিল্পী সম্প্রতি নতুন এক গান প্রকাশের পর স্থানীয়দের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র বিতর্ক। গানটির কয়েকটি লাইন অভিবাসন দমন অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বলে অনেকের ধারণা। ফলে, নিজের জন্মস্থানেই এই শিল্পীকে নিয়ে দেখা দিয়েছে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিক্রিয়া।

এই গায়ক কিছুদিন আগে মিশিগানের এক স্টেডিয়ামে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় কনসার্ট আয়োজন করে রেকর্ড গড়েছিলেন, যেখানে উপস্থিত ছিলেন এক লাখেরও বেশি শ্রোতা। কিন্তু তার জন্মস্থান ওকলাহোমার উত্তর-পূর্বের ছোট শহরটিতে—যেখানে মোট জনসংখ্যা দুই হাজারেরও কম—সবার দৃষ্টিভঙ্গি এক নয়। বিশেষ করে নতুন গানের কয়েকটি লাইন প্রকাশের পর থেকেই সেই বিভক্তি স্পষ্ট হয়েছে।

গানটির অংশবিশেষে বলা হয়েছে, “আইস (ICE) তোমার দরজা ভেঙে ঢুকবে / ঘর বানানোর চেষ্টাও বৃথা।” গায়ক সামাজিক মাধ্যমে এটি পোস্ট করে লেখেন, “লাল, সাদা আর নীলের ম্লান হয়ে যাওয়া।” এই লাইনগুলো অনেকের কাছে অভিবাসন নীতির সমালোচনা হিসেবে ধরা পড়েছে, আবার অনেকে মনে করছেন তিনি শুধু বর্তমান সমাজের বিভাজনের ছবি তুলে ধরেছেন।

স্থানীয় এক বারের মালিকের মতে, পুরো গানটি প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত মন্তব্য করা উচিত নয়। তার মতে, গায়ক কেবল দেশের বাস্তব অবস্থা প্রকাশ করতে চেয়েছেন—যেভাবে মানুষ ভিন্ন মতাদর্শে বিভক্ত হয়ে পড়ছে। অন্যদিকে, কিছু স্থানীয় বাসিন্দা গানটির ভাষা নিয়ে ক্ষুব্ধ। তারা মনে করেন, অভিবাসন দমন অভিযান বা পুলিশের কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করা উচিত হয়নি।

এই গায়ক আগে সেনাবাহিনীতে কাজ করেছেন এবং কয়েক বছরের মধ্যেই কান্ট্রি সংগীতে অন্যতম সফল শিল্পীতে পরিণত হয়েছেন। কিন্তু তার নতুন গানের এই অংশটি অনেককে অবাক করেছে, কারণ সাধারণত এই ঘরানার শিল্পীরা রক্ষণশীল রাজনীতির সমর্থক হিসেবে পরিচিত।

অনেকে বলছেন, তিনি তার অবস্থান পরিষ্কারভাবে জানাতে চেয়েছেন। সামাজিক মাধ্যমে শিল্পী উল্লেখ করেছেন, “গানটির পুরো সংস্করণ শুনলে বোঝা যাবে এটি কেবল একপাক্ষিক দৃষ্টিভঙ্গি নয়।”

অন্যদিকে, স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে কেউ কেউ অভিবাসন নীতিকে সমর্থন করলেও, এর প্রয়োগের ধরন নিয়ে অসন্তুষ্ট। এক ব্যবসায়ী বলেন, “আমি নিয়ম মেনে অভিবাসন চাই, কিন্তু সিস্টেমটা অনেক জটিল। আমার প্রতিষ্ঠানে যারা কাজ করেন, তাদের অনেক সময় ভিসা নবায়নের জন্য দেশে ফিরে যেতে হয়, এতে কাজের ক্ষতি হয়।”

তিনি আরও যোগ করেন, “সবাইকে এখানে থাকার অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয়, কিন্তু সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়াটা আরও মানবিক হওয়া উচিত।”

অন্যদিকে, স্থানীয় এক তরুণী ওয়েট্রেস জানান, তার পরিবারে অভিবাসী আত্মীয়রা সবসময় ভয়ে থাকেন বাইরে বের হতে। তিনি বলেন, “তাদের ভয়ের মধ্যে বাঁচতে হয়। তাই আমি খুশি যে আমার প্রিয় গায়ক এমন বিষয়ে কথা বলেছেন, যা অনেককে ভাবতে বাধ্য করবে।”

স্থানীয় প্রশাসনের এক কর্মকর্তা জানান, এলাকায় বড় কোনো অভিবাসন অভিযান ঘটেনি, তবে প্রয়োজনে তারা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। তার মতে, “যদি আইন প্রয়োগ হয়, সেটা জেলখানায় থাকা অপরাধীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত, রাস্তায় গিয়ে সাধারণ মানুষকে ধরা ঠিক নয়।”

শহরের আরেক বাসিন্দা, যিনি স্থানীয় এক দোকানে কাজ করেন, বলেন, “অভিবাসীদের বিরুদ্ধে যে মনোভাব দেখা যায়, সেটা অনেকটা অজ্ঞতার ফল। আমরা কেবল ভাগ্যক্রমে এই দেশে জন্মেছি, এর জন্য অন্যদের প্রতি বৈরী হওয়া ন্যায্য নয়।”

সবমিলিয়ে, গায়কটির নতুন গানটি তার শহরে শুধু শিল্প নয়, সমাজ ও রাজনীতি নিয়ে এক গভীর বিতর্কের সূচনা করেছে। কেউ একে বাস্তবতা প্রকাশের সাহসী উদ্যোগ বলছেন, আবার কেউ মনে করছেন তিনি সীমা অতিক্রম করেছেন। তবে একথা নিশ্চিত—এই বিতর্ক ছোট শহরটির দেয়াল পেরিয়ে এখন জাতীয় আলোচনায় জায়গা করে নিয়েছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments