ভেনেজুয়েলায় সামরিক হামলা চালানোর কোনো পরিকল্পনা নেই— এমন ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। সাম্প্রতিক সময়ে ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছিল। অনেকেই ধারণা করছিলেন, ওয়াশিংটন হয়তো ভেনেজুয়েলায় সরকার পরিবর্তনের উদ্দেশ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে প্রেসিডেন্টের বক্তব্যে এই আশঙ্কা আপাতত কিছুটা প্রশমিত হয়েছে।
জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যে ক্যারিবীয় অঞ্চলে তাদের নৌবাহিনীর আটটি যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে। এছাড়া পুয়ের্তো রিকোতে অবস্থান করছে অত্যাধুনিক এফ–৩৫ যুদ্ধবিমান, যা রাডার এড়ানোর সক্ষমতা রাখে। পাশাপাশি, বিমানবাহী রণতরীসহ একটি শক্তিশালী নৌবহর ঐ অঞ্চলের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। উল্লেখ্য, পুয়ের্তো রিকো যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চল।
ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই বিপুল সামরিক মোতায়েনের উদ্দেশ্য ভেনেজুয়েলার রাজনৈতিক পরিবর্তন নয়, বরং আন্তর্জাতিক মাদক চোরাচালান দমন করা। তাদের দাবি অনুযায়ী, সাম্প্রতিক সময়ে ওই অঞ্চলের সমুদ্রপথে অবৈধ মাদক পরিবহন বেড়ে গেছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সম্প্রতি এক সংবাদকর্মী প্রেসিডেন্টকে জিজ্ঞেস করেন, ভেনেজুয়েলায় হামলার কোনো পরিকল্পনা আছে কি না। জবাবে প্রেসিডেন্ট স্পষ্টভাবে বলেন, “না।” ওই সময় তিনি মেরিল্যান্ড থেকে ফ্লোরিডার উদ্দেশে যাত্রা করছিলেন।
উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবীয় অঞ্চল ও পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে মাদকবাহী বলে সন্দেহভাজন কিছু নৌযানের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করে। এ পর্যন্ত ঐসব অভিযানে অন্তত ৬২ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। ধ্বংস করা হয়েছে ১৪টি নৌযান এবং একটি আধা ডুবোজাহাজ।
ওয়াশিংটন প্রশাসনের মতে, এসব নৌযান মাদক চোরাচালানের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত এবং সেগুলো জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সরাসরি হুমকি সৃষ্টি করছে। তবে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ বলছেন, এসব হামলা অনেক ক্ষেত্রেই বিচারবহির্ভূত হত্যার সমতুল্য, কারণ অভিযোগ প্রমাণের আগেই লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হচ্ছে।
এদিকে, ভেনেজুয়েলার উপকূলবর্তী এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের বি–৫২ ও বি–১বি মডেলের কৌশলগত বোমারু বিমানকে সম্প্রতি একাধিকবার চক্কর দিতে দেখা গেছে। সর্বশেষ সোমবার এসব বিমান ওই অঞ্চলে টহল দেয়, যা পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করে তুলেছে।
ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্টের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এই সামরিক তৎপরতা কেবল মাদকবিরোধী অভিযানের অজুহাত নয়; এর আড়ালে সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র চলছে। তিনি অভিযোগ করেন, ওয়াশিংটন পরিকল্পিতভাবে এই অঞ্চলে ‘কৃত্রিম যুদ্ধ পরিস্থিতি’ সৃষ্টি করছে, যা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন সামরিক শক্তির এই প্রদর্শন রাজনৈতিক চাপ সৃষ্টির একটি কৌশল হতে পারে। যদিও প্রেসিডেন্টের বক্তব্যে সরাসরি হামলার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, তবে বাস্তব পরিস্থিতি এখনও অনেকটাই জটিল এবং অনিশ্চিত।
ভেনেজুয়েলার ভূরাজনৈতিক অবস্থান এবং তেলসমৃদ্ধ অর্থনীতি দীর্ঘদিন ধরেই আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর আগ্রহের কেন্দ্রে। তাই পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক তৎপরতা আগামী দিনগুলোতেও বিশ্ব রাজনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থাকবে।



