ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সুরাট বাজারে একটি রাজনৈতিক সংগঠনের ইউনিয়ন কার্যালয় থেকে সরকারি প্রণোদনার সার ও বীজ উদ্ধার করেছে কৃষি বিভাগ। শুক্রবার গভীর রাতে স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে কৃষি কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে এসব সামগ্রী জব্দ করেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ওই রাজনৈতিক সংগঠনের সাইনবোর্ড লাগানো অফিসে বিপুল পরিমাণ সার ও বীজ মজুত রাখা হয়েছে—এমন তথ্য এলাকাবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে তারা ঘটনাস্থলে জড়ো হন। পরে খবর পেয়ে কৃষি বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা সেখানে পৌঁছে সরেজমিনে বিষয়টি যাচাই করেন।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, উদ্ধার করা সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে ৮ প্যাকেট সরিষা বীজ, ৫ বস্তা ডিএপি সার, ৫ বস্তা পটাশ, ৮ কেজি সরিষা এবং ১৯ কেজি মসুর বীজ। এসব সামগ্রী পরবর্তীতে উদ্ধার করে উপজেলা কৃষি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তা জানান, কৃষকদের জন্য বরাদ্দ করা প্রণোদনার সার ও বীজ কোনো রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংরক্ষণ করার নিয়ম নেই। সম্প্রতি উপজেলা পরিষদ থেকে কৃষকদের মধ্যে সরকারি প্রণোদনার অংশ হিসেবে সার ও বীজ বিতরণ করা হয়েছিল। কৃষকেরা সেগুলো গ্রহণের সময় নিয়ম অনুযায়ী সই-সাক্ষরও করেন। কৃষি কর্মকর্তার দাবি, উদ্ধার হওয়া সার ও বীজ ওই বরাদ্দের অংশ, যা ১২ জন কৃষকের নামে বিতরণ করা হয়েছিল। এখন এসব সামগ্রী কীভাবে রাজনৈতিক কার্যালয়ে এল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কৃষি বিভাগের একজন কর্মকর্তার ভাষায়, “এ বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। যাদের নামে সার-বীজ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল এবং যেভাবে তা রাজনৈতিক কার্যালয়ে এল, তা যাচাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এদিকে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃত্বের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে ভিন্ন দাবি করা হয়েছে। সংগঠনের একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেন, “কৃষকেরা নিজেরাই সার-বীজ অফিসে রেখে গেছেন। যেহেতু সেদিন অনেকেই উপস্থিত থাকতে পারেননি, তাই ৩০ জন কৃষক পরদিন এসে সার ও বীজ নেওয়ার কথা ছিল।”
তাঁর অভিযোগ, কিছু প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক নেতা ঘটনাটিকে ইস্যু বানিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। তাঁর দাবি, সংগঠনটির জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে এসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে।
অন্যদিকে এলাকার কিছু জনপ্রতিনিধি জানিয়েছেন, সরকারি বীজ ও সার যদি সত্যিই রাজনৈতিক অফিসে রাখা হয়ে থাকে, তবে বিষয়টি কৃষি আইনের পরিপন্থী। তাঁদের মতে, কৃষি বিভাগের উচিত পুরো ঘটনা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।
একজন সাবেক স্থানীয় প্রতিনিধি বলেন, “দলীয় কার্যালয়ে সরকারি প্রণোদনার সামগ্রী রাখার কোনো নিয়ম নেই। কৃষকের জন্য বরাদ্দকৃত উপকরণ সঠিক হাতে পৌঁছেছে কিনা, তা নিশ্চিত করা জরুরি।”
এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে আলোচনা ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ কেউ এটিকে প্রশাসনিক গাফিলতি বলছেন, আবার কেউ দেখছেন রাজনৈতিক প্রভাবের ছায়া। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, প্রণোদনার উপকরণ বিতরণে যেন ভবিষ্যতে এমন অনিয়ম না ঘটে, সে বিষয়ে সতর্ক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঘটনাটিকে ঘিরে স্থানীয় জনমনে প্রশ্ন উঠেছে—সরকারি সহায়তা কৃষকের কাছে পৌঁছানোর আগে রাজনৈতিক প্রভাবের জালে জড়িয়ে পড়ছে কিনা। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিষয়টির সঠিক চিত্র স্পষ্ট হবে না বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।



