দীর্ঘ সময় ধরে চলা প্রশাসনিক স্থবিরতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে খাদ্য সহায়তা সংস্থাগুলো এক নজিরবিহীন চাপে পড়েছে। বিভিন্ন রাজ্যে খাদ্য বিতরণের চাহিদা আগের তুলনায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। কেউ কেউ জরুরি তহবিল থেকে অর্থ টানতে বাধ্য হচ্ছে, আবার কেউ প্রতিদিন লক্ষাধিক মানুষকে আহার দিচ্ছে তবু প্রয়োজন মেটানো সম্ভব হচ্ছে না।
অক্টোবরের শেষ প্রান্তে এসে প্রায় এক মাসের সরকারি কার্যক্রম বন্ধ থাকার প্রভাব স্পষ্ট হচ্ছে। নভেম্বরে ফেডারেল খাদ্য সহায়তা (ফুড স্ট্যাম্প) স্থগিত হওয়ার সম্ভাবনায় কোটি কোটি মানুষ খাদ্যসংকটে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এই অবস্থায় দেশজুড়ে দাতব্য সংস্থা, খাদ্য ব্যাংক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো হিমশিম খাচ্ছে।
বড় ও ছোট মিলিয়ে এক ডজনেরও বেশি দাতব্য সংস্থা জানিয়েছে, তাদের সহায়তা প্রদানের ক্ষমতা ইতোমধ্যে অতিক্রম করেছে। অনেক জায়গায় সাহায্য চাওয়ার সংখ্যার তুলনায় সরবরাহ অত্যন্ত সীমিত হয়ে পড়েছে। এক খাদ্য ব্যাংকের প্রধান জানিয়েছেন, “প্রভাবটা এখন থেকে আরও তীব্র হবে। নভেম্বরের শুরুতে যা দেখা যাবে, তা হবে একেবারে নজিরবিহীন।”
থ্যাঙ্কসগিভিং ঘনিয়ে আসছে, কিন্তু হাজার হাজার সরকারি কর্মচারী বেতনহীন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন। অনেকে এখন খাদ্য সহায়তা কেন্দ্রে লাইনে দাঁড়াতে বাধ্য হচ্ছেন। একই সঙ্গে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘোষণা এসেছে, পরবর্তী মাসে প্রায় ৪২ মিলিয়ন আমেরিকানকে ফুড স্ট্যাম্প দেওয়ার মতো অর্থ সরকারের কাছে নেই। ফলে দাতব্য সংস্থাগুলোর ওপর চাপ আরও বাড়ছে।
স্বেচ্ছাসেবক সংগঠনের এক সদস্য বলেন, “এটা কোনো খেলা নয়, মানুষের জীবনের প্রশ্ন। প্রতিদিন নতুন মুখ আসছে, কিন্তু সবার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য নেই।”
আরেক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “আমরা প্রতি সপ্তাহে প্রায় ৪৫০,০০০ পাউন্ড খাদ্য বিতরণ করি, কিন্তু এখন সেটা বাড়িয়ে ৬০০,০০০ পাউন্ড করতে হচ্ছে। মাসে যে অর্থ প্রয়োজন, তা এক লাফে বেড়ে যাচ্ছে।”
এ অবস্থায় বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য নিজেদের উদ্যোগে ঘাটতি পূরণের চেষ্টা করছে। কেউ ন্যাশনাল গার্ড বাহিনী মোতায়েন করেছে খাদ্য বিতরণে সহায়তার জন্য, আবার কেউ জরুরি তহবিল থেকে লক্ষ লক্ষ ডলার বরাদ্দ দিয়েছে। কিছু রাজ্যে নিজেদের ফুড অ্যাসিস্ট্যান্স প্রোগ্রামও চালু হয়েছে, যা সপ্তাহে কয়েক কোটি ডলার ব্যয়ে পরিচালিত হচ্ছে।
তবে প্রতিটি রাজ্যের পক্ষে ফেডারেল অনুদানের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব নয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, খাদ্য ব্যাংকগুলো কখনোই সরকারী খাদ্য সহায়তার বিকল্প নয়—বরং এগুলো কেবল অতিরিক্ত নিরাপত্তা বলয় হিসেবে কাজ করে। এখন সেই ভারসাম্য সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, জর্জিয়া রাজ্যে প্রতি মাসে প্রায় ২৫০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের ফুড স্ট্যাম্প বিতরণ করা হয়, অথচ খাদ্য ব্যাংকগুলো মাত্র ৪.৫ মিলিয়ন ডলারের খাদ্য বিতরণ করতে পারে। এতে বোঝা যায়, তারা কত সীমিত সামর্থ্যে কাজ করছে।
এদিকে ফেডারেল বাজেট সংকোচনের কারণে কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি খাদ্য কেনার যে কর্মসূচি চালু ছিল, সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে। এতে খাদ্য ব্যাংকগুলো বিপাকে পড়েছে। এক খাদ্য সংস্থার প্রধান জানান, “ফেডারেল সহায়তার ক্ষয়িষ্ণুতা এখন প্রকট। খাদ্য বিতরণের প্রায় এক-চতুর্থাংশ আসে জরুরি খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি থেকে। কিন্তু তহবিল কমে যাওয়ায় আমরা অনেক ট্রাক বাতিল করতে বাধ্য হয়েছি।”
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যেভাবে সরকারি সহায়তা হ্রাস পাচ্ছে এবং ফেডারেল প্রশাসনিক স্থবিরতা দীর্ঘায়িত হচ্ছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের ভাষায়, এটি এখন এক “পারফেক্ট স্টর্ম”—যেখানে প্রশাসনিক স্থবিরতা, বাজেট ঘাটতি এবং জনচাহিদার বিস্ফোরণ একসঙ্গে খাদ্য সহায়তা ব্যবস্থাকে ভেঙে দিচ্ছে।



