Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeকমিউনিটি সংবাদ৪৩ বছর কারাভোগ শেষে মুক্তি পেলেও এবার তাকে অপেক্ষা করছে বিতাড়নের হুমকি

৪৩ বছর কারাভোগ শেষে মুক্তি পেলেও এবার তাকে অপেক্ষা করছে বিতাড়নের হুমকি

একজন মানুষ, যিনি জীবনের ৪৩টি বছর কারাগারে কাটিয়েছেন, অবশেষে আদালতের রায়ে মুক্তি পাওয়ার পর আবারও এক নতুন লড়াইয়ের মুখোমুখি হয়েছেন—নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর আইনি প্রক্রিয়া।

ঘটনাটি যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ার। চার দশকেরও বেশি সময় ধরে এক বন্ধুর হত্যার অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত ওই ব্যক্তি অবশেষে মুক্তি পান, যখন নতুনভাবে উদ্ঘাটিত প্রমাণ আদালতকে জানায় যে, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগটি ছিল সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কিন্তু পরিবারের সদস্যরা যখন তাকে বাড়ি ফিরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখনই হঠাৎ করে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ তাকে আটক করে।

প্রায় ৬৪ বছর বয়সী এই ব্যক্তি শিশুকালে ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। মাত্র নয় মাস বয়সে বাবা-মায়ের সঙ্গে আমেরিকায় আগমন এবং পরবর্তীতে এখানেই বড় হয়ে ওঠা—সব মিলিয়ে তার শৈশব-কৈশোর কেটেছে যুক্তরাষ্ট্রের এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-কেন্দ্রিক শহরে। বন্ধুত্ব, বিশ্ববিদ্যালয় জীবন এবং তারুণ্যের নানা অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে তিনি এগিয়ে যান। কিন্তু ১৯৮০ সালের ডিসেম্বর মাসে বন্ধুর এক রহস্যজনক নিখোঁজের ঘটনায় জীবনটি ঘুরে যায় অন্য দিকে।

সেই বছরই তাকে হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। সাক্ষী বা স্পষ্ট কোনো উদ্দেশ্য না থাকা সত্ত্বেও আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করে আজীবন কারাদণ্ড দেন। ১৯৮৩ সালে প্রথম দণ্ডাদেশের পরও ১৯৮৮ সালে পুনর্বিচারে আবারও একই রায় হয়। ওই সময় স্থানীয় সমাজে দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত মানুষ খুব কম ছিল, এবং তার জন্মস্থান, ধর্মীয় অভ্যাস ও ধ্যান–ধ্যানযোগের প্রসঙ্গ আদালতে এমনভাবে উপস্থাপিত হয় যা তাকে জুরির চোখে ‘ভিন্ন’ করে তোলে।

প্রতিরক্ষা পক্ষ দীর্ঘদিন ধরে বলিস্টিক্স প্রমাণ নিয়ে প্রশ্ন তুললেও তা কখনো আদালতের সামনে আসেনি। অবশেষে ২০২৩ সালে নতুন একজন আইনজীবী মামলা পুনঃপর্যালোচনা করতে গিয়ে আবিষ্কার করেন—এফবিআই-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, নিহত ব্যক্তির শরীরে যে বুলেটের ক্ষত পাওয়া গেছে, তা অভিযুক্ত ব্যক্তির কেনা বন্দুক থেকে নিক্ষেপ করা সম্ভব নয়। এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যটি আগের প্রসিকিউশন পক্ষ গোপন রেখেছিল। আদালত বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে এই বছরের আগস্টে রায় বাতিল করে দেয় এবং জেলা অ্যাটর্নি নতুন করে মামলা না করার সিদ্ধান্ত নেন।

কিন্তু মুক্তির আনন্দ বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। কারণ, ১৯৯৯ সালের একটি পুরোনো বহিষ্কারাদেশের ভিত্তিতে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ তাকে পুনরায় আটক করে। এখন তার আইনজীবীরা আদালতকে বোঝানোর চেষ্টা করছেন যে, তার অতীতের একটি মাদক সংক্রান্ত মামলা—যার জন্য তিনি তরুণ বয়সে দোষ স্বীকার করেছিলেন—৪৩ বছরের ভুল সাজা এবং তার পরিশোধিত জীবনযাপনের তুলনায় নগণ্য।

কারাগারে থাকার সময় তিনি একাধিক ডিগ্রি অর্জন করেছেন, শত শত বন্দিকে পড়িয়েছেন, এমনকি প্রায় পাঁচ দশকে মাত্র একবার নিয়ম ভেঙেছেন—যখন বাইরে থেকে কেউ তার জন্য খাবার পাঠিয়েছিল। এমন একজন মানুষের প্রতি সহানুভূতি দেখানো উচিত বলে তার আইনজীবীরা মনে করেন।

কিন্তু প্রশাসন তাদের অবস্থানে অনড়। সরকারি নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে অপরাধে জড়িত বিদেশিদের জন্য কোনো ছাড় নেই। এখন অভিবাসন আপিল বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে, মামলা পুনরায় খোলা হবে কি না।

অভিযুক্ত ব্যক্তির পরিবার এই বিলম্বে হতাশ হলেও এখনও আশাবাদী। তার বোন বলেছেন, “সে জানে জীবনে অনেক কিছু অর্থহীন মনে হতে পারে। তবুও সত্য, ন্যায় আর মানবিকতা শেষ পর্যন্ত জয়ী হবেই—এই বিশ্বাস নিয়েই সে অপেক্ষা করছে।”

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments