আগামী বছরের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চীন সফরে যাবেন। দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে তিনি এই সফরের ঘোষণা দেন। চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ওই বৈঠককে তিনি “অত্যন্ত সফল” হিসেবে বর্ণনা করেন এবং জানান, আলোচনায় দুই দেশের মধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে।
বৈঠক শেষে ট্রাম্প বলেন, তাঁর এই সফরের পর কোনো এক সময়ে চীনের প্রেসিডেন্ট যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাবেন। সম্ভাব্য স্থান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ওয়াশিংটন ডিসি বা ফ্লোরিডার পাম বিচকে।
বৈঠক শেষে ট্রাম্প বলেন, “আমাদের এই আলোচনায় আমরা প্রায় সব বিষয়েই একমত হয়েছি। বৈঠকটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ হয়েছে।” তিনি আরও জানান, তাঁর প্রশাসনের সাম্প্রতিক সাফল্যের জন্য চীনা প্রতিনিধি দল তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছে।
বাণিজ্য ও শুল্ক বিষয়ক অগ্রগতি
বৈঠকের অন্যতম আলোচ্য বিষয় ছিল দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক। ট্রাম্প জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত সাধারণ শুল্কহার ৫৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪৭ শতাংশ করা হয়েছে। নতুন এই শুল্কহার তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হবে বলে তিনি জানান।
এ ছাড়াও “বিরল খনিজ” বা Rare Earth Minerals নিয়ে দীর্ঘদিনের বিরোধেরও সমাধান হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। যদিও এ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু প্রকাশ করা হয়নি, তবে ট্রাম্পের বক্তব্য অনুযায়ী, এখন থেকে চীনের পক্ষ থেকে এই খনিজের রপ্তানিতে আর কোনো বাধা থাকবে না।
এই বিরল খনিজ উপাদানগুলো উচ্চ প্রযুক্তির যন্ত্রাংশ তৈরিতে অপরিহার্য। এতদিন চীন এই খনিজের প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সরবরাহে একচেটিয়া প্রভাব বজায় রেখেছিল, যার ফলে যুক্তরাষ্ট্র–চীন সম্পর্কের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়েছিল।
বৈঠকে ট্রাম্প আরও জানিয়েছেন, চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন আমদানি বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তাঁর ভাষায়, “চীন এখন অনেক বেশি পরিমাণে সয়াবিন কিনতে যাচ্ছে, যা আমাদের উভয় দেশের অর্থনীতির জন্যই ইতিবাচক।”
এ ছাড়া বৈঠকে চীনা প্রেসিডেন্ট তাঁর দেশে ফেন্টানিল নামক মাদকের কাঁচামাল রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন বলে জানান ট্রাম্প।
উত্তর কোরিয়া ও কূটনৈতিক আলোচনা
বৈঠকে উত্তর কোরিয়া প্রসঙ্গও উঠে আসে। ট্রাম্প জানান, এই সফরে তাঁর ব্যস্ত সূচির কারণে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে বৈঠকের সুযোগ হয়নি। তবে তিনি ভবিষ্যতে আবারও কিমের সঙ্গে দেখা করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।
ট্রাম্প বলেন, “আমরা এবার এত ব্যস্ত ছিলাম যে কিম জং উনের সঙ্গে বৈঠক করা সম্ভব হয়নি। তবে আমি তাঁকে যথেষ্ট সম্মান করি, এবং ভবিষ্যতে আবার দেখা করার পরিকল্পনা আছে।”
উল্লেখ্য, এর আগে ট্রাম্প ও কিম তিনবার মুখোমুখি বৈঠক করেছেন এবং তাঁদের মধ্যে একাধিকবার চিঠি বিনিময়ও হয়েছে।
তাইওয়ান ও ইউক্রেন প্রসঙ্গ
বৈঠকে তাইওয়ান ইস্যুতে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “তাইওয়ানের প্রসঙ্গ কখনোই আলোচনায় আসেনি।”
চীন তাইওয়ানকে নিজেদের একটি বিচ্ছিন্ন প্রদেশ হিসেবে দেখে, যদিও তাইওয়ান নিজেকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাইওয়ানের আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্ক না থাকলেও দেশটি সবসময় দ্বীপ রাষ্ট্রটির অন্যতম বড় সমর্থক হিসেবে পরিচিত।
ইউক্রেন প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, এই বিষয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে কাজ করবে। যদিও বিস্তারিত কোনো পরিকল্পনা তিনি প্রকাশ করেননি।
এই বৈঠককে দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে দেখা হচ্ছে। বাণিজ্য, নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক সহযোগিতার নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে বুসান বৈঠকটি। আগামী এপ্রিলে চীন সফরে গিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই আলোচনাকে আরও গভীর ও বাস্তবমুখী করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।



