Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeবিজনেসবিশ্ববাজারে সোনার দাম কমছে: এক সপ্তাহে ৮% পতন

বিশ্ববাজারে সোনার দাম কমছে: এক সপ্তাহে ৮% পতন

বিশ্ববাজারে সোনার দাম আবারও পতনের মুখে। গত সোমবার এক দিনে সোনার দাম ৩ শতাংশের বেশি কমে গিয়েছিল। মঙ্গলবারের শুরুতেই নিউ ইয়র্কের বাজারে সোনার দাম আরও ০.৩৩ শতাংশ হ্রাস পায়, আউন্সপ্রতি দাঁড়িয়ে ৩,৯৯০ ডলারে।

গোল্ড প্রাইস ডট অর্গের তথ্যানুসারে, গত এক সপ্তাহে সোনার দাম ৮ শতাংশের বেশি কমেছে। ২০১৩ সালের পর এক সপ্তাহে এত বড় পতন আর দেখা যায়নি। চলতি বছরের শুরুতে সোনার দাম ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় ছিল, কিন্তু বছরের শেষভাগে সেই ধারায় বিরতি এসেছে।

এই বছরের শুরুতে সোনার দাম বিশ্ববাজারে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছিল। মূলত ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, ফেডারেল রিজার্ভের সুদহার কমানোর সম্ভাবনা এবং মার্কিন ডলারের পতনের প্রভাবেই বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে সোনার দিকে ঝুঁকেছিলেন। করোনা মহামারির সময়ও এ ধরনের গোল্ড রাশ দেখা গেছে। তবে ডলারের মান বৃদ্ধি পেতে থাকলে সোনার দাম কমতে শুরু করে।

বর্তমানে বাজারের মনোভাব বদলেছে। মার্কিন ডলারের শক্তিশালী অবস্থান এবং যুক্তরাষ্ট্র–চীন বাণিজ্য উত্তেজনার কিছুটা প্রশমন বিনিয়োগকারীদের মুনাফা তোলার দিকে প্ররোচিত করছে। ডলার সূচক বা ডলার ইনডেক্স ১০৬-এর উপরে পৌঁছায়, ফলে বিদেশি ক্রেতাদের জন্য সোনা তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে এবং চাহিদা কমেছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের মনোভাবেও পরিবর্তন এসেছে। মূল্যস্ফীতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে এবং শেয়ার ও বন্ডবাজারে ঝুঁকি নেওয়ার আগ্রহ বাড়ছে। এ কারণে বছরের শুরুতে সোনার প্রতি যে প্রবল আকর্ষণ তৈরি হয়েছিল, এখন তা হ্রাস পেতে শুরু করেছে।

প্রযুক্তিগত দিক থেকেও সোনার দাম কমার প্রভাব পড়েছে। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে প্রতি আউন্সে ৪,০০০ থেকে ৪,০৫০ ডলারের মধ্যে দাম স্বাভাবিক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই সীমার নিচে নেমে গেলে ৩,৭০০ থেকে ৩,৫০০ ডলারের মধ্যে আরও বড় পতনের সম্ভাবনা রয়েছে।

বাজারের ব্যবসায়ীরা মনে করছেন, সোনার দাম এই সীমার উপরে থাকলে তা কিছুদিন স্থিতিশীল থাকবে বা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ওঠানামা করবে। যারা সাম্প্রতিক সময়ে সোনায় বিনিয়োগ করেছিলেন, তারা নতুন করে ভাবছেন; কেউ মুনাফা তুলছেন, কেউ আবার ডলারভিত্তিক সম্পদে ফিরছেন।

দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীরা এখনও সতর্ক আশাবাদী। তাদের মতে, বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা, সুদহার হ্রাসের সম্ভাবনা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ধারাবাহিক সোনা ক্রয় বাজারকে স্থিতিশীল রাখছে। তবে, বাজার বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেন, বৈশ্বিক অর্থনীতি স্থিতিশীল এবং মার্কিন ডলার শক্তিশালী থাকলে স্বল্প মেয়াদে সোনার দাম আরও কিছুটা কমতে পারে। অপরদিকে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির আশঙ্কা বা ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিলে বিনিয়োগকারীরা পুনরায় সোনার দিকে ঝুঁকতে পারেন।

বর্তমানে সোনার বাজারে কয়েক মাসের উচ্ছ্বাসের পর দাম গতি হারিয়েছে। তবে ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বাজারে ইতিবাচক ধারা বজায় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। বিনিয়োগ ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকসের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সোনার দাম প্রতি আউন্সে ৪,০০০ ডলার থেকে বেড়ে ৪,৪৪০ ডলার পর্যন্ত উঠতে পারে।

দেশীয় বাজারেও এর প্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। ২২ অক্টোবর দেশের বাজারে সোনার দাম কমানো হয়েছে। এই পরিস্থিতি বিনিয়োগকারীদের জন্য সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করছে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে সোনার নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে জনপ্রিয়তা বজায় থাকবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments