যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ায় অভিবাসন কর্তৃপক্ষের ধাওয়া থেকে পালাতে গিয়ে এক ব্যক্তি সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সকালে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে ইন্টারস্টেট ২৬৪ মহাসড়কের মিলিটারি হাইওয়ে ইন্টারচেঞ্জ এলাকায়।
প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, অভিবাসন ও শুল্ক প্রয়োগ সংস্থার (আইস) একটি টিম লক্ষ্যভিত্তিক অভিযান পরিচালনা করছিল। তারা একটি গাড়ি থামিয়ে তাতে থাকা যাত্রীদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। কর্মকর্তারা সন্দেহ করেন, গাড়ির আরোহীরা যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে অবস্থান করছেন। এ সময় এক ব্যক্তি, যাকে পরে শনাক্ত করা হয় হোসে ক্যাস্ত্রো রিভেরা নামে, হঠাৎ গাড়ি থেকে নেমে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করেন।
রিভেরা দ্রুতগামী গাড়িগুলোর মাঝ দিয়ে দৌড়ে মহাসড়ক পেরোতে গেলে একটি চলন্ত গাড়ি তাকে ধাক্কা দেয়। ঘটনাস্থলেই তিনি গুরুতর আহত হন। উপস্থিত একজন আইস কর্মকর্তা তাৎক্ষণিকভাবে সিপিআর (কার্ডিওপালমোনারি রিসাসিটেশন) দেওয়ার চেষ্টা করেন, তবে শেষ পর্যন্ত তাকে বাঁচানো যায়নি।
ভার্জিনিয়া স্টেট পুলিশ জানায়, সকাল ১১টার দিকে তারা একটি সড়ক দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। সেখানে পৌঁছে কর্মকর্তারা একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের মরদেহ উদ্ধার করেন, যিনি গাড়ির ধাক্কায় ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন। পুলিশ আরও জানায়, তারা আইসের ধাওয়ায় অংশ নেয়নি; তারা কেবল দুর্ঘটনার তদন্ত পরিচালনা করছে।
ঘটনাটি তদন্তাধীন রয়েছে বলে জানিয়েছে ভার্জিনিয়া স্টেট পুলিশ। প্রাথমিক অনুসন্ধানে ধারণা করা হচ্ছে, ব্যক্তি আইস এজেন্টদের ধাওয়া থেকে বাঁচতে গিয়ে গাড়ি থেকে নেমে মহাসড়ক পার হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু দ্রুতগামী গাড়ির ধাক্কায় প্রাণ হারান।
ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি (ডিএইচএস) জানিয়েছে, এটি একটি “লক্ষ্যভিত্তিক, গোয়েন্দা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে পরিচালিত অভিবাসন অভিযান” ছিল। তবে সংস্থাটি এই অভিযানের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেনি। তারা এ-ও জানায়, ঘটনাটির বিষয়ে তারা মন্তব্য করতে চায় না এবং হাইওয়ে বা ব্যস্ত সড়কে অভিযান পরিচালনা সংক্রান্ত নীতিমালা নিয়েও তারা কোনো মন্তব্য করেনি।
এটি আগস্টের পর দ্বিতীয় এমন ঘটনা যেখানে আইস এজেন্টদের ধাওয়ায় একজন ব্যক্তি প্রাণ হারালেন। এর আগে ক্যালিফোর্নিয়ায় এক ব্যক্তি হোম ডিপো নামের একটি দোকানের কাছে অভিবাসন অভিযানের সময় পালানোর চেষ্টায় ফ্রিওয়ে পার হতে গিয়ে গাড়ির ধাক্কায় মারা যান।
সে সময় ডিএইচএস-এর একজন মুখপাত্র জানিয়েছিলেন, ঐ ব্যক্তি কোনো ডিএইচএস কর্মকর্তার ধাওয়ায় ছিলেন না এবং সংস্থাটি তার আইনি অবস্থান সম্পর্কেও অবগত নয়। তবে এবারের ঘটনাটি আবারও অভিবাসন অভিযান পরিচালনার ধরন ও নিরাপত্তা নীতিমালা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
আইসের অভিযান চলাকালে এমন মর্মান্তিক মৃত্যুতে স্থানীয় জনগণ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দ্রুতগতির সড়ক ও জনবহুল এলাকায় অভিযান চালানো হলে এই ধরনের দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।
তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ কোনো চূড়ান্ত মন্তব্য থেকে বিরত থাকছে। তবে এই ঘটনাটি আবারও দেখিয়ে দিয়েছে, অভিবাসন অভিযান পরিচালনায় নিরাপত্তা নীতি আরও কড়াকড়ি করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।



