আন্তর্জাতিক কূটনীতির মঞ্চে নতুন করে দৃঢ় হলো যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের সম্পর্ক। টোকিওতে আয়োজিত এক বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জাপানকে তাঁদের দেশের ‘সবচেয়ে শক্তিশালী মিত্র’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। এদিন দুই দেশের মধ্যে দুর্লভ খনিজ সম্পদ সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়, যা ভবিষ্যতে উভয় দেশের অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে মালয়েশিয়া সফর শেষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট গত সোমবার জাপানের রাজধানী টোকিওতে পৌঁছান। মঙ্গলবার সকালে জাপানের নতুন প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচির সরকারি বাসভবনে তাঁদের প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের অল্প সময়ের মধ্যেই এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক আয়োজন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বলেন, “আমরা সবচেয়ে শক্তিশালী মিত্র। আপনার সঙ্গে দেখা করতে পেরে আমি অত্যন্ত সম্মানিত বোধ করছি। আমি বিশ্বাস করি, আপনি জাপানের ইতিহাসে অন্যতম সফল প্রধানমন্ত্রী হবেন।” তাঁর এই মন্তব্য দুই দেশের সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করার প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
অন্যদিকে, জাপানের প্রধানমন্ত্রী তাকাইচি দুই দেশের সম্পর্ককে ‘নতুন সোনালি অধ্যায়’-এ নিয়ে যাওয়ার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “আমি এমন এক যুগ দেখতে চাই যেখানে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র উভয়ই একসঙ্গে আরও শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ হবে।”
বৈঠকের পর জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যার উদ্দেশ্য হলো দুর্লভ খনিজ উপাদানের স্থিতিশীল সরবরাহ নিশ্চিত করা। বৈশ্বিক শিল্পখাতে এই খনিজগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা শিল্পে।
বৈঠকের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ইউএসএস জর্জ ওয়াশিংটন নামের বিমানবাহী জাহাজে এক ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে। জাহাজটি ইয়োকোসুকা শহরের মার্কিন নৌঘাঁটিতে নোঙর করা রয়েছে। পরে তিনি স্থানীয় ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে এক নৈশভোজে অংশ নেবেন, যেখানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন জাপানের শীর্ষ গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান।
এশিয়া সফরের পরবর্তী গন্তব্য হবে দক্ষিণ কোরিয়া, যেখানে তাঁর বৈঠক নির্ধারিত আছে চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে। এই বৈঠক বিশ্বের দুই বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের উত্তেজনা প্রশমিত করতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা।
বাণিজ্যযুদ্ধের সূচনা হয়েছিল চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত আমদানি শুল্ককে কেন্দ্র করে। দুই দেশের মধ্যে চলমান এই অর্থনৈতিক দ্বন্দ্ব বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলেছে। তাই এই বৈঠক কূটনৈতিক ভারসাম্য পুনঃপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, হোয়াইট হাউস জানিয়েছে যে জাপানের প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। জানা গেছে, ক্ষমতায় ফেরার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারবার বিশ্ব শান্তি ও সংঘাত নিরসনে নিজের ভূমিকা তুলে ধরেছেন এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
এই সফর শুধু রাজনৈতিক সম্পর্ককেই নয়, অর্থনৈতিক, নিরাপত্তা ও কূটনৈতিক সহযোগিতাকেও নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে দুই দেশের কর্মকর্তারা আশা প্রকাশ করেছেন।



