আসন্ন বাজেটের প্রেক্ষিতে এবার অর্থমন্ত্রী এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করেছেন, যা শুধু হিসাবের খাতা নয়, গোটা অর্থনীতিকে ভারসাম্যে রাখার প্রতিশ্রুতি দেয়। তাঁর মতে, সরকার কেবল ব্যয় কমানোর মাধ্যমে নয়, টেকসই উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্থিতি ফিরিয়ে আনবে।
অর্থমন্ত্রীর ভাষায়, “যখন বাজারে চাহিদা হ্রাস পায় এবং বিনিয়োগ স্থবির হয়, তখন সরকারের দায়িত্ব মানুষকে কর্মসংস্থানে রাখা, জীবনমান পুনর্গঠন করা এবং ভবিষ্যতের প্রবৃদ্ধির ভিত্তি স্থাপন করা।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন, রাজস্ব শৃঙ্খলা গুরুত্বপূর্ণ, তবে এর অর্থ এই নয় যে সরকার পিছিয়ে যাবে। বরং উৎপাদন ছাড়া সম্পদ বৃদ্ধির প্রবণতা রুখে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠাই এখন সময়ের দাবি। এজন্য আর্থিক বাজারে সীমিত হারে লেনদেন করের প্রস্তাব রাখা হচ্ছে, যাতে কয়েকজন নয়, বৃহত্তর জনগোষ্ঠী এর সুফল পায়।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমান প্রশাসন অতীতের ক্ষতি পূরণে বদ্ধপরিকর। সরকারের মূল লক্ষ্য হবে জাতিকে পুনর্গঠন করা—ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে নতুনভাবে সম্পৃক্ততা তৈরি করা, পুনরায় সদস্যপদ নয়। তাঁর মতে, সরকারি বিনিয়োগ কোনো ব্যয় নয়; বরং এটি ভবিষ্যতের শক্ত ভিত্তি। এর মাধ্যমে সমাজ হবে আরও স্বনির্ভর, কর্মসংস্থান বাড়বে এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে।
বাজেটে “জাতীয় পুনর্গঠন পরিকল্পনা” ঘোষণা করা হয়েছে, যার আওতায় দেশজুড়ে টেকসই জ্বালানি, পরিবেশবান্ধব পরিবহন ও আধুনিক শিল্পে প্রতি বছর মোট দেশজ উৎপাদনের (GDP) ১% বিনিয়োগের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই প্রকল্প দেশের পুনরুদ্ধারকে আরও গতিশীল করবে বলে আশা প্রকাশ করা হয়।
এছাড়া একটি নতুন আর্থিক ভারসাম্য নীতি প্রবর্তনের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে সরকারি সম্পদের মোট মূল্য (সম্পদ ও দায়ের পার্থক্য) অর্থনৈতিক চক্রে ইতিবাচকভাবে বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ, শিল্পে বিনিয়োগের প্রতিটি পাউন্ড দেশের অর্থনৈতিক শক্তি বাড়াবে, দুর্বল করবে না।
অর্থমন্ত্রী কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ও নীতিনির্ধারণী কমিটির প্রশংসা করে বলেন, “স্বাধীনতা মানে বিচ্ছিন্নতা নয়।” এই বক্তব্যের সঙ্গে তিনি ঘোষণা করেন নতুন “ব্যাংক সমন্বয় কাঠামো”, যা নিশ্চিত করবে যে ঋণ ব্যবস্থাপনা ও নীতিনির্ধারণ সবসময় জনস্বার্থে পরিচালিত হবে।
তিনি আরও জানান, অর্থনীতি যদি সম্ভাবনার নিচে পরিচালিত হয়, তবে মুদ্রানীতি শুধু মূল্য স্থিতি রক্ষায় নয়, বরং সরকারের সামগ্রিক অর্থনৈতিক লক্ষ্যের সঙ্গেও সমন্বিতভাবে কাজ করবে। এটি কোনো রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ নয়; বরং জনস্বার্থে সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ।
বাজেটে প্রযুক্তিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, তবে মন্ত্রী স্পষ্ট করে বলেন, “প্রযুক্তি কেবল উন্নয়ন ঘটাতে পারে, কিন্তু উদ্দেশ্য নির্ধারণ করে না।” তাই তিনি আঞ্চলিক পর্যায়ে একটি “চাকরি নিশ্চয়তা প্রকল্প” চালুর ঘোষণা দেন, যার মাধ্যমে স্থানীয় সবুজ উদ্যোগ ও পরিচর্যা প্রকল্পে জীবিকা নির্বাহযোগ্য মজুরিতে কর্মসংস্থান তৈরি হবে।
বিদেশনির্ভর প্রবৃদ্ধি নয়, দেশীয় উদ্যোগ ও উৎপাদনের উপর নির্ভর করে ভবিষ্যৎ গড়ার আহ্বান জানানো হয়। এজন্য একটি “পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট এজেন্সি” গঠনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যা দেশীয় শিল্প ও উদ্যোক্তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করবে।
বাজেটে অতিরিক্ত ঋণ নেওয়ার সমালোচনার জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমরা ইতিমধ্যে ব্যাংকগুলিকে কোটি কোটি পাউন্ড পরিশোধ করেছি সেই অর্থের জন্য, যা আমরা নিজেরাই তৈরি করেছি।” তিনি ঘোষণা দেন, এখন থেকে ব্যাংকগুলিতে ধাপভিত্তিক রিজার্ভ ব্যবস্থা চালু হবে, যা বছরে প্রায় ২০ বিলিয়ন পাউন্ড সাশ্রয় করবে। এর মাধ্যমে সরকারি সেবা উন্নয়ন ও মিতব্যয় নীতির অবসান ঘটবে।
এছাড়া একটি নতুন ব্যাংক কর চালুর কথাও বলা হয়েছে, যেখানে সবচেয়ে বেশি লাভবান প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেশের পুনর্গঠনে অবদান রাখতে হবে।
বাজেটে জানানো হয়, দৈনন্দিন ব্যয়ের জন্য কোনো অতিরিক্ত কর আরোপ করা হবে না—আয়কর, জাতীয় বীমা বা ভ্যাট বৃদ্ধিরও কোনো পরিকল্পনা নেই। প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, প্রতিশ্রুতি রক্ষাও করা হবে।
অবশেষে অর্থমন্ত্রী বলেন, “আমরা সেই ব্যর্থ নীতির অবসান ঘটাচ্ছি যা দেশের বিনিয়োগকে পিছিয়ে দিয়েছে। আমরা বিনিয়োগ করব সেখানে, যেখানে বাজার ব্যর্থ। আমরা ফিরিয়ে আনব পিছিয়ে পড়া অঞ্চলগুলোকে।”
এভাবেই নতুন বাজেট দেশকে নিয়ে যেতে চায় একটি ভারসাম্যপূর্ণ, উৎপাদনমুখী ও ন্যায্য অর্থনীতির পথে।



