দক্ষিণ চীন সাগরে মার্কিন নৌবাহিনীর দুটি আলাদা উড্ডয়নযান অল্প সময়ের ব্যবধানে বিধ্বস্ত হয়েছে। রোববার ওই অঞ্চলে পৃথক মিশনে অংশ নেওয়ার সময় এই দুর্ঘটনাগুলো ঘটে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌবহরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দুটি ঘটনার ক্রু সদস্যদের নিরাপদে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
মার্কিন নৌবাহিনী জানায়, প্রথম দুর্ঘটনাটি ঘটে স্থানীয় সময় দুপুর পৌনে তিনটার দিকে। ইউএসএস নিমিত্জ রণতরী থেকে উড্ডয়ন করা একটি এমএইচ–৬০আর “সিহক” হেলিকপ্টার নিয়মিত অভিযানের সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিধ্বস্ত হয়। তৎক্ষণাৎ উদ্ধার অভিযান শুরু করে অনুসন্ধান দল তিনজন ক্রুকে নিরাপদে উদ্ধার করে।
এর প্রায় আধা ঘণ্টা পর একই রণতরী থেকে উড্ডয়ন করা একটি এফ/এ–১৮এফ “সুপার হর্নেট” যুদ্ধবিমান নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনার সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এ সময়ও ক্রুরা দ্রুত বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন, এবং তাঁদেরও উদ্ধার করা হয় বলে নৌবাহিনীর বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
দক্ষিণ চীন সাগরের গুরুত্ব আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অত্যন্ত কৌশলগত। এই জলসীমার ওপর মালিকানা দাবি করছে চীনসহ দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার আরও কয়েকটি দেশ। তবে আন্তর্জাতিক আদালতের নির্দেশনা উপেক্ষা করে চীন প্রায় পুরো সাগর এলাকার মালিকানা দাবি করে আসছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র এই দাবিকে অগ্রাহ্য করে নিয়মিতভাবে ওই এলাকায় নিজেদের উপস্থিতি বজায় রাখছে, যা তাদের আঞ্চলিক মিত্রদের প্রতি সমর্থনের প্রতীক হিসেবেও দেখা হয়।
এই সাগরপথটি বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রুট, যেখানে প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ পণ্য পরিবহন হয়। ফলে এখানে সংঘটিত যে কোনো সামরিক বা কৌশলগত ঘটনা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তাৎপর্য বহন করে।
দুটি দুর্ঘটনার পেছনের কারণ উদঘাটনে তদন্ত শুরু করেছে মার্কিন নৌবাহিনী। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, যান্ত্রিক ত্রুটি বা প্রতিকূল আবহাওয়া এর জন্য দায়ী হতে পারে। তবে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো কারণ নিশ্চিত করা হয়নি।
এই ঘটনাগুলো এমন এক সময়ে ঘটল, যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এশিয়া সফরে রয়েছেন। সফরকালে তাঁর চীনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে, যেখানে বাণিজ্য ইস্যু এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা প্রধান আলোচ্য বিষয় হতে পারে। তাই দুর্ঘটনাগুলোর সময়কাল কূটনৈতিকভাবেও তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
দক্ষিণ চীন সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি নতুন কিছু নয়। গত কয়েক বছর ধরে দেশটি আঞ্চলিক নৌ চলাচলের স্বাধীনতা বজায় রাখার লক্ষ্যে এখানে নিয়মিত টহল দিচ্ছে। তবে চীন এই কার্যক্রমের বিরোধিতা করে আসছে এবং একে তাদের সার্বভৌমত্বের প্রতি হুমকি বলে দাবি করছে।
দুটি দুর্ঘটনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর অভ্যন্তরে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। একাধিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক মনে করছেন, ঘন ঘন মহড়া ও মিশনের কারণে যান্ত্রিক চাপ বৃদ্ধি এবং জলবায়ু পরিস্থিতির প্রভাব এর অন্যতম কারণ হতে পারে। তবে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয়নি।
ঘটনার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ওই অঞ্চলে কার্যক্রমে সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।



