২০২৫ সালের গ্লোবাল পিস ইনডেক্স অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ দেশের তালিকায় শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে উত্তর ইউরোপের দেশ আইসল্যান্ড। আগ্নেয়গিরি, উষ্ণ প্রস্রবণ এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত এই দেশটি টানা কয়েক বছর ধরেই শান্তিপূর্ণ দেশের তালিকায় প্রথম অবস্থানে রয়েছে।
বিশ্বের ১৬৩টি স্বাধীন রাষ্ট্র ও অঞ্চলের সামাজিক নিরাপত্তা, আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ সংঘাতের মাত্রা এবং সামরিকীকরণের উপর ভিত্তি করে এই সূচকটি তৈরি করা হয়। অর্থনীতি ও শান্তি বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এই তালিকা প্রকাশ করে।
শুধু শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবেই নয়, আইসল্যান্ড ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস রিপোর্ট-এও সুখী দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। উত্তর গোলার্ধের জনপ্রিয় ভ্রমণ গন্তব্যগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম।
শীর্ষ পাঁচে থাকা অন্যান্য দেশগুলো হলো – আয়ারল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রিয়া এবং সুইজারল্যান্ড। এই দেশগুলো সামাজিক স্থিতিশীলতা, ন্যায়বিচার, রাজনৈতিক স্বচ্ছতা এবং নিরাপদ নাগরিক জীবনের কারণে শান্তিপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
গ্লোবাল পিস ইনডেক্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “সংঘাত ও অনিশ্চয়তার সময়ে শান্তি প্রতিষ্ঠার মূল চাবিকাঠি হলো ‘পজিটিভ পিস’। এটি এমন মনোভাব, প্রতিষ্ঠান এবং কাঠামোর সমন্বয় যা সমাজে টেকসই শান্তি বজায় রাখে।” প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, এই ‘পজিটিভ পিস’ থাকা দেশগুলোতে সাধারণত জিডিপি প্রবৃদ্ধি বেশি, সুদের হার কম, সামাজিক কল্যাণ উন্নত এবং বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় বেশি সক্ষমতা দেখা যায়।
২০০৮ সালে সূচকটি চালু হওয়ার পর থেকে গড়পড়তা দেশগুলোর শান্তি সূচক ৫.৪% হ্রাস পেয়েছে। একই সঙ্গে সবচেয়ে শান্তিপূর্ণ এবং সবচেয়ে অশান্ত দেশগুলোর ব্যবধান বেড়েছে ১১.৭%।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে বিশ্বে ৫৯টি রাষ্ট্রভিত্তিক সংঘাত দেখা গেছে, যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সর্বোচ্চ সংখ্যা।
২০২৫ সালের প্রতিবেদনে প্রথমবারের মতো বিশ্বের সবচেয়ে অশান্ত দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে রাশিয়া, তার পরেই অবস্থান ইউক্রেনের।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তালিকার নিচের দিকে, ১২৮তম স্থানে। দেশটির উচ্চমাত্রার সামরিকীকরণ এর প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা উত্তর কোরিয়া, ইসরায়েল, ইউক্রেন এবং রাশিয়ার কাছাকাছি অবস্থানে নিয়ে গেছে।
পশ্চিম ও মধ্য ইউরোপে সবচেয়ে বেশি সামরিকীকৃত দেশ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে ফ্রান্স। অন্যদিকে, দক্ষিণ আমেরিকায় শান্তির উন্নতি দেখা গেছে—বিশেষ করে পেরু ও আর্জেন্টিনায়।
উত্তর ও মধ্য আমেরিকার মধ্যে কানাডা ও কোস্টারিকা শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে শীর্ষে রয়েছে। আর আফ্রিকার সাব-সাহারান অঞ্চলে মরিশাস, বতসোয়ানা এবং নামিবিয়া শান্তিপূর্ণ দেশের তালিকায় এগিয়ে রয়েছে, যেগুলো পর্যটন শিল্পের জন্যও বেশ পরিচিত।
শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সুখের সূচকে আইসল্যান্ডের অবস্থান কেবল পরিসংখ্যানগত সাফল্য নয়, বরং এটি একটি দৃষ্টান্ত — যেখানে সামাজিক নিরাপত্তা, নীতি এবং মানুষের জীবনের মান একসাথে ভারসাম্যপূর্ণভাবে এগিয়ে চলছে।



