Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeবিজনেসবাণিজ্যচুক্তির নতুন কাঠামোয় আশাবাদ, চাঙ্গা এশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজার

বাণিজ্যচুক্তির নতুন কাঠামোয় আশাবাদ, চাঙ্গা এশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজার

বিশ্ববাজারে ইতিবাচক সাড়া ফেলেছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে নতুন বাণিজ্যচুক্তির কাঠামো নিয়ে হওয়া সমঝোতা। এতে সম্ভাব্য শুল্কবৃদ্ধির আশঙ্কা কমে আসায় যুক্তরাষ্ট্র ও এশিয়ার প্রধান স্টক মার্কেটগুলো সপ্তাহের শুরুতে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখিয়েছে।

রবিবার সন্ধ্যায় যুক্তরাষ্ট্রের স্টক ফিউচার বাজারে দেখা যায়, ডাও ফিউচার বেড়েছে ০.৬৫ শতাংশ, এসঅ্যান্ডপি ৫০০ ফিউচার ০.৭৪ শতাংশ এবং নাসডাক ফিউচার ০.৯২ শতাংশ পর্যন্ত উন্নীত হয়েছে (স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা ২৯ মিনিট পর্যন্ত)।

শুক্রবার ডাও জোন্স সূচক ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ৪৭,০০০ পয়েন্টের ওপরে উঠে যায়। সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত ভোক্তা মূল্যসূচক (CPI) অনুযায়ী, মুদ্রাস্ফীতি প্রত্যাশার তুলনায় কিছুটা কম ছিল, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ফেডারেল রিজার্ভের আসন্ন বৈঠকে সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা বাড়িয়েছে।

এই ইতিবাচক ধারা মার্কিন শেয়ারবাজারে নতুন আশাবাদের সঞ্চার করেছে, বিশেষ করে এমন এক সময়ে যখন মাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা বাড়তে দেখা গিয়েছিল।

এশিয়ার দিকেও এই প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে। সোমবার ট্রেডিংয়ের প্রারম্ভিক সময়েই জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচক বেড়েছে ১.৯ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ার কসপি সূচক লাফিয়ে উঠেছে ২.৪ শতাংশ এবং হংকংয়ের হ্যাং সেন সূচক বেড়েছে ১.২৮ শতাংশ।

সপ্তাহের শেষদিকে দক্ষিণ কোরিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং চীনের রাষ্ট্রনেতার মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফরের কূটনৈতিক অধ্যায়টি শেষ করবে।

সম্প্রতি দুই দেশের সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হয় যখন চীন ঘোষণা দেয় যে তারা বিরল মাটির খনিজ পদার্থ (rare-earth minerals) রপ্তানিতে কড়াকড়ি আরোপ করবে। এসব খনিজ স্যাটেলাইট ও আধুনিক ইলেকট্রনিক পণ্যে অপরিহার্য উপাদান। এর জবাবে যুক্তরাষ্ট্র অতিরিক্ত ১০০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের হুমকি দেয়, যার প্রতিক্রিয়ায় চীনও পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেয়।

রবিবার যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, “দুই দেশের নেতারা যখন এই সপ্তাহে সাক্ষাৎ করবেন, তার আগেই একটি উল্লেখযোগ্য কাঠামোগত চুক্তিতে পৌঁছানো গেছে এবং শুল্ক বৃদ্ধি এড়ানো সম্ভব হবে।”

শনিবার প্রেসিডেন্টও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, তিনি আলোচনায় কিছু ছাড় দিতে প্রস্তুত এবং একটি “সম্পূর্ণ ও ইতিবাচক চুক্তি” হওয়ার “উচ্চ সম্ভাবনা” রয়েছে।

যদিও চুক্তির বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি, অর্থমন্ত্রী আরও জানান যে, যুক্তরাষ্ট্র বিরল খনিজ রপ্তানি নিয়ন্ত্রণে “আংশিক ছাড়” পেতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। চীন বর্তমানে বৈশ্বিক পরিশোধিত রেয়ার-আর্থ উৎপাদনের ৯০ শতাংশেরও বেশি নিয়ন্ত্রণ করে, যা বাণিজ্য আলোচনায় তাদের অন্যতম কৌশলগত সুবিধা।

এই শুল্কযুদ্ধ ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে বহুমাত্রিক প্রভাব ফেলেছে — মুদ্রাস্ফীতি থেকে শুরু করে কৃষক ও ব্যবসায়ীদের ক্ষতি পর্যন্ত। বিশেষ করে সয়াবিন চাষিরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

এই নতুন চুক্তির কাঠামোয় কৃষকদের জন্য বিশেষ সুবিধা রাখা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যাতে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষতিগ্রস্ত সয়াবিন উৎপাদকরা কিছুটা স্বস্তি পান। যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে চীন ছিল মার্কিন সয়াবিনের সবচেয়ে বড় ক্রেতা (মূল্য প্রায় ১২.৫ বিলিয়ন ডলার), কিন্তু মে মাসের পর থেকে তারা কোনো সয়াবিন আমদানি করেনি।

বাণিজ্যচুক্তি চূড়ান্ত হলে তা শুধু দুই দেশের সম্পর্ককেই স্বাভাবিক করবে না, বরং বৈশ্বিক বাজারেও স্থিতিশীলতা আনবে — এমনটাই আশা করছেন অর্থনীতিবিদরা।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments