শিক্ষাক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) ব্যবহার যেমন বাড়ছে, তেমনি এর প্রভাব নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগও। সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, বিপুলসংখ্যক শিক্ষক আশঙ্কা করছেন যে শিক্ষার্থীরা এখন অতিরিক্তভাবে জেনারেটিভ এআই টুলের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে, যা তাদের সমালোচনামূলক চিন্তাশক্তি ও মৌলিক কাজ করার সক্ষমতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
একটি শিক্ষা মূল্যায়ন সংস্থা প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা যেমন এআই ব্যবহারকে ইতিবাচকভাবে নিচ্ছে, তেমনি অনেক শিক্ষকই মনে করছেন এটি শিক্ষার্থীদের বাস্তব শেখার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
জরিপ অনুযায়ী, মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে প্রায় ৬৯ শতাংশ নিয়মিতভাবে তথ্য খুঁজতে এআই ব্যবহার করছে, এবং ৫৪ শতাংশ শিক্ষার্থী সরাসরি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে এই প্রযুক্তির সাহায্য নিচ্ছে।
একজন শিক্ষা গবেষক বলেন, “শিক্ষার্থীরা যেখানে মনে করছে এটি অসাধারণ সহায়ক, সেখানে শিক্ষকেরা ভাবছেন—এটি হয়তো তাদের প্রকৃত শেখার প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করছে।”
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রায় সব বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (১০০%) কোনো না কোনোভাবে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে এআই চিটিং বা নকলের কাজে ব্যবহার হতে পারে। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাত্র ৪২ শতাংশ মনে করে যে এআই ব্যবহারে এমন ঝুঁকি রয়েছে।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪৫ শতাংশ উদ্বেগ প্রকাশ করেছে যে এআই ব্যবহারে তাদের স্মৃতি বা শেখার দক্ষতা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তবে মাত্র ৫২ শতাংশ স্বীকার করেছে, তারা ভয় পাচ্ছে যেন অতিরিক্তভাবে এই প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল হয়ে না পড়ে।
অন্যদিকে শিক্ষকদের মধ্যে এই উদ্বেগ অনেক বেশি। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৮৯ শতাংশ প্রধান শিক্ষক মনে করেন, এআই ব্যবহারে শিক্ষার্থীরা মৌলিক কাজগুলোতেও প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়তে পারে। ৮৭ শতাংশের মতে, এটি শিক্ষার্থীদের সমালোচনামূলক চিন্তাশক্তি গঠনে বাধা দিচ্ছে। আর ৮২ শতাংশ আশঙ্কা করছেন, এর কারণে শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবিষয়ের গভীরে প্রবেশ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।
একই প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত এক বছরে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এআই ব্যবহারের হার দ্রুত বেড়েছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে যেখানে ৭৯ শতাংশ শিক্ষার্থী কোনো না কোনোভাবে এআই ব্যবহার করছিল, ২০২৫ সালের মে মাসে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৪ শতাংশে।
একজন শিক্ষা বিশেষজ্ঞ বলেন, “জেনারেটিভ এআই এখনো নতুন বিষয়। দীর্ঘমেয়াদে এটি শিক্ষার্থীদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশে কী প্রভাব ফেলবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তাই এই বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।”
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এআই শেখানোর পদ্ধতিতেও অনেক ঘাটতি রয়ে গেছে। স্কুলগুলো এখনো স্পষ্টভাবে জানে না কীভাবে শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তির ঝুঁকি ও সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে কার্যকরভাবে শেখানো যায়।
একজন সহকারী প্রধান শিক্ষক বলেন, “যদি আমরা শিক্ষার্থীদের এআই ব্যবহারের সঠিক দিকটা শেখাতে পারি, তবে তারা প্রযুক্তিকে নিজের চিন্তার বিকল্প হিসেবে নয়, বরং সহায়ক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে শিখবে।”
প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, ২০২৪ সালের জুন থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত বিভিন্ন সময় শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের ওপর একাধিক জরিপ চালানো হয়েছে। এতে অংশ নেয় প্রায় ৫৫০ জন এপি সমন্বয়কারী, ১,৬০০ জন শিক্ষক এবং ৫০০ জন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শিক্ষা ব্যবস্থায় এআই এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি। নয়তো আগামী প্রজন্ম হয়তো প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে নিজেদের স্বাধীন চিন্তা ও বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারে।



