এল ক্লাসিকো মানেই উত্তেজনা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা আর আবেগের মিশেল। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ম্যাচের আগে এক তরুণ তারকার মন্তব্যে রিয়াল মাদ্রিদের খেলোয়াড়দের মধ্যে তৈরি হয়েছিল ক্ষোভের সুর। ম্যাচের দিন মাঠে ও মাঠের বাইরে সেই ক্ষোভ যেন বিস্ফোরণ ঘটালো।
ম্যাচ শুরুর আগে ইয়ামাল নামের বার্সেলোনার তরুণ ফরোয়ার্ড বলেছিলেন, “রিয়াল মাদ্রিদ সব সময় চুরি করে জেতে।” তার এই মন্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন রিয়ালের অভিজ্ঞ রক্ষণভাগের খেলোয়াড় কারভাহাল। মাঠে নেমে রিয়াল যেন সেই কথার জবাবই দিতে চেয়েছিল।
পুরো সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে যখনই ইয়ামাল বল স্পর্শ করেছেন, তখনই সমর্থকদের কাছ থেকে এসেছে তীব্র দুয়োধ্বনি। যেন প্রতিটি মুহূর্তেই দর্শকরা মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন, তার মন্তব্য তারা ভোলেননি। তবে আসল নাটক জমে ম্যাচের শেষ বাঁশির পর।
রিয়াল জিতে নেয় ম্যাচটি ২-১ গোলে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে ঘটে বিতর্কিত এক ঘটনা। রেফারি বার্সেলোনার মিডফিল্ডার পেদ্রিকে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বের করে দেন। প্রথম কার্ডটি তিনি দেখেছিলেন ভিনিসিয়ুসকে ফাউল করার জন্য, আর দ্বিতীয়টি রিয়ালের মিডফিল্ডার চুয়ামেনিকে ট্যাকল করার কারণে।
এই সিদ্ধান্তের পর দুই দলের ডাগআউটে ছড়িয়ে পড়ে উত্তেজনা। ঠিক তখনই সামনে আসে ইয়ামাল ও ভিনিসিয়ুসের নাম। ম্যাচ শেষে কারভাহালকে দেখা যায় ইয়ামালের দিকে ইশারা করে কিছু বলতে। স্প্যানিশ গণমাধ্যম জানিয়েছে, তিনি নাকি বলেছিলেন, “অনেক কথা বলেছো, এখন দেখাও!” এতে উত্তেজনা আরও বাড়ে। ইয়ামাল এগিয়ে যেতে চাইলে তাকে থামিয়ে দেন রিয়ালের আরেক মিডফিল্ডার কামাভিঙ্গা।
এতেই শেষ নয়। দুই দলের খেলোয়াড়দের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। মাঠে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়, রেফারিদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। তবু ভিনিসিয়ুসকে দেখা যায় আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে ইয়ামালের দিকে কিছু বলতে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত সূত্রের দাবি, তিনি নাকি বলেছিলেন, “তুমি ব্যাকপাস ছাড়া কিছুই করনি!”
রেফারির আনুষ্ঠানিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ঘটনার পর মোট ছয়জন খেলোয়াড় হলুদ কার্ড ও একজন লাল কার্ড দেখেছেন। হলুদ কার্ড পাওয়া খেলোয়াড়দের মধ্যে রয়েছেন ভিনিসিয়ুস, ফেরান, বালদে, ফারমিন, রদ্রিগো ও মিলিতাও। আর লাল কার্ড পেয়েছেন রিয়ালের গোলরক্ষক লুনিন।
ম্যাচে রিয়ালের বিপক্ষে টানা পঞ্চম জয়ের লক্ষ্য ছিল বার্সেলোনার। কোচ ফ্লিকের ভরসা ছিলেন তরুণ উইঙ্গার ইয়ামাল, যিনি রাফিনিয়া ও লেভানডফস্কির অনুপস্থিতিতে দলের মূল আক্রমণভাগের দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু বাস্তবে তিনি প্রায় পুরো ম্যাচজুড়ে নিষ্প্রভ ছিলেন। রিয়ালের লেফট-ব্যাক কারেরাস তার বিপক্ষে ছিলেন দুর্দান্ত, যিনি ইয়ামালকে একরকম ছায়ার মতো অনুসরণ করেছেন। পুরো ম্যাচে ইয়ামালের দুটি শট ও দুটি সুযোগ তৈরি ছাড়া আর উল্লেখযোগ্য কিছুই ছিল না।
ম্যাচ শেষে বার্সেলোনার মিডফিল্ডার ডি ইয়ং বলেন, “ঠিক কী ঘটেছিল আমি তা স্পষ্টভাবে দেখিনি। তখন আমি বেঞ্চে ছিলাম, শুধু দেখেছি প্রচণ্ড ভিড়। রেফারির বাঁশি বাজানোর পর রিয়ালের খেলোয়াড়রা ইয়ামালের দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে, যা আমার কাছে বাড়াবাড়ি মনে হয়েছে।”
এল ক্লাসিকোর মাঠে প্রতিটি সংঘর্ষই নতুন বিতর্কের জন্ম দেয়। তবে এবারের ম্যাচে মাঠের ফলাফলের চেয়ে পরের ঘটনাগুলোই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।



