দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ানের শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে এক আলোচনাপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা। মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে অনুষ্ঠিত এই বৈঠককে দুই দেশের সম্পর্ক পুনর্গঠনের সম্ভাব্য সূচনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ব্রাজিল সরকারের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, বৈঠকটি ছিল “গঠনমূলক ও ইতিবাচক”। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক ব্রাজিলের রপ্তানি পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপের কারণে দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে যে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছিল, এই আলোচনাকে তা কাটিয়ে ওঠার একটি উদ্যোগ হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।
বৈঠক শেষে লুলা এক মন্তব্যে বলেন, “ট্রাম্পের সঙ্গে আমাদের আলোচনা ছিল দারুণ। এখন থেকে উভয় দেশের প্রতিনিধিরা শুল্ক ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করবে।”
তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আরও লিখেছেন, “ব্রাজিলের ওপর আরোপিত অতিরিক্ত শুল্ক ও কিছু কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আমরা সমাধান খুঁজতে একমত হয়েছি। উভয় পক্ষের প্রতিনিধি দল দ্রুত আলোচনা শুরু করবে।”
উল্লেখযোগ্য যে, ট্রাম্প পূর্বে ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট বলসোনারোর ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিলেন, যিনি লুলার প্রধান রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী। ট্রাম্প প্রশাসন গত জুলাই মাসে ব্রাজিলের বেশিরভাগ পণ্যের ওপর শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করে দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, “বলসোনারোকে অন্যায়ভাবে হয়রানি করা হয়েছে”— এই কারণেই শুল্ক বাড়ানো হয়েছে।
ব্রাজিলের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিষয়টি বেশ আলোচনায় আসে। ২০২২ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজয়ের পর সাবেক নেতা বলসোনারোর বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানচেষ্টার অভিযোগে দেশটির আদালত তাঁকে ২৭ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছে। তাঁর সমর্থকেরা রাজধানী ব্রাসিলিয়ার রাজনৈতিক এলাকায় যে দাঙ্গা সৃষ্টি করেছিলেন, তা যুক্তরাষ্ট্রে ২০২১ সালে ট্রাম্পের পরাজয়ের পর ক্যাপিটল হিলে সংঘটিত সহিংসতার স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়।
শুল্ক আরোপ ছাড়াও ট্রাম্প প্রশাসন ব্রাজিলের কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এর মধ্যে দেশটির সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি মোরেস অন্যতম, যিনি বলসোনারোর বিচারের তত্ত্বাবধানে ছিলেন।
বৈঠকের আগে ট্রাম্প জানান, তিনি আশা করছেন লুলার সঙ্গে কয়েকটি বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছানো সম্ভব হবে। বলসোনারোকে নিয়ে ব্যক্তিগত উদ্বেগ থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী হবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন। তাঁর ভাষায়, “আমি মনে করি আমরা উভয় দেশের স্বার্থে দারুণ কিছু চুক্তি করতে পারব।”
অন্যদিকে, ব্রাজিলের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত শুল্ককে “ভুল সিদ্ধান্ত” হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। লুলা জানিয়েছেন, গত ১৫ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ব্রাজিলের বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় ৪১ হাজার কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। তাই উভয় দেশের মধ্যে ন্যায্য বাণিজ্য ও পারস্পরিক সমঝোতা পুনরুদ্ধারের প্রয়োজনীয়তা এখন আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
কুয়ালালামপুরের এই বৈঠক দুই দেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কের নতুন অধ্যায় খুলে দিতে পারে বলে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের ধারণা। এখন দেখার বিষয়—এই আলোচনার ফলাফল কীভাবে ভবিষ্যতের বাণিজ্যনীতিতে প্রভাব ফেলে।



