এশিয়া সফরের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পৌঁছেছেন মালয়েশিয়ায়। এই সফরে তিনি দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় আঞ্চলিক জোট আসিয়ানের শীর্ষ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন বলে জানা গেছে।
তবে এই সফরের আরেকটি বড় উদ্দেশ্য হলো মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে আয়োজিত এক গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা। সেখানে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হবে, যা সাম্প্রতিক সীমান্ত বিরোধের অবসান ঘটাবে বলে আশা করা হচ্ছে। গত মে মাসে দুই দেশের সীমান্তে প্রাণঘাতী সংঘাতের পর এই চুক্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়।
রবিবার সকালে স্থানীয় সময় ট্রাম্পকে বহনকারী প্রেসিডেন্ট বিমান এয়ার ফোর্স ওয়ান কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখানে তাকে স্বাগত জানান মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অভ্যর্থনা শেষে ট্রাম্প শহরের কেন্দ্রস্থলে যান, যেখানে চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তুতি ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে ট্রাম্প নিজের সামাজিক মাধ্যম অ্যাকাউন্টে পোস্ট করে জানান, তিনি কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের মধ্যে একটি “বড় শান্তিচুক্তি”র সাক্ষী হতে যাচ্ছেন। তিনি আরও উল্লেখ করেন, চুক্তিটি এমনভাবে আয়োজন করা হয়েছে যাতে সকল পক্ষের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকতে পারেন, এবং তিনি পৌঁছানোর পরপরই তা স্বাক্ষরিত হবে।
প্রথমে দিনের পরবর্তী সময়ে চুক্তি স্বাক্ষরের পরিকল্পনা থাকলেও থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী অনুরোধ করেন সময়টি এগিয়ে আনার জন্য। কারণ, শনিবার থাইল্যান্ডের রাজা মহা ভাজিরালংকর্নের মা রানি সিরিকিত মৃত্যুবরণ করেছেন। এ পরিস্থিতিতে সম্মান প্রদর্শনের অংশ হিসেবে স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের সময়সূচি পরিবর্তনের অনুরোধ জানানো হয়।
ট্রাম্প জানিয়েছেন, কুয়ালালামপুরে পৌঁছেই তিনি থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এবং সে সময় থাইল্যান্ডের জনগণের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করবেন। তিনি থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীকে “অসাধারণ” বলে উল্লেখ করেছেন এবং দুই দেশের সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় করার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন।
এই সফরের মাধ্যমে ট্রাম্প পাঁচ দিনের এশিয়া সফর শুরু করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে মালয়েশিয়া, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া সফর। জানুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি তাঁর প্রথম এশিয়া সফর এবং এখন পর্যন্ত সবচেয়ে দীর্ঘ বিদেশ সফর হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে।
এই সফর শুধু রাজনৈতিক নয়, বরং কূটনৈতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক মজবুত করতে এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এই সফরকে বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
কুয়ালালামপুরে আজকের এই শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানকে তাই আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে। সীমান্ত সংঘাতে দীর্ঘদিন ধরে উত্তেজনায় থাকা থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়ার মধ্যে এই চুক্তি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় নতুন অধ্যায় সূচনা করতে পারে বলে অনেকের ধারণা।



