নিউইয়র্ক স্টেটের আসন্ন ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারী নির্বাচনে ব্রঙ্কসের ৮৭তম ডিস্ট্রিক্ট থেকে এসেম্বলিম্যান পদে বাংলাদেশি কমিউনিটি এক ঐতিহাসিক ঐক্যের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। দীর্ঘ প্রস্তুতি, পর্যালোচনা এবং আলোচনা শেষে কমিউনিটির একক প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন সিপিএ জাকির চৌধুরী।
২০ অক্টোবর সোমবার ব্রঙ্কসের একটি পার্টি হলে অনুষ্ঠিত হয় এক অনন্য নির্বাচনী বিতর্ক ও ইলেকট্রনিক ভোটাভুটি অনুষ্ঠান। এটি আয়োজন করে ব্রঙ্কস বাংলাদেশি কমিউনিটি–ইউনিফায়েড ক্যানডিডেট কমিটি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কমিউনিটির বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা এবং স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা।
আলোচনায় অংশ নেন ৮৭তম অ্যাসেম্বলি ডিস্ট্রিক্টের তিন সম্ভাব্য বাংলাদেশি-আমেরিকান প্রার্থী—সিপিএ জাকির চৌধুরী, জামাল হুসেইন ও ইমরান শাহ। তারা তিনজনই নিজেদের অভিজ্ঞতা, কমিউনিটির জন্য কাজের পরিকল্পনা এবং ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ভিশন তুলে ধরেন। দুই ঘণ্টাব্যাপী এই প্রাণবন্ত বিতর্কের পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন এক অভিজ্ঞ সাংবাদিক ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা। পাশাপাশি অনুষ্ঠানটি পরিচালনায় সহায়তা করেন কয়েকজন সংগঠক, যারা ফ্যাসিলিটেটর হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
বিতর্ক শেষে আয়োজক কমিটি ইলেকট্রনিক ভোটের আয়োজন করে। মোট ৫৫ জন ভোটার এই ভোটাভুটিতে অংশগ্রহণ করেন। প্রতিটি প্রার্থী তাদের পক্ষে ১০ জন করে ভোটার আমন্ত্রণ জানান, আর বাকি ২৫ জন ছিলেন আয়োজক কমিটির নিরপেক্ষ সদস্য। ভোট গণনার পর দেখা যায়, সিপিএ জাকির চৌধুরী সর্বাধিক ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন।
ফলাফল ঘোষণার পর অপর দুই প্রার্থী—ইমরান শাহ ও জামাল হুসেইন—অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণে ফলাফল মেনে নেন এবং বিজয়ী প্রার্থীকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান। তারা ঘোষণা দেন, আসন্ন নির্বাচনে তারা ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচিত প্রার্থীকে সমর্থন জানাবেন। এই দৃশ্যটি অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবার মাঝে এক অনুপ্রেরণাদায়ক বার্তা ছড়িয়ে দেয়, যা অভিবাসী সমাজে খুবই বিরল উদাহরণ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের উদ্যোগ কমিউনিটির ঐক্য ও গণতান্ত্রিক চর্চার একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত। এটি শুধু একটি প্রার্থী বাছাই অনুষ্ঠান নয়, বরং একটি উৎসবমুখর মিলনমেলায় রূপ নেয়। অনুষ্ঠানের প্রতিটি ধাপেই দেখা গেছে পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধা, সৌহার্দ্য ও অংশগ্রহণের মনোভাব।
আয়োজকরা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, এই বিতর্ক ও ভোটাভুটি ছিল সম্পূর্ণভাবে কমিউনিটির নিজস্ব উদ্যোগ। এটি নিউইয়র্ক বোর্ড অব ইলেকশনের কোনো আনুষ্ঠানিক আয়োজন নয়। বরং এটি ছিল কমিউনিটির মধ্যে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ জাগ্রত করার এক প্রতীকী প্রচেষ্টা।
এই ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগের পেছনে কাজ করেছেন অসংখ্য বাংলাদেশি-আমেরিকান সমাজকর্মী ও সংগঠক। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অনুষ্ঠানটি সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন হয়। আয়োজকদের মধ্যে ছিলেন কমিউনিটির একাধিক অভিজ্ঞ সংগঠক, উদ্যোক্তা ও সমাজসেবক, যাদের প্রচেষ্টা এই ঐতিহাসিক মুহূর্তকে সম্ভব করেছে।
উল্লেখ্য, ৮৭তম ডিস্ট্রিক্টের বর্তমান নির্বাচিত এসেম্বলিমেম্বার ২০১৯ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করছেন এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়েছিলেন। এবার তার বিপক্ষে মাঠে নামছেন বাংলাদেশি-আমেরিকান কমিউনিটির সর্বসম্মত সমর্থন পাওয়া প্রার্থী সিপিএ জাকির চৌধুরী। কমিউনিটির প্রত্যাশা, এই ঐক্য এবং সমর্থন ভবিষ্যতের রাজনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দেবে।



