Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeআপনার স্বাস্থ্যশিশুর হাড় দুর্বলতার রোগ ‘রিকেটস’: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ

শিশুর হাড় দুর্বলতার রোগ ‘রিকেটস’: কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ

রিকেটস হলো এমন একটি রোগ, যা মূলত বাড়ন্ত বয়সের শিশুদের হাড়ের গঠনকে প্রভাবিত করে। এই রোগে শিশুর হাড় দুর্বল ও নরম হয়ে যায়, ফলে হাড় বেঁকে যাওয়া, বিকৃতি, এমনকি সহজে ভেঙে যাওয়ার মতো জটিলতা দেখা দেয়। সময়মতো চিকিৎসা না পেলে শিশুর শারীরিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং ভবিষ্যতে হাঁটাচলায়ও সমস্যা দেখা দিতে পারে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, রিকেটস রোগের প্রধান কারণ হলো ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়ামের ঘাটতি। পাশাপাশি ফসফরাসের অভাব এবং পর্যাপ্ত সূর্যালোক না পাওয়া এ রোগের ঝুঁকি আরও বাড়ায়। অনেক ক্ষেত্রে খাবারে ভিটামিন ডি না থাকা বা শরীরে ভিটামিন ডি শোষণজনিত সমস্যার কারণেও শিশুরা আক্রান্ত হয়। লিভার ও কিডনির সমস্যা, কিংবা দীর্ঘদিন কিছু নির্দিষ্ট ওষুধ যেমন খিঁচুনির ওষুধ সেবনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও এই রোগের অন্যতম কারণ।

রিকেটসের লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে প্রকাশ পায়। প্রথম দিকে শিশুর মাথার খুলির হাড় নরম হয়ে যায় এবং মাথার গঠন চারকোনা বাক্সের মতো দেখা দেয়। দাঁত উঠতে দেরি হওয়া বা দাঁতের ক্ষয় এই রোগের আরেকটি সাধারণ লক্ষণ। বুকের হাড় সামনের দিকে বেড়ে যাওয়া, বুকের খাঁচায় পরিবর্তন, কবজি ও গোড়ালির হাড়ের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি, এবং পায়ের হাড় ধনুকের মতো বেঁকে যাওয়া রিকেটসের স্পষ্ট চিহ্ন। কারও কারও ক্ষেত্রে হাঁটুর কাছ থেকে দুই পা আলাদা দিকে বেঁকে যায়, আবার কখনও একই দিকে বাঁকা হয়ে যায়।

এ ছাড়া মাংসপেশি দুর্বল হয়ে যায়, শিশুর চলাফেরায় অসুবিধা হয়, এবং অনেক সময় টিটানি নামক পেশির টানজনিত জটিলতাও দেখা দেয়। রিকেটসে আক্রান্ত শিশুর শ্বাসনালি দুর্বল হয়ে পড়ে, যা থেকে ব্রংকাইটিস, নিউমোনিয়ার মতো সংক্রমণ হতে পারে। একই সঙ্গে আয়রনের ঘাটতির কারণে রক্তস্বল্পতা, স্বাভাবিক উচ্চতায় না পৌঁছানো, এমনকি অল্প আঘাতেই হাড় ভেঙে যাওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।

তবে এই রোগ প্রতিরোধ সম্ভব, যদি সময়মতো সঠিক পুষ্টি ও যত্ন দেওয়া হয়। শিশুকে ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খাওয়ানো অত্যন্ত জরুরি। দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় দুধ, ঢ্যাঁড়স, কুমড়াশাক, ও কাঁটাযুক্ত ছোট মাছ রাখা উচিত। প্রতিদিন অন্তত ৬০০ মিলিলিটার দুধ খেলে শিশুর দৈনিক ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ হয়।

ভিটামিন ডি পাওয়ার জন্য সূর্যের আলো সবচেয়ে ভালো উৎস। তাই শিশুকে নিয়মিত সকাল ১০টা থেকে বেলা ৩টার মধ্যে অন্তত ৩০ মিনিট রোদে রাখা প্রয়োজন। গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম একসাথে ব্যবহারে প্রায় ৭৫ শতাংশ শিশু রিকেটস থেকে সম্পূর্ণ সেরে ওঠে।

যদি বয়স ছয় বছরের বেশি হয় এবং পা বেঁকে যাওয়ার পরিমাণ ১৫ থেকে ৩০ ডিগ্রির মধ্যে থাকে, তবে ‘ব্রেস’ ব্যবহার করে চিকিৎসা করা যায়। কিন্তু গুরুতর ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার বা শল্যচিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।

রিকেটস প্রতিরোধে শুধু শিশুই নয়, প্রসূতি মায়ের যত্নও জরুরি। মাকে গর্ভাবস্থায় ভিটামিন ডি দেওয়া উচিত। একইভাবে, শিশুদের দুধ ও খাবারে ভিটামিন ডি যুক্ত করতে হবে। স্বল্প ওজনের বা অপরিণত শিশুর জন্মের পর দুই সপ্তাহ থেকে ভিটামিন ডি দেওয়া শুরু করাই শ্রেয়।

সঠিক খাদ্যাভ্যাস, পর্যাপ্ত সূর্যালোক ও সচেতনতা বজায় রাখলে রিকেটসের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব। শিশুর হাড়ের সুরক্ষাই তার ভবিষ্যতের ভিত্তি—তাই যত্নের শুরু হোক আজ থেকেই।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments