পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ পরিকল্পনায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে নিরাপত্তা। অনেকে দেশের নির্বাচন করার সময় সবচেয়ে আগে বিবেচনা করেন সেই দেশের নিরাপত্তা এবং নিরাপদ ভ্রমণের সম্ভাবনা। সাম্প্রতিক সময়ে এই বিষয়টি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, যেখানে গ্লোবাল পর্যটকরা সচেতনভাবে নিরাপদ দেশগুলোকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।
২০২৪ সালে পরিচালিত ‘স্টেট অফ ট্রাভেল’ সার্ভেতে দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারীদের ৮১% বলেছেন, ভ্রমণের সময়ে নিরাপত্তা ও সুরক্ষা তাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই গবেষণা থেকে বোঝা যায়, ভ্রমণকারীদের নিরাপত্তা এখন ভ্রমণ পরিকল্পনার মূল প্রাধান্য।
নিরাপদ ভ্রমণ নির্ধারণে সাহায্য করার জন্য বার্কশায়ার হাথওয়ে ট্রাভেল প্রোটেকশন (BHTP) তাদের ২০২৬ সালের “সেফেস্ট ডেস্টিনেশনস” রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। ২০১৬ সাল থেকে এই সংস্থা নিয়মিত বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ দেশ ও শহরের তালিকা প্রকাশ করছে। তালিকা তৈরিতে তারা ব্যবহার করেছে গ্লোবাল পিস ইনডেক্স, নাম্বেও এবং জিওসিওর গ্লোবাল স্কোরের তথ্য। পাশাপাশি ১,৮৩৮ জন আমেরিকান পর্যটকের অভিজ্ঞতাও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যারা গত পাঁচ বছরে তালিকাভুক্ত দেশগুলোতে ভ্রমণ করেছেন।
বার্কশায়ার হাথওয়ে ট্রাভেল প্রোটেকশনের মার্কেটিং প্রধান বলেন, “আজকের ভ্রমণকারীরা তাদের নিরাপত্তাকে সবসময় প্রথমে বিবেচনা করছেন। ২০২৬ সালের রিপোর্টটি শুধুমাত্র নিরাপদ দেশগুলোর তথ্য দেয় না, বরং ভ্রমণকারীদের সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য একটি বিশ্বস্ত রিসোর্স হিসেবে কাজ করে।”
এই বছরের শীর্ষ তালিকায় কিছু নতুন দেশ উঠে এসেছে, যেমন অস্ট্রিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। ২০২৫ সালে বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ দেশ হিসেবে শীর্ষে থাকা আইসল্যান্ড এইবার পিছিয়ে গেছে। তার স্থানে এসেছে নেদারল্যান্ডস, যা গত বছরের ১৪তম স্থানে ছিল। নেদারল্যান্ডসের নিরাপত্তা বিশেষ করে রঙের মানুষ, নারী ও LGBTQ+ পর্যটকদের জন্য বিশেষভাবে মানসম্মত হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
তবে, BHTP সতর্ক করেছেন যে, একটি দেশের নিরাপত্তা সময়ের সাথে পরিবর্তিত হতে পারে। তালিকায় থাকা দেশগুলো এখন নিরাপদ হলেও ভবিষ্যতে বড় কোনো ঘটনা পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে পারে। তাই পর্যটকদের সবসময় সচেতন ও নিরাপদভাবে ভ্রমণ করতে হবে।
২০২৬ সালের বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ দেশগুলো হলো:
নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়া, অস্ট্রিয়া, আইসল্যান্ড, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সুইজারল্যান্ড, জাপান, আয়ারল্যান্ড, বেলজিয়াম, পর্তুগাল, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, ডেনমার্ক।
শহরের দিক থেকে নিরাপত্তা অনুযায়ী শীর্ষে রয়েছে:
রেইকজাভিক, কোপেনহেগেন, জুরিখ, আমস্টারডাম, হোনোলুলু, সিডনি, বার্সেলোনা, লিসবন, টোকিও, ডাবলিন, ভেনিস, সিওল, লন্ডন, সিঙ্গাপুর, সান ফ্রান্সিসকো।
ভ্রমণকারীদের জন্য মূল বার্তা হলো, নিরাপদ দেশ ও শহর বেছে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ হলেও, সচেতন থাকা সর্বদা প্রয়োজন। আন্তর্জাতিক সূচি অনুযায়ী নির্ধারিত নিরাপত্তা শুধুমাত্র একটি সময়ের ছবি তুলে ধরে। তাই, নিজস্ব সতর্কতা ও পরিকল্পনা ছাড়া কোনও দেশেই নিরাপদভাবে ভ্রমণ করা সম্ভব নয়।
এই প্রতিবেদন ও তালিকা নিশ্চিতভাবে ভ্রমণপ্রেমীদের সঠিক তথ্য প্রদান করছে, যা তাদের ভ্রমণের সিদ্ধান্তকে আরও সহজ ও নিরাপদ করে তুলবে।



