Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeআপনার স্বাস্থ্যপ্রতিদিন কতটা ফল খাওয়া উচিত? জানুন শরীরের ভারসাম্য রক্ষার সঠিক পরিমাণ

প্রতিদিন কতটা ফল খাওয়া উচিত? জানুন শরীরের ভারসাম্য রক্ষার সঠিক পরিমাণ

ঋতুর পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে শীতের হালকা ছোঁয়া এসে গেছে। এই সময়ে ভাইরাসজনিত নানা সমস্যা যেমন বেড়ে যায়, তেমনি দেখা দেয় ত্বক ও চুলের শুষ্কতা, রুক্ষভাব, আর শরীরের ক্লান্তি। এসব সমস্যা দূর করার জন্য শরীরকে আর্দ্র রাখা ও রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো জরুরি। আর এর সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর উপায় হলো প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় মৌসুমি ফল যুক্ত করা।

পুষ্টিবিদদের পরামর্শ অনুযায়ী, শরীরের দৈনন্দিন ভিটামিন ও খনিজ চাহিদা পূরণে প্রতিদিন প্রায় ৪০০ গ্রাম শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়া প্রয়োজন। এর মধ্যে অন্তত দুটি ফল থাকা উচিত—একটি সাইট্রাস ফল (যেমন লেবু, কমলালেবু), অন্যটি ভিটামিন এ–সমৃদ্ধ ফল (যেমন পেঁপে বা আম)।

ফল শুধু পেট ভরানোর খাবার নয়, বরং এগুলো শরীরের জন্য প্রাকৃতিক পুষ্টিগুণে ভরপুর। টকজাতীয় ফলে পাওয়া যায় ভিটামিন সি, ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, আয়রন ও ম্যাগনেশিয়ামের মতো উপাদান, যা শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। অ্যান্টি–অক্সিডেন্টসমৃদ্ধ এসব ফল সর্দি-কাশি, সংক্রমণ, এমনকি ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়।

ত্বকের উজ্জ্বলতা ধরে রাখা, চুলের কোষ শক্ত রাখা এবং শরীরের কোলাজেন উৎপাদনে ফল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ফলের ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস হাড় ও দাঁত মজবুত করে, আর পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে ও হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি কমায়। পানিশূন্যতা প্রতিরোধ থেকে শুরু করে হিমোগ্লোবিন উৎপাদন—সব ক্ষেত্রেই ফল কার্যকর। এমনকি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও কিছু ফল দারুণ সহায়ক।

এবার দেখা যাক কয়েকটি জনপ্রিয় ফলের পুষ্টিগুণ—

আমড়া:
১০০ গ্রাম আমড়ায় আছে প্রায় ২৭০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিনয়েড, ৯২ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ১ গ্রাম ফাইবার ও ৫৫ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম।

আমলকী:
১০০ গ্রাম আমলকীতে ৪৩৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ৭৩৪ মিলিগ্রাম জিংক, ১৭৪ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম থাকে। প্রতিদিন একটি আমলকীই ভিটামিন সি–এর দৈনিক চাহিদা পূরণে যথেষ্ট।

জাম্বুরা:
১০০ গ্রাম জাম্বুরায় আছে প্রায় ১২০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিনয়েড, ১০৫ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি এবং ৩৭ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম।

জলপাই:
১০০ গ্রামে পাওয়া যায় ১৯০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিনয়েড, ৩৯ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি ও ২২ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম। জলপাইয়ে ১.৬ গ্রাম ফাইবার থাকায় এটি হজমে সহায়ক।

পেয়ারা:
পেয়ারা হলো ভিটামিন সি–এর এক অসাধারণ উৎস। ১০০ গ্রামে ২১০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ৯১ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম, ৫.২ গ্রাম ফাইবার ও সামান্য ক্যালসিয়াম থাকে। এর পেকটিন হজমে সাহায্য করে এবং রক্তে শর্করা ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখে।

লেবু:
১০০ গ্রাম লেবুতে থাকে প্রায় ৪৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি। ভিটামিন সি আয়রন শোষণে সহায়ক, তাই আয়রনসমৃদ্ধ খাবারের সঙ্গে লেবু খেলে উপকার পাওয়া যায়।

পাকা কতবেল:
১০০ গ্রামে প্রায় ৬১ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিনয়েড, ৫৯ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও ১৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে।

পাকা পেঁপে:
পাকা পেঁপেতে থাকে প্রায় ২৩৩০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিনয়েড, ২৯৩৩ মিলিগ্রাম জিংক ও ১৩৩ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম। এটি ভিটামিন এ–এর দারুণ উৎস এবং ত্বক ও দৃষ্টিশক্তির জন্য উপকারী।

আনারস:
১০০ গ্রামে ৯.৩ গ্রাম শর্করা, ৯০ মাইক্রোগ্রাম ক্যারোটিনয়েড, ২৬ গ্রাম ভিটামিন সি থাকে। আনারসে থাকা ব্রোমেলিন এনজাইম হজমে সাহায্য করে। তবে যাদের কিডনি বা ইলেকট্রোলাইট সমস্যা আছে, তাদের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শে খাওয়া উচিত।

সব মিলিয়ে বলা যায়, প্রতিদিন অন্তত দুটি মৌসুমি ফল খাওয়া উচিত—একটি টকজাতীয়, আরেকটি ভিটামিন এ–সমৃদ্ধ। এতে শরীরের পুষ্টির ভারসাম্য রক্ষা হয়, ত্বক ও চুলের সৌন্দর্য বাড়ে, আর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে দৃঢ়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments