ইলিনয়স অঙ্গরাজ্য এখন কড়া অবস্থান নিয়েছে এমন ফেডারেল কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে, যারা অবৈধ অভিবাসন তদারকির সময় নিজেদের গাড়ির পরিচয় লুকাতে লাইসেন্স প্লেট পরিবর্তন বা আড়াল করে রাখছেন। রাজ্যের সেক্রেটারি অফ স্টেট সম্প্রতি “প্লেট ওয়াচ” নামের একটি হটলাইন চালু করেছেন, যার মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে উৎসাহিত করা হচ্ছে যেন তারা এমন গাড়িগুলোর খবর দেন যেগুলো বৈধ লাইসেন্স প্লেট ছাড়া রাস্তায় চলছে অথবা প্লেট আংশিকভাবে ঢাকা বা অনুপস্থিত।
এই উদ্যোগের ঘোষণার সময় তিনি এক ভিডিওর কথা উল্লেখ করেন যেখানে দেখা যায়, এক অভিবাসন কর্মকর্তা প্রতিবাদকারীর ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে বলেন—“ছবি তুলুন যত খুশি, আমরা তো প্রতিদিন প্লেট বদলাই।” এই ঘটনাই ইলিনয়স কর্তৃপক্ষকে আরও সতর্ক করেছে।
সেক্রেটারি অফ স্টেট অফিস জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে একাধিক বেনামি কল এসেছে, যেখানে অভিযোগ করা হয়েছে বিভিন্ন ধরনের অনিয়মের—গাড়ির সামনের ও পেছনের প্লেট আলাদা, কখনো সামনের বা পেছনের কোনো প্লেটই নেই, আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্লেটের নম্বর টেপ দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। এমনকি একই গাড়িতে প্রতিদিন ভিন্ন প্লেট ব্যবহারের ঘটনাও পাওয়া গেছে। আইন অনুযায়ী, এসব আচরণ ইলিনয়স রাজ্যে সম্পূর্ণ অবৈধ।
এই অভিযোগগুলো নতুন এক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। একদিকে সাধারণ মানুষ অভিযোগ করছেন—অভিবাসন কর্মকর্তারা মুখোশ পরে বা গাড়ির নম্বর আড়াল করে দায় এড়াতে চান, অন্যদিকে ফেডারেল সংস্থাগুলো দাবি করছে, এটি তাদের কর্মকর্তাদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা।
সেক্রেটারি অফ স্টেট বলেন, “লাইসেন্স প্লেট পরিবর্তন বা বিকৃত করা আইনবিরোধী, ঝুঁকিপূর্ণ এবং এটি কোনোভাবেই সহ্য করা হবে না। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়—ফেডারেল কর্মকর্তারাও না। এটি জনগণের নিরাপত্তা ও সুশৃঙ্খল সড়ক ব্যবস্থার প্রশ্ন।”
অভিবাসন ও সীমান্ত সংক্রান্ত ফেডারেল সংস্থা এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে জানা গেছে, সেপ্টেম্বর থেকে শিকাগো অঞ্চলে তাদের বেশ কয়েকটি অভিযান বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, যেখানে প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে টিয়ার গ্যাস ও পেপার স্প্রে ব্যবহারের অভিযোগে আদালত সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। আদালতের সাম্প্রতিক রায় অনুযায়ী, এসব কর্মকর্তাদের অবশ্যই পরিচয়পত্র বা ব্যাজ পরিধান করতে হবে এবং বডি ক্যামেরা চালু রাখতে হবে, যদি না তারা কোনো আন্ডারকভার মিশনে থাকেন।
অভিবাসীদের সহায়তায় কাজ করা একাধিক স্বেচ্ছাসেবী নেটওয়ার্কও এই সময় সক্রিয় হয়েছে, যারা দ্রুত তথ্য দিয়ে এলাকাবাসীকে সতর্ক করে দিচ্ছে। ফেডারেল সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে—তাদের কর্মকর্তাদের ওপর হামলার সংখ্যা এক বছরে ১০ গুণ বেড়েছে, যদিও তারা এই পরিসংখ্যানের বিস্তারিত প্রকাশ করেনি।
শিকাগোর উপকণ্ঠে অনুষ্ঠিত এক বিক্ষোভে দেখা যায়, একটি আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার ট্রাক রাস্তায় পার্ক করা অবস্থায় ছিল, যার সামনে কোনো লাইসেন্স প্লেট ছিল না এবং পিছনের প্লেটের কিছু অংশ টেপ দিয়ে ঢাকা ছিল।
সেক্রেটারি অফ স্টেট বলেন, “ইলিনয়স রেজিস্টার্ড গাড়িতে প্লেট পরিবর্তন বা আড়াল করা অপরাধ। এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।” তিনি আরও জানান, এমন অপরাধের ফলে জরিমানা, জেল এবং গাড়ির নিবন্ধন স্থগিত বা বাতিলের শাস্তি হতে পারে।
রাজ্যের আইনে স্পষ্ট বলা আছে—ইলিনয়সে নিবন্ধিত সব গাড়িতে সামনের ও পেছনের উভয় প্লেট থাকতে হবে। যদিও অন্য অঙ্গরাজ্যে শুধু পেছনের প্লেট প্রয়োজন হয়, কিন্তু ইলিনয়সে গাড়ি চালাতে হলে নিজ রাজ্যের নিয়ম অনুযায়ী সঠিক প্লেট থাকতে হবে।
ফেডারেল সংস্থা এক বিবৃতিতে জানায়, তারা সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইলিনয়স জুড়ে ১,৫০০–এর বেশি অপরাধীকে আটক করেছে, যার মধ্যে যৌন অপরাধী, গ্যাং সদস্য ও সশস্ত্র ডাকাতও রয়েছে। তবে আদালত বারবার তাদের কর্মকাণ্ডের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। কিছু ক্ষেত্রে আটক ব্যক্তিদের পরবর্তীতে বিনা অভিযোগে মুক্তিও দেওয়া হয়েছে।
সবশেষে, রাজ্যের সেক্রেটারি অফ স্টেট পরিষ্কারভাবে জানিয়েছেন—ইলিনয়সে আইন সবার জন্য সমান, কেউই এর বাইরে নয়। জননিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য।



