বর্তমান সময়ে বিভক্ত মিডিয়া প্রভাব ও রাজনৈতিক মেরুকরণের যুগে জনসাধারণের স্কুলগুলোকে তাদের কাজের মূল্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরার পদ্ধতিতে নতুনভাবে চিন্তা করতে হবে। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি নির্দেশিকা বলছে, স্কুলগুলোর উচিত হবে তাদের সাফল্য ও মূল্য তুলে ধরার সময় রাজনৈতিক বিতর্কে না গিয়ে, সমাজ, পরিবার ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সম্পর্কের দিকটি জোর দিয়ে তুলে ধরা।
নির্দেশিকাটিতে বলা হয়েছে, সফলতার মূল চাবিকাঠি হলো পরিবার, স্কুল ও সম্প্রদায়ের মধ্যে দৃঢ় অংশীদারিত্ব গড়ে তোলা এবং বোঝানো যে শক্তিশালী সরকারি স্কুল একটি দেশের ভবিষ্যতের বিনিয়োগ। এই ধারণাই এখন শিক্ষাক্ষেত্রের নতুন অঙ্গীকার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
নির্দেশিকাটি তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম শিক্ষাবিষয়ক সংগঠন, যারা সম্প্রতি “Public Education Promise” নামের একটি উদ্যোগ শুরু করেছে। এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য হলো শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শিক্ষার্থী-কেন্দ্রিক করা, এবং শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধান, বিশ্লেষণী দক্ষতা ও ডিজিটাল জ্ঞানের বিকাশ ঘটানো। এজন্য বিশেষজ্ঞ ও শিক্ষা প্রশাসকদের নিয়ে একাধিক কর্মদল গঠন করা হয়েছে, যারা ভবিষ্যতে বিভিন্ন জেলা ও অঞ্চলের জন্য প্রয়োজনীয় সহায়ক উপকরণ তৈরি করবে।
নির্দেশিকাটি তৈরির জন্য পাঁচ মাসব্যাপী এক সমীক্ষা পরিচালিত হয়, যেখানে অংশ নেয় শিক্ষক, অভিভাবক, প্রশাসক ও স্কুল বোর্ডের সদস্যরা। এতে তারা বোঝার চেষ্টা করেন কোন ধরনের ভাষা ও বার্তা ব্যবহার করলে স্কুলগুলোর কার্যক্রম সহজে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, আবার সেটি যেন রাজনৈতিক পক্ষপাত হিসেবে বিবেচিত না হয়। এই গবেষণায় সহায়তা করেছে দুটি যোগাযোগ ও জনসংযোগ প্রতিষ্ঠান, যারা বিভিন্ন শিক্ষাগত সংস্থা ও সরকারি উদ্যোগ নিয়ে কাজ করে।
নির্দেশিকায় আরও বলা হয়েছে, আজকের যুগে শিক্ষাক্ষেত্রে সফলতা শুধু পাঠ্যসূচি বা পরীক্ষার ফলাফলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং এটা নির্ভর করছে কীভাবে স্কুলগুলো তাদের সমাজের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলছে, পরিবারগুলোকে যুক্ত করছে, এবং শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক মানসিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ ঘটাচ্ছে তার ওপর।
এছাড়াও, বার্তা প্রচারের ক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত তাদের মূল লক্ষ্য ও মূল্যবোধকে সহজ, নিরপেক্ষ এবং ইতিবাচক ভাষায় প্রকাশ করা। এতে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ স্কুলের কার্যক্রম সম্পর্কে আস্থা ও সমর্থন অনুভব করবে।
নির্দেশিকাটি শেষ হয়েছে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়ে—“আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত সাধারণ মানুষকে একত্রিত করা, বিভাজন নয়।” অর্থাৎ, জনসাধারণের স্কুলগুলো যেন রাজনৈতিক বিতর্কে না জড়িয়ে শিক্ষার মূল লক্ষ্য—শিক্ষার্থীর বিকাশ ও সমাজের উন্নয়ন—এ মনোনিবেশ করে।
এই বার্তাই আজকের শিক্ষাব্যবস্থার সবচেয়ে বড় প্রয়োজন, যেখানে শিক্ষা শুধু জ্ঞান নয়, বরং ঐক্যের প্রতীক হয়ে উঠতে পারে।



