Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeকমিউনিটি সংবাদপ্রবাসে থেকেও আলোর দিশারি: এক শিক্ষানুরাগীর ব্যতিক্রমী অবদানকে ঘিরে নিউইয়র্কে সংবর্ধনা

প্রবাসে থেকেও আলোর দিশারি: এক শিক্ষানুরাগীর ব্যতিক্রমী অবদানকে ঘিরে নিউইয়র্কে সংবর্ধনা

নিউইয়র্কে প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির আয়োজনে এক ব্যতিক্রমী সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে সম্মানিত করা হয় এক বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবককে। প্রবাস জীবনের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে জন্মভূমির শিক্ষা ও সমাজ উন্নয়নে যিনি রেখেছেন অসাধারণ দৃষ্টান্ত, সেই অনন্য ব্যক্তিত্বকে সম্মান জানাতে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে প্রবাসীরা একত্রিত হন।

নিজ এলাকার মানুষের জন্য দীর্ঘদিন ধরে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়া এই শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি প্রবাসে থেকেও শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে গড়ে তুলেছেন আটটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও একটি হাসপাতাল। কুমিল্লা অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিষ্ঠিত এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এখন আলোকিত করছে নতুন প্রজন্মকে। শিক্ষার প্রতি গভীর অনুরাগ থেকেই প্রবাস জীবনের যাবতীয় সঞ্চয় উৎসর্গ করেছেন তিনি।

নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, প্রবাসে থেকেও দেশের জন্য এমন আত্মত্যাগ সত্যিই অনুকরণীয়। একজন মানুষ কীভাবে পরিশ্রম, সততা এবং দেশপ্রেমের মাধ্যমে সমাজে পরিবর্তন আনতে পারেন, এই শিক্ষানুরাগী তার জীবনের প্রতিটি অধ্যায়ে সেটির প্রমাণ রেখেছেন।

অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে বলা হয়, একটি মোমবাতি থেকে হাজার মোমবাতি জ্বালানো সম্ভব, কিন্তু তাতে তার আলোক কমে না। এই শিক্ষানুরাগীও তেমনই এক আলো, যিনি নিজে জ্বলে অন্যদের আলোকিত করেছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান এবং সমাজসেবায় তার অবদান প্রবাসী সমাজে অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।

বক্তারা আরও উল্লেখ করেন, তার প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলো শুধু শিক্ষার ক্ষেত্রেই নয়, সমাজ উন্নয়নেও ভূমিকা রাখছে। বর্তমানে তার প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রায় ছয় হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। তিনি নিজস্ব প্রায় পাঁচ একর জমি এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য দান করেছেন, যা তার দেশপ্রেম এবং মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিভিন্ন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ও কমিউনিটি লিডাররা বলেন, প্রবাস জীবনের প্রতিটি অর্জন যদি দেশের উন্নয়নে কাজে লাগানো যায়, তবে সেই প্রবাস আর দূরত্ব নয়—বরং সেতুবন্ধনের প্রতীক হয়ে ওঠে। এই শিক্ষানুরাগীর মতো ব্যক্তিরা প্রমাণ করেছেন, সীমান্ত পেরিয়েও হৃদয়ের টান মাতৃভূমির প্রতি অপরিসীম।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বক্তাদের বক্তব্যে উঠে আসে এক অনুপ্রেরণার গল্প—একজন সাধারণ প্রবাসী কীভাবে নিজের শ্রম ও সততা দিয়ে অগণিত শিক্ষার্থীর জীবনে পরিবর্তন এনেছেন। তার প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এবং একটি মহিলা কলেজসহ ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিশু বিদ্যালয়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিরা বলেন, প্রবাসে বসবাস করেও এই ধরনের উদ্যোগ সমাজে ঐক্য, শিক্ষা এবং মানবিকতার বিকাশে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এই আয়োজন শুধু একজন ব্যক্তিকে সম্মান জানানো নয়, বরং প্রবাসী সমাজের আত্ম-উন্নয়নের এক প্রতিশ্রুতি।

শেষে সংবর্ধিত অতিথি নিজ অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন, শৈশব থেকেই বাবার স্বপ্ন ছিল এলাকায় একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা। বাবার মৃত্যুর পর তিনি সেই অসমাপ্ত স্বপ্ন পূরণের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন। সীমিত সম্পদ আর অবিরাম শ্রমে গড়ে তোলেন একের পর এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান—যা আজ অসংখ্য তরুণ-তরুণীর জীবনে আলোকবর্তিকা হয়ে উঠেছে।

বক্তারা আশা প্রকাশ করেন, এই শিক্ষানুরাগীর আদর্শ অনুসরণ করে প্রবাসী সমাজ আরও বেশি করে শিক্ষা, সমাজসেবা ও মানবিক কাজে যুক্ত হবে। তার জীবনগাথা প্রমাণ করে, সত্যিকার ইচ্ছা আর নিবেদন থাকলে যে কেউই সমাজে পরিবর্তনের আলোকবর্তিকা হতে পারে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments