টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের দাম সাম্প্রতিক সময়ে আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। আজ বুধবার দেশের বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকে ডলারের বিক্রয়মূল্য সর্বোচ্চ ১২২ টাকা ৭৫ পয়সায় পৌঁছেছে, যা গত সপ্তাহের সর্বোচ্চ ১২২ টাকা ৩০ পয়সার তুলনায় কিছুটা উর্ধ্বগতি দেখাচ্ছে। ব্যাংকসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আমদানি এলসি খোলার সংখ্যা বেড়ে যাওয়াসহ কিছু অর্থনৈতিক কারণ ডলারের দাম বাড়ার পেছনে মূল ভূমিকা রেখেছে।
আজ স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে ডলারের বিক্রয়মূল্য নির্ধারিত হয়েছে ১২২ টাকা ৭৫ পয়সা এবং ক্রয়মূল্য ১২১ টাকা ৭৫ পয়সা। রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংক বিক্রি করেছে ১২২ টাকা ৬০ পয়সায়, আর ক্রয়মূল্য ছিল ১২১ টাকা ৬০ পয়সা। ঢাকা ব্যাংক এক ডলার বিক্রি করেছে ১২২ টাকা ৫০ পয়সায় এবং ক্রয় করেছে ১২১ টাকা ১৫ পয়সায়। গত সপ্তাহের তুলনায় এ হার কিছুটা বেড়েছে।
ডলারের এই উর্ধ্বমুখী প্রবণতা আন্তঃব্যাংক বিনিময় হারে সরাসরি প্রভাব ফেলেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আজ আন্তঃব্যাংক বাজারে ডলারের সর্বোচ্চ বিনিময়মূল্য ছিল ১২২ টাকা ২৫ পয়সা, যা গতকাল ছিল ১২২ টাকা। অক্টোবর মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত ডলারের আন্তঃব্যাংক বিনিময় হার প্রায় ১২১ টাকা ৮০ পয়সার কাছাকাছি ছিল।
সেপ্টেম্বর মাসে দেশের আমদানি এলসি খোলার পরিমাণ ছিল ৬.৩ বিলিয়ন ডলার, যা আগস্ট মাসের ৫.৩৮ বিলিয়ন ডলারের তুলনায় উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি। এর ফলে ডলারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বাজারে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকও সম্প্রতি ছয়টি ব্যাংক থেকে প্রতি ডলার ১২১.৮০ টাকায় ৩৮ মিলিয়ন ডলার ক্রয় করেছে। চলতি অর্থবছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন ব্যাংক থেকে মোট ২.১২ বিলিয়ন ডলার কিনেছে। এর ফলে ব্যাংকগুলি পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারছে।
একজন ব্যাংক ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, আমদানি ব্যয়ের চাপের কারণে ডলারের দাম সামান্য বেড়েছে, তবে এটি বাজারের জন্য অস্বাভাবিক ঘটনা নয়। ডলার সরবরাহ বর্তমানে পর্যাপ্ত এবং দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়ার আশঙ্কা নেই।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ডলারের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ব্যাংকগুলোর সমন্বিত প্রচেষ্টা জরুরি। বর্তমান পরিস্থিতিতে ডলারের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা মূলত বিদেশি পণ্য ও কাঁচামাল আমদানি বেড়ে যাওয়ার কারণে। অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আমদানির চাপ কমলে ডলারের দাম স্থিতিশীল হয়ে আসবে।
উপরন্তু, দেশের অর্থনীতিতে ডলারের চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা কার্যকর ভূমিকা রাখছে। চলতি অর্থবছরের বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ডলার ক্রয়-বিক্রয় ও বাজার পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে ডলারের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখা হচ্ছে।
এভাবে, সাম্প্রতিক সময়ে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার পেছনে মূল কারণ হিসেবে আমদানি এলসি বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক চাপ চিহ্নিত হয়েছে। তবে বাজার পর্যবেক্ষণ ও পর্যাপ্ত সরবরাহের কারণে এ বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণযোগ্য বলে মনে করা হচ্ছে।



