ফুটবলের ইতিহাসে পেলের নাম এক আলাদা অধ্যায়। তিনবারের বিশ্বকাপজয়ী এই ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি জন্মেছিলেন ১৯৪০ সালের ২৩ অক্টোবর, মিনাস গেরাইসে। তাঁর খেলার ধারা এবং দক্ষতা এমনকি আজকের লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর খেলায়ও প্রতিফলিত হচ্ছে। পেলের পাস এবং বলের নিয়ন্ত্রণ, বিশেষ করে বাঁ–ডান পায়ের নিখুঁত সমন্বয়, সেই সময়কার প্রতিটি ম্যাচকে জীবন্ত করে তুলেছিল।
১৯৭০ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালের শেষ গোলটি এখনও ফুটবলপ্রেমীদের মনে জীবন্ত। মাঠের বাঁ প্রান্ত থেকে পেলের সরল কিন্তু নিখুঁত পাস কার্লোস আলবার্তোকে গোলের সুযোগ এনে দেয়, যা ফিফার ইতিহাসে ‘জোগো বনিতো’–এর চূড়ান্ত রূপ হিসেবে স্বীকৃত। এই গোলটি শুধু ফলাফলের জন্য নয়, পুরো আক্রমণ কাঠামোকে একসূত্রে গাঁথে।
পেলের খেলার এক অনন্য দিক ছিল ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা। উদাহরণস্বরূপ, উরুগুয়ের বিপক্ষে ম্যাচে তিনি গোলকিপারের মুখোমুখি হয়ে এমন এক মুভ নেন যা কোনো সাধারণ ফরোয়ার্ডের পক্ষে সম্ভব নয়। যদিও গোল হয়নি, তবে সেই মিস ফুটবলের নান্দনিকতা এবং পেলের ব্যাখ্যাতীত প্রতিভার পরিচায়ক।
সমকালীন বিশেষজ্ঞদের মতে, পেলের দক্ষতা শুধু গোলেই সীমাবদ্ধ ছিল না। দূরপাল্লার শট, ডজ, নাটমেগ, হেডিং এবং ইনসাইড–আউটসাইড ড্রিবলিং—এ সব কৌশল মেসি, রোনালদো, নেইমার এবং আর্লিং হলান্ডের মতো নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড়দের দ্বারা পুনরাবৃত্তি করা হয়েছে। পেলের সেই সমস্ত মুভ আজকের ফুটবল প্রতিভাদের খেলার শৈলীর সঙ্গে মিলিয়ে দেখলে বোঝা যায়, তিনি আসলেই আধুনিক ফুটবলের পথপ্রদর্শক।
পেলের খেলার প্রতিটি মুহূর্তে ছিল গভীর কৌশল এবং সূক্ষ্ম সমন্বয়। ফ্রান্স, ইতালি, উরুগুয়ে বা অন্যান্য দলের বিরুদ্ধে তার দূরপাল্লার শট, সাপের মতো ড্রিবলিং এবং প্রতিপক্ষকে ভ্রান্ত করার মুভগুলো এমনভাবে সম্পন্ন হত যে দর্শকরা মুগ্ধ হতো। তার খেলায় এক ধরনের জাদু ছিল, যা আজও ফুটবলের নতুন প্রজন্মের জন্য শিক্ষণীয়।
পেলের প্রতিভা শুধু গোল বা অ্যাসিস্টে সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি বল নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পুরো ম্যাচকে পরিচালনা করতে পারতেন। মেসি ও রোনালদোর খেলার ধরন, যেমন ইনসাইড–আউটসাইড ড্রিবলিং, হেডিং দক্ষতা, দুরপাল্লার শট—all এসব কৌশল পেলে ইতিমধ্যেই দেখিয়ে গেছেন। সেই কারণে বলা যায়, পেলের খেলার ছোঁয়া আজকের ফুটবলের প্রতিটি কোণে বিরাজমান।
আজকের দিনে পেলের জন্মবার্ষিকীতে তার এই অবদান স্মরণ করা এক অনন্য সুযোগ। তার খেলা শুধু ফলাফল বা গোল নয়, ফুটবলের সৌন্দর্য, সূক্ষ্ম কৌশল এবং খেলোয়াড়ের ব্যক্তিগত দক্ষতার এক চিরন্তন উদাহরণ। পেলের প্রতিভা ফুটবলের ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে এবং নতুন প্রজন্মের খেলোয়াড়দের জন্য অনুপ্রেরণার এক অবিস্মরণীয় উৎস।



