Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeবিশেষ প্রতিবেদনপ্রশান্ত মহাসাগরে সন্দেহভাজন মাদকবাহী নৌযানে মার্কিন বাহিনীর হামলা, নিহত দুই

প্রশান্ত মহাসাগরে সন্দেহভাজন মাদকবাহী নৌযানে মার্কিন বাহিনীর হামলা, নিহত দুই

পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর এক হামলায় দুজন সন্দেহভাজন মাদক পাচারকারী নিহত হয়েছে। বুধবার দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী এক বিবৃতিতে এই তথ্য নিশ্চিত করেন। এই ঘটনাটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রশাসনের মাদকবিরোধী অভিযানে সামরিক শক্তির সরাসরি ব্যবহারের নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করল।

প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ট্রাম্প প্রশাসনের মাদকবিরোধী অভিযানে এটি প্রথম সামরিক হামলা। তবে এর আগে ক্যারিবীয় সাগর উপকূলে অন্তত সাতটি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব অভিযানের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভেনেজুয়েলা ও কলম্বিয়ার কূটনৈতিক সম্পর্কও আরও উত্তেজনাপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’-এ এক পোস্টে জানান, তাদের গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী হামলার শিকার নৌযানটি অবৈধ মাদক পাচারে জড়িত ছিল। তিনি দাবি করেন, নৌযানটি পরিচিত মাদক চোরাচালানের রুটে চলাচল করছিল এবং বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য বহন করছিল। তবে তার এই বক্তব্যের সমর্থনে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়নি।

একই পোস্টে তিনি প্রায় ৩০ সেকেন্ডের একটি ভিডিও প্রকাশ করেন, যেখানে একটি ছোট নৌযানকে সাগরে ছুটে যেতে দেখা যায় এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই সেটিতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে।

ক্যারিবীয় অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত অন্তত ৩২ জন সন্দেহভাজন পাচারকারী নিহত হয়েছেন। তবে এসব অভিযানের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেনি যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন। হামলার সময় নৌযানগুলোতে ঠিক কত পরিমাণ মাদক ছিল বা তাদের বিরুদ্ধে কী ধরনের গোয়েন্দা তথ্য ছিল, তা নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।

এ প্রসঙ্গে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ড—যারা মূলত সমুদ্রপথে আইন প্রয়োগের দায়িত্বে—তাদের পরিবর্তে কেন সামরিক বাহিনীকে এসব প্রাণঘাতী অভিযানে যুক্ত করা হচ্ছে? আরও প্রশ্ন উঠেছে, মাদকবাহী জাহাজ থামানোর অন্য কোনো উদ্যোগ নেওয়ার আগেই কেন প্রাণঘাতী হামলার পথ বেছে নেওয়া হচ্ছে।

সাম্প্রতিক এই হামলার খবর প্রথম প্রকাশ করে একটি মার্কিন গণমাধ্যম। ঘটনাটি এমন সময়ে ঘটল, যখন যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবীয় অঞ্চলে তাদের সামরিক উপস্থিতি আরও জোরদার করছে। বর্তমানে ওই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেপণাস্ত্রবাহী ধ্বংসকারী জাহাজ, এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান, একটি পারমাণবিক সাবমেরিন এবং প্রায় সাড়ে ছয় হাজার সেনা মোতায়েন রয়েছে।

এদিকে গত আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের কোস্টগার্ড ‘অপারেশন ভাইপার’ নামে এক অভিযান শুরু করে, যার লক্ষ্য ছিল প্রশান্ত মহাসাগরে মাদক আটকানো। কোস্টগার্ড জানায়, ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত তারা ১ লাখ পাউন্ডেরও বেশি কোকেন জব্দ করেছে।

তবে সর্বশেষ এই ঘটনায় নৌযানটি আটকানোর বদলে সরাসরি হামলা চালানো হয়েছে কেন, সে বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি।

সম্প্রতি অন্য এক ঘটনায়ও একই রকম পরিস্থিতি তৈরি হয়। ক্যারিবীয় অঞ্চলে মার্কিন বাহিনীর এক হামলা থেকে দুইজন সন্দেহভাজন মাদক পাচারকারী প্রাণে বেঁচে যান। পরে তাঁদের উদ্ধার করে একটি মার্কিন যুদ্ধজাহাজে তোলা হয় এবং পরবর্তীতে নিজ নিজ দেশ কলম্বিয়া ও ইকুয়েডরে ফেরত পাঠানো হয়।

এই সব ঘটনাই ইঙ্গিত করছে, মাদকবিরোধী অভিযানে যুক্তরাষ্ট্র ক্রমেই আরও আগ্রাসী অবস্থান নিচ্ছে—যার ফলাফল নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ বাড়ছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments