ইউরোপের একটি রাজধানীতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের মধ্যকার বহুল আলোচিত বৈঠক হওয়ার কথা ছিল আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে। কিন্তু যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব ঘিরে দুই পক্ষের মতবিরোধে শেষ পর্যন্ত সেই বৈঠক বাতিল হয়ে গেছে। এতে রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ নিয়ে আবারও অনিশ্চয়তার ঘনঘটা তৈরি হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, তিনি কোনো “অর্থহীন বৈঠক” করতে চান না এবং সময় নষ্ট করতে রাজি নন। তাঁর ভাষায়, “আমি প্রথমে দেখতে চাই, কী ঘটে।”
রাশিয়া প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। এর আগে গত আগস্টে দুই দেশের নেতারা আলাস্কায় বৈঠক করেছিলেন, কিন্তু তাতেও কোনো সাফল্য আসেনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপে এত প্রাণঘাতী সংঘাত আর দেখা যায়নি—হাজারো প্রাণহানি ঘটেছে, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে বহু নগর।
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ও রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া
মার্কিন প্রেসিডেন্টের পক্ষ থেকে যুদ্ধ “স্থগিত” রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়, যেখানে মূল উদ্দেশ্য ছিল সাময়িক শান্তি প্রতিষ্ঠা। কিন্তু রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট সেই প্রস্তাবে সাড়া দেননি। মস্কো এখনো আগের অবস্থানে অনড়—ইউক্রেনকে নিরস্ত্র হতে হবে এবং রাশিয়ার দখলে থাকা অঞ্চলগুলোর মালিকানা স্বীকৃতি দিতে হবে।
রাশিয়ার পররাষ্ট্র দপ্তরের এক মুখপাত্র জানান, “আমরা আমাদের অবস্থান থেকে এক ইঞ্চিও সরিনি। ইউক্রেন যদি শান্তি চায়, তাহলে তাদের বাহিনীকে পূর্বাঞ্চল থেকে পুরোপুরি প্রত্যাহার করতে হবে।”
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের কাছে একটি গোপন বার্তা পাঠিয়ে দনবাস অঞ্চলের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ দাবি করেছে।
ইউক্রেন ও ইউরোপীয় প্রতিক্রিয়া
ইউক্রেন এবং তার ইউরোপীয় মিত্ররা মার্কিন প্রেসিডেন্টের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবকে সমর্থন করেছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টসহ ইউরোপীয় নেতাদের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা যুদ্ধ বন্ধে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। কিন্তু রাশিয়ার টালবাহানা প্রমাণ করে, তারা এখনো সহিংসতা ও ধ্বংসের পথেই হাঁটছে।”
একই সঙ্গে তাঁরা রাশিয়ার অর্থনীতি ও প্রতিরক্ষা খাতে আরও চাপ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন, যাতে মস্কো শান্তি আলোচনায় ফিরতে বাধ্য হয়।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের অবস্থান পরিবর্তন
প্রথমদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট মনে করতেন, রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে তাঁর ২৪ ঘণ্টাই যথেষ্ট। কিন্তু ক্ষমতায় আসার এক বছর পার হতে না হতেই তাঁর অবস্থানে পরিবর্তন আসে। একদিকে তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন, অন্যদিকে ইউক্রেনের ওপর চাপ দেন আলোচনায় রাজি হওয়ার জন্য।
আলাস্কা বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনকে কিছু ভূমি ছাড়ের পরামর্শ দেন, কিন্তু পরবর্তীতে আবার মত বদলে কিয়েভের ভূখণ্ড অক্ষুণ্ণ রাখার পক্ষে অবস্থান নেন। এই দোদুল্যমান অবস্থানেই আটকে গেছে শান্তি প্রচেষ্টা।
যুদ্ধের বর্তমান অবস্থা
বর্তমানে ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চল যুদ্ধের প্রধান রণাঙ্গন। সেখানে প্রায় ৭৮ শতাংশ এলাকা রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, “এ মুহূর্তে তাদের লড়াই থামানো উচিত, ঘরে ফেরা উচিত, মানুষ হত্যা বন্ধ করা উচিত।”
তবে ইউক্রেন সেই প্রস্তাবে রাজি নয়। তারা দখলকৃত এলাকা পুনরুদ্ধারের প্রতিজ্ঞা পুনর্ব্যক্ত করেছে।
ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তা
বৈঠক বাতিল হওয়ায় রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান এখনো অধরাই রয়ে গেছে। শান্তি প্রক্রিয়া অনিশ্চয়তায় ঘেরা। ইউক্রেন সামরিক সহায়তা চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে টমাহক ক্ষেপণাস্ত্র চেয়েছিল, কিন্তু তাৎক্ষণিক কোনো চুক্তি হয়নি।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের বক্তব্য অনুযায়ী, ইউরোপীয় মিত্রদেরই এখন এগিয়ে আসা উচিত—অর্থাৎ ন্যাটো দেশগুলোকেই যুদ্ধের দায় ভাগ নিতে হবে।
এই পরিস্থিতি ইঙ্গিত দিচ্ছে, রণাঙ্গনে শিগগিরই শান্তি নেমে আসছে না। বরং, আলোচনার ব্যর্থতা ইউরোপজুড়ে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক উত্তেজনা আরও বাড়াতে পারে।



