লস অ্যাঞ্জেলস শহরের ডাউনটাউন এলাকায় এক অভিযানে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন এক অননুমোদিত অভিবাসী এবং এক মার্কিন আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তা। মঙ্গলবার সকালে স্থানীয় সময় প্রায় ৯টার দিকে এই ঘটনাটি ঘটে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
দেশটির নিরাপত্তা দপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, অভিযানের সময় সন্দেহভাজন অভিবাসী তার গাড়িকে “অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার” করেন এবং আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার গাড়িতে ধাক্কা দিতে থাকেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে কর্মকর্তারা গুলি চালান, যাতে অভিবাসী এবং একজন মার্কিন মার্শাল আহত হন।
নিরাপত্তা দপ্তরের এক মুখপাত্র জানান, অভিযানের সময় কর্মকর্তারা একটি নির্দিষ্ট “ট্রাফিক এনফোর্সমেন্ট অপারেশন” পরিচালনা করছিলেন। এটি ছিল নিয়মিত আইনগত প্রক্রিয়ার অংশ। কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে, অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল দক্ষিণ লস অ্যাঞ্জেলসের ৪৪ বছর বয়সী এক অভিবাসীকে আটক করা, যিনি ফেডারেল কর্মকর্তার ওপর হামলার অভিযোগে অভিযুক্ত।
তদন্ত সংস্থার প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়, কর্মকর্তারা অভিযুক্ত ব্যক্তির গাড়িটিকে ঘিরে ফেলেন। কিন্তু অভিযুক্ত ব্যক্তি তার টয়োটা ক্যামরি গাড়িটি সামনে ও পেছনে চালিয়ে দুইটি সরকারি গাড়িতে আঘাত করেন। এরপর নিজেদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে কর্মকর্তারা আত্মরক্ষার্থে গুলি ছোড়েন।
গুলিতে অভিযুক্ত ব্যক্তির কনুইয়ে আঘাত লাগে বলে জানা গেছে। একইসঙ্গে কর্মকর্তাদের ছোড়া একটি গুলি ছিটকে গিয়ে এক মার্কিন মার্শালের হাতে লাগে। পরে দুজনকেই দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আহত কর্মকর্তার অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে।
ঘটনার পর ফেডারেল তদন্ত সংস্থা এফবিআই ঘটনাস্থল পরিদর্শন শুরু করে। তাদের বিশেষজ্ঞ দল ঘটনাস্থল থেকে প্রমাণ সংগ্রহ করছে। তবে তারা নিশ্চিত করেছে, এই গুলিবর্ষণে কোনো এফবিআই কর্মকর্তা সরাসরি জড়িত ছিলেন না।
সাম্প্রতিক সময়ের উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতে এই ঘটনা আরও আলোচনায় এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু বড় শহর—যেমন লস অ্যাঞ্জেলস, শিকাগো ও পোর্টল্যান্ডে—অভিবাসনবিষয়ক অভিযান নিয়ে ফেডারেল ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মধ্যে সম্পর্ক টানাপোড়েনের মধ্যে রয়েছে।
সম্প্রতি শিকাগোতে এক আদালত নির্দেশ দিয়েছে, অভিবাসন কর্মকর্তাদের অভিযানের সময় দেহে ক্যামেরা ও পরিচয়পত্র বহন করতে হবে। অন্যদিকে লস অ্যাঞ্জেলসে স্থানীয় প্রশাসন জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে, যাতে অভিবাসন অভিযানে ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের সহায়তা করা যায়।
স্থানীয় এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “অনেক মানুষ এখন ভয় পাচ্ছেন ঘর থেকে বের হতে। কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, তাঁদের পরিবারের সদস্যরা নিখোঁজ হয়ে গেছেন, তাঁরা জানেন না তাঁদেরকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।”
ফেডারেল কর্মকর্তারা মনে করছেন, কিছু রাজনৈতিক নেতার বক্তব্য ও আচরণ অভিবাসীদের আইন অমান্যের দিকে উৎসাহিত করছে, যা এমন ঘটনার জন্য আংশিকভাবে দায়ী।
এদিকে, অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বুধবার লস অ্যাঞ্জেলস জেলা আদালতে হাজির করা হবে। প্রসিকিউশন অফিস জানিয়েছে, তিনি মেক্সিকোর নাগরিক এবং যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছিলেন অনুমতি ছাড়া। তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি অভিযোগ আনা হয়েছে, যদিও মামলাটি এখনো গ্র্যান্ড জুরি পর্যায়ে গড়ায়নি।
অভিযুক্তের পক্ষে কোনো আইনজীবী রয়েছেন কি না, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।



