রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আজও চলেছে স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচি। টানা ১১ দিন ধরে তাঁরা জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন করছেন। শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, তাঁদের একটি প্রতিনিধিদল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আলোচনার জন্য গিয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন তাঁরা।
ইবতেদায়ি মাদ্রাসাগুলো জাতীয়করণের বিষয়ে সরকারের আশ্বাস পাওয়ার নয় মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো বাস্তব পদক্ষেপ না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা। তাঁদের অভিযোগ, আশ্বাস দিয়ে তা বাস্তবায়ন না করা মানে শিক্ষকদের সঙ্গে প্রতারণা করা।
অবস্থানস্থলে শিক্ষকেরা নানা স্লোগান দিচ্ছেন—‘প্রাইমারি জাতীয়করণ, আমরা কেন বিনা বেতন’, ‘অবহেলার ৪০ বছর, মানুষ বাঁচে কত বছর’, ‘চাকরি আছে বেতন নাই, এমন কোনো দেশ নাই’। এসব স্লোগানেই উঠে এসেছে দীর্ঘদিনের বঞ্চনা ও ক্ষোভের প্রতিফলন।
বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ থেকে তিন বছরের সন্তানকে কোলে নিয়েই আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন এক শিক্ষিকা। তিনি বলেন, “১১ দিন ধরে এই কষ্ট করছি। ছোট সন্তানকে নিয়ে এখানে থাকতে হচ্ছে। সরকার যদি আমাদের কষ্ট বুঝত, তাহলে এতদিনে জাতীয়করণ করত।” তাঁর অভিযোগ, কিছু চক্রান্তের কারণেই এ প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে।
একইভাবে বগুড়া থেকে আসা আরেক প্রধান শিক্ষক জানান, ১৯৯২ সাল থেকেই তাঁরা জাতীয়করণের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন। কিন্তু প্রতিবারই প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা ভঙ্গ করা হয়েছে। সর্বশেষ সরকারও একই প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবায়ন করেনি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
শিক্ষক ঐক্যজোটের এক আহ্বায়ক জানান, গতকাল তাঁরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলেন কিন্তু সেখানে তাঁদের সঙ্গে কেউ কথা বলেননি। তিনি বলেন, “আমাদের সঙ্গে অবজ্ঞাপূর্ণ আচরণ করা হয়েছে। আজ মন্ত্রণালয় থেকে আবার ডাকা হয়েছে। একটি প্রতিনিধিদল সেখানে যাচ্ছে। আমরা দেখতে চাই, এবার কোনো সমাধান পাওয়া যায় কি না।” তিনি আরও জানান, গেজেট প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে।
অন্যদিকে শরীয়তপুরের এক শিক্ষক জানান, প্রথম ধাপে ৩১৫টি মাদ্রাসা জাতীয়করণ এবং ১,০৮৯টি মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত সে বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ দেখা যায়নি।
ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক সমিতির সভাপতি জানান, সরকার বারবার আশ্বাস দিয়েও তা বাস্তবায়ন না করায় শিক্ষক সমাজ গভীর হতাশায় ভুগছে। তিনি দ্রুত আশ্বাস বাস্তবায়নের জোর দাবি জানান।
অবস্থান কর্মসূচিতে শিক্ষকেরা আরও কয়েকটি দাবি তুলে ধরেন। এর মধ্যে রয়েছে—
-
অনুদানপ্রাপ্ত ও অনুদানবিহীন সব স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার জাতীয়করণের ঘোষণার দ্রুত বাস্তবায়ন।
-
১,০৮৯টি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তকরণের যাচাই-বাছাইকৃত ফাইল দ্রুত অনুমোদন ও প্রজ্ঞাপন প্রকাশ।
-
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মতো স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসায় প্রাক-প্রাথমিক পদ সৃষ্টি।
-
স্বতন্ত্র ইবতেদায়ি মাদ্রাসার জন্য আলাদা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা।
দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়নের আশায় আজও শিক্ষকেরা রাজধানীর রাস্তায়। তাঁদের প্রত্যাশা, এবার যেন আন্দোলনের এই দীর্ঘ অধ্যায়ের অবসান ঘটে, সরকার যেন দ্রুত প্রতিশ্রুত জাতীয়করণের পদক্ষেপ নেয়।



