Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeবিশেষ প্রতিবেদনহোয়াইট হাউসের সিদ্ধান্ত: পুতিনের সঙ্গে বৈঠক আপাতত স্থগিত

হোয়াইট হাউসের সিদ্ধান্ত: পুতিনের সঙ্গে বৈঠক আপাতত স্থগিত

ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে উত্তেজনা যখন আবারও বেড়েছে, তখনই স্থগিত হলো দুই দেশের শীর্ষ নেতাদের মুখোমুখি বৈঠক। হোয়াইট হাউস জানায়, রাশিয়ার বর্তমান অবস্থানের প্রেক্ষিতে এই বৈঠক আয়োজনের কোনো তাৎক্ষণিক পরিকল্পনা নেই। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন— তিনি এমন কোনো বৈঠকে বসে সময় নষ্ট করতে চান না, যার বাস্তব কোনো ফলাফল আসবে না।

গতকাল হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট বলেন, আলোচনার মূল বাধা হলো রাশিয়ার যুদ্ধবিরতি মানতে অস্বীকৃতি। তিনি ইঙ্গিত দেন, যতক্ষণ না রাশিয়া মাঠ পর্যায়ের সংঘাত বন্ধে রাজি হচ্ছে, ততক্ষণ কূটনৈতিক আলোচনার পথও কার্যত বন্ধ।

কয়েক দিন আগেই তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, দুই সপ্তাহের মধ্যেই হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক হবে। কিন্তু হোয়াইট হাউসের সর্বশেষ সিদ্ধান্তে সেই পরিকল্পনা এখন অনিশ্চিত। এক কর্মকর্তার ভাষায়— “নিকট ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যে কোনো শীর্ষ বৈঠক হবে না।”

কেন থেমে গেল বৈঠকের প্রস্তুতি

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে দুই পক্ষের প্রস্তাব একে অপরের বিপরীত। যুক্তরাষ্ট্র চাইছে বর্তমান সমররেখায় সংঘাত থেমে যাক, কিন্তু রাশিয়া তার বিপরীতে পুরো দনবাস অঞ্চল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার দাবি তুলছে। এই মৌলিক পার্থক্যই শীর্ষ বৈঠকের পথ রুদ্ধ করেছে।

গত আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কায় দুই নেতা সর্বশেষ মুখোমুখি হয়েছিলেন, তবে সে সময়ও কোনো সুনির্দিষ্ট চুক্তি হয়নি। এবারও অনেকে মনে করছেন, আগের মতো ফলহীন আলোচনায় বসা অর্থহীন হবে।

এক ইউরোপীয় কূটনীতিক জানিয়েছেন, রাশিয়া এমন কিছু শর্ত দিচ্ছে যা বাস্তবসম্মত নয়। যুক্তরাষ্ট্রও বুঝে গেছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বুদাপেস্ট বৈঠকে কোনো অগ্রগতি সম্ভব নয়।

মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠক বাতিল

দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যেও এ সপ্তাহে একটি প্রস্তুতিমূলক বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, তারা ইতিমধ্যে ফোনে “গঠনমূলক আলোচনা” করেছেন, তাই আলাদা বৈঠকের প্রয়োজন নেই।

এই সপ্তাহেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ইউক্রেন ও ইউরোপীয় নেতাদের সমর্থিত এক যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবের পক্ষে অবস্থান নেন। প্রস্তাবে বলা হয়— যুদ্ধ থামিয়ে বর্তমান সমররেখাকেই সংঘাতের সীমারেখা হিসেবে ধরে নিতে হবে। প্রেসিডেন্টের ভাষায়, “যেভাবে আছে, সেভাবেই রেখো। যুদ্ধ থামাও, ঘরে ফিরে যাও, মানুষ হত্যা বন্ধ করো।”

রাশিয়ার দৃঢ় অবস্থান

কিন্তু রাশিয়া একাধিকবার জানিয়েছে, তারা এই প্রস্তাব মানতে রাজি নয়। ক্রেমলিনের মুখপাত্র বলেছেন, “আমাদের অবস্থান অপরিবর্তিত। পূর্ব ইউক্রেনের অঞ্চলগুলো থেকে ইউক্রেনীয় বাহিনী সম্পূর্ণভাবে সরে না গেলে যুদ্ধবিরতির প্রশ্নই আসে না।”

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীও জানিয়েছেন, তারা শুধুমাত্র “দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই শান্তির” পক্ষে। তার ভাষায়, বর্তমান সমররেখায় থেমে যাওয়া মানে সাময়িক বিরতি, স্থায়ী সমাধান নয়।

ক্রেমলিন বলছে, সংঘাতের মূল কারণগুলোর সমাধান জরুরি— অর্থাৎ, দনবাস অঞ্চলে রাশিয়ার সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি এবং ইউক্রেনীয় সেনাদের নিরস্ত্রীকরণ। তবে ইউক্রেন ও ইউরোপীয় দেশগুলো এ শর্তকে একেবারেই অগ্রহণযোগ্য বলে মনে করছে।

ইউরোপের অবস্থান ও নতুন উত্তেজনা

ইউরোপীয় নেতারা ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট এক যৌথ বিবৃতিতে জানান, যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা শুরু হোক বর্তমান সীমারেখা ধরে। তাদের অভিযোগ, রাশিয়া শান্তির ব্যাপারে আন্তরিক নয়।

সম্প্রতি হোয়াইট হাউসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বৈঠক করেন। এর আগের দিনই তিনি ফোনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বুদাপেস্ট বৈঠক নিয়ে কথা বলেছিলেন। কিন্তু এই যোগাযোগের পরই সিদ্ধান্ত বদলায় যুক্তরাষ্ট্র।

বিভিন্ন প্রতিবেদনে জানা যায়, সেই আলোচনা বেশ তিক্ত পরিবেশে শেষ হয়। সূত্রগুলো জানায়, সম্ভাব্য এক প্রস্তাবে ইউক্রেনকে দনবাস অঞ্চলের কিছু অংশ রাশিয়ার হাতে ছেড়ে দিতে বলা হয়েছিল। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট দৃঢ়ভাবে জানান— দনবাসের যে অংশ এখনো ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে আছে, তা কোনো অবস্থাতেই ছাড় দেওয়া হবে না, কারণ এই অঞ্চল হারালে রাশিয়া ভবিষ্যতে আরও আক্রমণের সুযোগ পাবে।

এই অবস্থায় ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের সম্ভাবনা আপাতত দূর ভবিষ্যতের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধের কূটনৈতিক সমাধানের পথ এখনো অন্ধকারেই রয়ে গেছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments