মারাত্মক লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত এক অভিবাসীর জন্য আদালত নতুন আশার আলো দেখাল। যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত এক মেক্সিকান নাগরিক, যিনি প্রায় দুই দশক ধরে অবৈধভাবে দেশটিতে আছেন, তাঁকে হয় অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে, নয়তো জামিন শুনানির ব্যবস্থা করতে হবে—এমনই নির্দেশ দিয়েছেন মিশিগান ফেডারেল আদালতের এক বিচারক।
এই রায় কেবল তাঁর জন্যই নয়, বরং আরও সাতজন অভিবাসীর জন্যও আশার প্রতীক হয়ে উঠেছে। তারা সবাই বর্তমানে ইমিগ্রেশন কাস্টডিতে আটক রয়েছেন এবং একইভাবে আদালতের আদেশ অনুসারে জামিনে মুক্তি পেতে পারেন। এতে তাঁরা অন্তত তাদের পরিবারের কাছে ফিরে যেতে পারবেন, যতদিন না তাঁদের অভিবাসন সংক্রান্ত মামলা আদালতে নিষ্পত্তি হয়।
মার্কিন প্রশাসনের সাম্প্রতিক নীতিমালায়, যারা অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে তাদের জন্য কোনো জামিন শুনানির সুযোগ নেই—even যদি তাদের কোনো অপরাধমূলক রেকর্ড না থাকে। অতীতে এমন নিয়ম ছিল না, কিন্তু বর্তমান প্রশাসনের সিদ্ধান্তে তা পরিবর্তিত হয়েছে। এর ফলে বহু অভিবাসী দীর্ঘদিন ধরে আটক রয়েছেন, যাদের কেউ কেউ গুরুতর শারীরিক সমস্যায় ভুগছেন।
আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, প্রতিটি আটক অভিবাসীর ঝুঁকি ও আচরণের মূল্যায়ন না করেই আটক রাখা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে প্রদত্ত মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে। বিচারক নির্দেশ দিয়েছেন, সাত দিনের মধ্যে জামিন শুনানির ব্যবস্থা করতে হবে এবং মামলার আপডেট লিখিতভাবে আগামী ২৭ অক্টোবরের মধ্যে জমা দিতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ তাদের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেছে যে এই মামলাটি ফেডারেল আদালতের নয়, বরং ইমিগ্রেশন আপিল বোর্ডে জমা দেওয়া উচিত ছিল। তবে আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে তারা আপিল করবে কি না, তা এখনো পরিষ্কার নয়।
এদিকে মামলার অন্যতম আবেদনকারী ৩৩ বছর বয়সী এক ব্যক্তি দীর্ঘদিন ধরে লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত। তাঁর স্ত্রী জানিয়েছেন, এক বছর আগে তাঁর মাইলয়েড লিউকেমিয়া ধরা পড়ে—যা অস্থিমজ্জায় তৈরি এক ধরনের ক্যান্সার এবং জীবনঘাতী। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, তাঁর বেঁচে থাকার সম্ভাব্য সময়সীমা মাত্র চার থেকে ছয় বছর।
মেক্সিকোর জালিসকো প্রদেশের বাসিন্দা এই অভিবাসী প্রায় ২০ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন এবং সেই থেকেই সেখানে অবৈধভাবে বসবাস করছেন। গত আগস্টে মিশিগানের উপশহরে এক ট্রাফিক স্টপে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর তাঁকে মিশিগান থেকে ওহাইও এবং আবার মিশিগানে ফিরিয়ে আনা হয়, যেখানে ২২ দিন ধরে তিনি কোনো ওষুধ পাননি।
বর্তমানে তিনি মিশিগানের বল্ডউইনে অবস্থিত নর্থ লেক প্রসেসিং সেন্টারে চিকিৎসা নিচ্ছেন, যেখানে তাঁকে বিকল্প ওষুধ সরবরাহ করা হচ্ছে। তাঁর আইনজীবী জানিয়েছেন, এই পরিস্থিতি তাঁর শারীরিক অবস্থার জন্য মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে।
এই মামলাটি এখন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, গুরুতর অসুস্থ অভিবাসীদের মানবিক কারণে অন্তত জামিন শুনানির সুযোগ দেওয়া জরুরি। আদালতের সাম্প্রতিক নির্দেশ সেই পথই খুলে দিয়েছে—যা শুধু এক ব্যক্তির জীবন নয়, অনেকের ভবিষ্যৎকেও প্রভাবিত করতে পারে।



