Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeআন্তর্জাতিকহোয়াইট হাউসে বিলাসবহুল বলরুম নির্মাণ: দাতাদের পরিচয় ঘিরে রহস্য

হোয়াইট হাউসে বিলাসবহুল বলরুম নির্মাণ: দাতাদের পরিচয় ঘিরে রহস্য

যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানীতে শুরু হয়েছে প্রেসিডেন্টের নতুন বিলাসবহুল বলরুম নির্মাণকাজ। প্রায় ২৫০ মিলিয়ন ডলারের এই প্রকল্পকে ঘিরে দেশজুড়ে চলছে আলোচনা—বিশেষ করে কে বা কারা এই বিপুল অর্থ দিচ্ছেন তা নিয়ে।

সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে ৯০ হাজার বর্গফুট আয়তনের এই বলরুম নির্মাণ শুরু হয়। হোয়াইট হাউসের পূর্বাংশে খননকাজ ও পুরোনো স্থাপনা ভাঙার মধ্য দিয়ে শুরু হয় প্রকল্পটির প্রথম ধাপ। প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, তিনি নিজেও এর একটি বড় অংশের অর্থ প্রদান করবেন। একই সঙ্গে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, কিছু অজ্ঞাত দাতা প্রায় ২০ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ব্যয় করতে ইচ্ছুক।

তবে এই অর্থায়ন পদ্ধতি নিয়ে আইন বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ বাড়ছে। তাদের মতে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এ ধরনের দান ভবিষ্যতে প্রশাসনিক সুবিধা নেওয়ার পথ খুলে দিতে পারে। সাবেক এক নৈতিকতা বিশেষজ্ঞ বলেন, “এটি হোয়াইট হাউসের মর্যাদা ব্যবহার করে অর্থ সংগ্রহের একটি উপায়। করপোরেট দাতারা সবসময় কিছু না কিছু প্রত্যাশা করে।”

গত ১৫ অক্টোবর সম্ভাব্য দাতাদের জন্য হোয়াইট হাউসে আয়োজিত এক নৈশভোজে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি শীর্ষ কোম্পানির নির্বাহীরা অংশ নেন। উপস্থিতদের মধ্যে প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা ও বিনোদন খাতের বহু প্রভাবশালী ব্যক্তি ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে জানা যায়, তাঁদের মধ্যে অনেকেই এই বলরুম নির্মাণে অনুদান দেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

একটি মার্কিন সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, অংশগ্রহণকারীদের দেওয়া প্রতিশ্রুতিপত্রে উল্লেখ ছিল—দানকারীরা বিশেষ স্বীকৃতি পেতে পারেন। এখনো সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত না হলেও ধারণা করা হচ্ছে, ভবনের কোথাও তাঁদের নাম খোদাই করে রাখা হতে পারে।

প্রেসিডেন্টের দপ্তর জানিয়েছে, নতুন বলরুমে ৯৯৯ জনের বসার জায়গা থাকবে। প্রাথমিক পরিকল্পনায় এই সংখ্যা ছিল ৬৫০। ইতিমধ্যে ইউটিউব ২২ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে—একটি পুরোনো মামলার সমঝোতার অংশ হিসেবে। তবে বাকিদের নাম এখনো প্রকাশ করা হয়নি।

অন্যদিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই প্রকল্পে জনগণের করের অর্থ ব্যবহার করা হবে না এবং ভবিষ্যৎ প্রশাসনও এই বলরুম ব্যবহার করতে পারবে। অনুদান আহ্বানের প্রক্রিয়া স্বচ্ছ ছিল বলেও দাবি করা হয়।

অলাভজনক সংস্থা ‘ট্রাস্ট ফর দ্য ন্যাশনাল মল’-এর মাধ্যমে এই দানগুলো পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিন ধরে ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিসের সঙ্গে কাজ করে হোয়াইট হাউসের উন্নয়নমূলক প্রকল্পে অর্থ সংগ্রহ করে আসছে।

হোয়াইট হাউসের সাবেক এক নির্বাহী শেফ ও ব্যবস্থাপক জানান, “এই বলরুম ভবিষ্যতে রাষ্ট্রীয় আয়োজনে খরচ কমাবে। আগে অনেক সময় বাইরে টেন্ট ভাড়া নিয়ে অনুষ্ঠান করতে হতো, যা ব্যয়বহুল ও অস্বস্তিকর ছিল।”

তবে সমালোচকরা বলছেন, বিষয়টি এক ধরনের “পে-টু-প্লে স্কিম”—যেখানে দানের বিনিময়ে সুবিধা পাওয়া যায়। অতীতেও বিভিন্ন প্রশাসনে এমন অভিযোগ উঠেছিল। নব্বইয়ের দশকে এক সাবেক প্রেসিডেন্টকেও নির্বাচনী তহবিলের বিনিময়ে রাষ্ট্রীয় অতিথিকক্ষ ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার জন্য সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল।

বিশ্লেষকদের মতে, নতুন বলরুমের আকার ও ব্যবহার রাজনৈতিকভাবে দানের প্রভাব বাড়িয়ে তুলতে পারে। রাষ্ট্রীয় আয়োজনে বড় পরিসর প্রয়োজন হলেও এই সুযোগ ভবিষ্যতে তহবিল সংগ্রহের মাধ্যম হয়ে উঠতে পারে।

প্রেসিডেন্টের দপ্তর অবশ্য বলছে, এই বলরুম নির্মাণ হোয়াইট হাউসের ঐতিহাসিক অবকাঠামো উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক আয়োজনে সক্ষমতা বৃদ্ধির অংশমাত্র। তাদের দাবি, এটি দেশের মর্যাদা বাড়ানোর পাশাপাশি সরকারি খরচ কমাতেও সহায়ক হবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments