এক ইতিহাস রচনা করেছেন স্প্যানিশ পর্বতারোহী কার্লোস সোরিয়া ফন্তান। ২৬ সেপ্টেম্বর নেপালের স্থানীয় সময় ভোর সাড়ে পাঁচটায় বিশ্বের অষ্টম সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মানাসলু (৮,১৬৩ মিটার) জয় করে তিনি সর্বাধিক বয়সী পর্বতারোহী হিসেবে নতুন রেকর্ড স্থাপন করলেন। এই চূড়ায় আরোহণ কেবল তার শারীরিক সক্ষমতার প্রমাণ নয়, বরং মানুষের সম্ভাবনার অসীম সীমার কথাই তুলে ধরেছে।
কার্লোস সোরিয়া এবারের অভিযানের সময় এটি উৎসর্গ করেছেন তাঁর ১৯৭৫ সালের এক বিশেষ স্মৃতিকে। সেই বছরে স্প্যানিশ অভিযাত্রী দলের সঙ্গে মানাসলুতে প্রথমবারের মতো চূড়ায় ওঠার চেষ্টা করেছিলেন তিনি, তবে নানা কারণে সফল হতে পারেননি। ৫০ বছর পর এই জয় যেন সেই অভিযানের স্মৃতি পুনরায় উদযাপনের প্রতীক। উল্লেখযোগ্য, ২০১০ সালে ৭১ বছর বয়সেই তিনি প্রথমবার মানাসলুর চূড়ায় পৌঁছান।
এবারের মানাসলু অভিযান করেছেন নেপালের পর্বতারোহণ সংস্থা সেভেন সামিট ট্রেকসের সহায়তায়। তাঁর সঙ্গে ছিলেন অভিজ্ঞ শেরপা গাইড মিকেল শেরপা, নিমা শেরপা, ফুর্বা শেরপা এবং আরেকজন স্প্যানিশ পর্বতারোহী লুইস এম সোরিয়ানো।
কার্লোস সোরিয়ার জন্ম ১৯৩৯ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি স্পেনের আভিলা শহরে। মাত্র ১৪ বছর বয়সে পর্বতারোহণের প্রতি আগ্রহ দেখা দেয়। ২০ বছর বয়সে তিনি আল্পস পর্বতমালায় আরোহণ শুরু করেন। ১৯৬৮ সালে স্প্যানিশ অভিযাত্রী দলের অংশ হয়ে ইউরোপের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এলব্রুস জয় করেন। সত্তরের দশকের শুরুতে তিনি হিমালয়ে অভিযানে অংশ নেন।
এখন পর্যন্ত সোরিয়া বিশ্বের ১৪টি আট হাজারি শৃঙ্গের মধ্যে ১২টিতে আরোহণ করেছেন। বিশেষভাবে, ৬০ বছরের পরও তিনি মাউন্ট এভারেস্টসহ ১০টি শীর্ষ জয় করেছেন। উল্লেখযোগ্য, তিনি সর্বাধিক বয়সে বিভিন্ন উচ্চশৃঙ্গ জয় করেছেন: ৬৫ বছরে কে-টু, ৬৮ বছরে ব্রড পিক, ৬৯ বছরে মাকালু, ৭০ বছরে গাশারব্রুম-১, ৭৫ বছরে কাঞ্চনজঙ্ঘা, ৭৭ বছরে অন্নপূর্ণা এবং ৮৬ বছরে মানাসলু।
এই দীর্ঘ অভিযানের মধ্যে এখন মাত্র দুটি আট হাজারি শৃঙ্গ বাকি রয়েছে — বিশ্বের সপ্তম উচ্চতাবিশিষ্ট ধৌলাগিরি এবং চতুর্দশতম শিশাপাংমা। বিশেষভাবে ধৌলাগিরি তাঁর কাছে দীর্ঘদিনের চ্যালেঞ্জ, ১৯৯৮ সাল থেকে ১৫ বার চেষ্টা করেছেন, তবে কখনো চূড়ায় পৌঁছাতে পারেননি। সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছিল ২০২৩ সালে, যখন এক প্রচেষ্টায় তার পায়ের হাড় ভেঙে যায় এবং পর্বতারোহণ ক্যারিয়ার প্রায় থেমে যেত। তবে দুই বছরের মধ্যে তিনি আবার ঘুরে দাঁড়ান এবং মানাসলুর চূড়ায় নতুন ইতিহাস রচনা করেন।
এই অভিযানের মাধ্যমে কার্লোস সোরিয়া প্রমাণ করেছেন, বয়স কখনো কোনো সীমাবদ্ধতা নয়। দীর্ঘ সময় ধরে পর্বতারোহণে লেগে থাকা, ধৈর্য এবং অভিজ্ঞতা মিলেই তাঁকে এই অনন্য সাফল্য এনে দিয়েছে। এই জয় কেবল এক ব্যক্তির নয়, বরং সমস্ত পর্বতারোহী এবং সাহসী মানুষের জন্য অনুপ্রেরণার প্রতীক।



