পুরোনো বিলাসী পণ্যের বাজার বিশ্বব্যাপী দ্রুত সম্প্রসারিত হচ্ছে। ফ্যাশন ও বিলাসী পণ্যের পুনর্বিক্রয় বাজার প্রতিবছর প্রায় ১০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা নতুন পণ্যের বাজারের চেয়ে তিন গুণ দ্রুত। বর্তমানে এই বৈশ্বিক বাজারের পরিমাণ প্রায় ২১০ বিলিয়ন ডলার, এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এটি ৩৬০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
বাজারের এই দ্রুত বৃদ্ধি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে সামনে নিয়ে এসেছে—পণ্যের আসলত্ব বা অথেনটিকেশন। ক্রেতারা এখন শুধুমাত্র পণ্যের নাম বা ব্র্যান্ডের উপর বিশ্বাস রাখেন না, তারা চাইছেন নিশ্চিত হওয়ার জন্য নির্ভরযোগ্য যাচাইকরণ। বিশেষজ্ঞদের মতে, নকল পণ্যের প্রযুক্তি এতটাই উন্নত হয়েছে যে, অনেক সময় আসল পণ্যের সাথে নকলের পার্থক্য করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
বিলাসী পণ্যের পুনর্বিক্রয় প্ল্যাটফর্মগুলো যেমন যাচাই ব্যবস্থায় বিপুল বিনিয়োগ করছে। সিঙ্গাপুরভিত্তিক একটি প্ল্যাটফর্ম সম্প্রতি শহরের কেন্দ্রস্থলে তাদের প্রথম বিলাসী পণ্যের দোকান চালু করেছে, যেখানে পণ্য বিক্রির আগে কোম্পানির বিশেষজ্ঞরা তা যাচাই করেন। এই যাচাই প্রক্রিয়ায় শুধু উপকরণ নয়, সেলাই, ছাপ, স্ট্যাম্প সবকিছু খুঁটিয়ে দেখা হয়। এমনকি যদি সামান্য সন্দেহ থাকে, পণ্যটি তালিকায় রাখা হয় না।
দক্ষিণ কোরিয়ার অনলাইন মার্কেটপ্লেসও এ ক্ষেত্রে উদাহরণ স্থাপন করেছে। তারা চোখের দেখা যাচাইয়ের সঙ্গে বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে যাচাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। এই এআই লাখ লাখ তথ্যের ভিত্তিতে প্রশিক্ষিত এবং নতুন জালিয়াতির কৌশলের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম। যাচাইয়ের নির্ভুলতা প্রতিষ্ঠানটি ৯৯.৯ শতাংশ দাবি করছে।
বিশ্বাসই এখন বিক্রির মূল চালিকা শক্তি। বুনজাং ও অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম বলছে, যাচাই ব্যবস্থার কারণে তাদের ব্যবসায় গতি এসেছে। বার্ষিক লেনদেনের উল্লেখযোগ্য অংশ বিলাসী পণ্যের উপর নির্ভর করছে। তরুণ ক্রেতা, বিশেষ করে মিলেনিয়াল ও জেন জি প্রজন্ম, সীমিত বাজেটে বিলাসী পণ্য কিনে ব্যবহার করার পর দ্রুত পুনর্বিক্রয় করছেন।
বাজারে এই প্রবণতা শুধুমাত্র সাশ্রয়ী মূল্যের কারণে নয়, বরং বিরল ও সহজলভ্য নয় এমন পণ্য পাওয়ার আকাঙ্ক্ষার কারণে। ফ্যাশন এখন কেবল নতুন পণ্য কেনার মাধ্যম নয়, ব্যবহৃত বিলাসী পণ্যের পুনর্বিক্রয়ও ফ্যাশনের অংশ হয়ে উঠেছে।
বাজার বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে পুনর্বিক্রয় ও যাচাই ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হবে। ক্রেতারা এখন শুধু পণ্য কিনছেন না, তারা চাইছেন সুনির্দিষ্ট যাচাইকৃত পণ্য যাতে তাদের বিনিয়োগ নিরাপদ থাকে। এই ধারা চলতে থাকলে, পুরোনো বিলাসী পণ্যের বাজার বিশ্বব্যাপী আরও বিস্তৃত ও স্বচ্ছ হয়ে উঠবে।



