Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeবিশেষ প্রতিবেদনরাশিয়ার শর্তে শান্তি চুক্তির প্রস্তাব, ইউক্রেনের আপত্তি

রাশিয়ার শর্তে শান্তি চুক্তির প্রস্তাব, ইউক্রেনের আপত্তি

ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টকে রাশিয়ার প্রস্তাবিত শর্ত অনুযায়ী যুদ্ধবিরতি ও চুক্তিতে রাজি হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। বৈঠক সম্পর্কিত একাধিক সূত্র জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনকে রাশিয়ার দখলে থাকা অঞ্চলসমূহ ছেড়ে দিতে চাপ দিয়েছেন, যাতে যুদ্ধ দ্রুত শেষ করা যায়।

সূত্রগুলো জানিয়েছে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট স্পষ্ট জানিয়ে দেন—স্বেচ্ছায় কোনো ভূখণ্ড রাশিয়ার কাছে হস্তান্তর করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। এরপর প্রেসিডেন্ট বর্তমান যুদ্ধক্ষেত্রের সম্মুখসারি বরাবর যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেন। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টও এ প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন।

বৈঠক সম্পর্কে অবগত আরেকটি সূত্র জানায়, আলোচনার শেষ দিকে প্রেসিডেন্ট “বর্তমান সীমারেখা অনুযায়ী একটি সম্ভাব্য চুক্তি”র কথা বলেন। এতে দুই পক্ষের মধ্যে লড়াই চলমান অঞ্চলগুলোকে স্থায়ী সীমান্ত হিসেবে বিবেচনা করার বিষয়টি উঠে আসে।

বৈঠক শেষে মার্কিন প্রেসিডেন্টের উড়োজাহাজ এয়ার ফোর্স ওয়ান থেকে দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, “আমার মনে হয়, ইউক্রেনের এখনই থেমে যাওয়া উচিত—যেখানে যুদ্ধ চলছে সেখানেই। যদি আবারও ভূমি ভাগাভাগির চেষ্টা হয়, তবে আলোচনা আরও কঠিন হয়ে পড়বে।”

রয়টার্সের এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, রাশিয়ার শর্ত মেনে নিলে কি ইউক্রেনকে দনবাস অঞ্চল ছেড়ে দিতে হবে? উত্তরে প্রেসিডেন্ট জানান, “ওখানে যা হয়েছে, তাই থাকুক। আমার মনে হয়, দনবাসের প্রায় ৭৮ শতাংশ এলাকা ইতোমধ্যেই রাশিয়া নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।”

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের দপ্তর এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। যদিও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই বৈঠকের কিছু অংশ আগেই আলোচনায় এসেছে।

গত কয়েক সপ্তাহ ধরে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল, যুক্তরাষ্ট্র এখন ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে সমঝোতাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে না; বরং ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তার দিকেই মনোযোগী। এর প্রমাণ মেলে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে দেওয়া এক বক্তব্যে, যেখানে প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন—ইউক্রেন তাদের দখলকৃত অঞ্চল পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম।

তবে সাম্প্রতিক বৈঠক সেই অবস্থানের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছে। এখন দেখা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র দ্রুত শান্তি প্রক্রিয়া শুরু করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে এবং ইউক্রেনকে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসার জন্য পরামর্শ দিচ্ছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই অবস্থান পরিবর্তন বৈশ্বিক কূটনীতিতে নতুন অধ্যায় সূচনা করতে পারে। কারণ, রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয় পক্ষেরই যুদ্ধ ক্লান্তি এখন স্পষ্ট, আর যুক্তরাষ্ট্র চায় সংঘাতের অবসান ঘটিয়ে আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে।

তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—ইউক্রেন কতটা প্রস্তুত এমন একটি চুক্তির জন্য, যেখানে তাদের দখল হারানোর আশঙ্কা প্রবল? এবং রাশিয়া কি তার শর্তের বাইরে গিয়ে কোনো ছাড় দিতে রাজি হবে? সময়ই বলে দেবে, এই বৈঠক শান্তির পথে এক নতুন দিগন্ত খুলবে, নাকি এটি হয়ে উঠবে আরেকটি কূটনৈতিক টানাপোড়েনের সূচনা।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments