Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeঅন্যান্যনারীর চাকরি ঝুঁকিতে জেনারেটিভ এআই–এর প্রভাব: জাতিসংঘের সতর্কবার্তা

নারীর চাকরি ঝুঁকিতে জেনারেটিভ এআই–এর প্রভাব: জাতিসংঘের সতর্কবার্তা

জাতিসংঘের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে হাইলাইট করা হয়েছে যে দ্রুত বিকশিত জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং ডিজিটালাইজেশন নারীদের জন্য চাকরি ঝুঁকিকে আরও বাড়াতে পারে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিশ্বব্যাপী নারীদের ২৭.৬ শতাংশ চাকরি স্বয়ংক্রিয় বা বড় ধরনের পরিবর্তনের মুখে পড়তে পারে, যেখানে পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হার ২১.১ শতাংশ। এটি কর্মক্ষেত্রে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্যকে আরও প্রকট করতে পারে।

এই ঝুঁকির মূল কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে কাঠামোগত বৈষম্য, প্রযুক্তিতে লিঙ্গভিত্তিক পক্ষপাত এবং নারীদের ডিজিটাল প্রযুক্তিতে সীমিত প্রবেশাধিকার। বিশেষত উচ্চ ও উচ্চমধ্যম আয়ের দেশগুলোতে এই প্রভাব সবচেয়ে বেশি অনুভূত হবে। কারণ এসব দেশে নারীরা মূলত অফিস সহকারী, শিক্ষা ও জনপ্রশাসন খাতে কাজ করেন। জেনারেটিভ এআই এই খাতগুলিতে যে প্রভাব ফেলতে পারে, তা ইতিমধ্যেই উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ ধরণের প্রবণতা নতুন নয়। ডিজিটাল রূপান্তরের আগের পর্যায়েও স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি মূলত রুটিন বা হাতের কাজকে প্রভাবিত করেছিল, এবং তখনও নারীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, ২০০০ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ৩৫ লাখ নারী প্রশাসনিক সহায়তা বা অ্যাসেম্বলি লাইনের কাজ হারিয়েছিলেন, যেখানে পুরুষদের সংখ্যা ছিল মাত্র ১০ লাখ।

জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগের প্রযুক্তিগুলো স্বল্প দক্ষ কাজকে প্রভাবিত করলেও, জেনারেটিভ এআই এখন বিভিন্ন দক্ষতার স্তরের কাজ স্বয়ংক্রিয় করতে সক্ষম। ফলে এর প্রভাব বিস্তৃত এবং গভীর। এছাড়াও, প্রযুক্তি খাতে নারীদের স্বল্প উপস্থিতি এই ঝুঁকিকে আরও বাড়াচ্ছে। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত (এসটিইএম) খাতে নারীদের অংশগ্রহণ বিশ্বের ৭৩টি দেশের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশের কম, যা লিঙ্গবৈষম্যকে আরও জটিল করে তুলছে।

এ পরিস্থিতি শুধুমাত্র বর্তমান চাকরিতে নয়, ভবিষ্যতের কাজের ক্ষেত্রেও উদ্বেগ সৃষ্টি করছে। পক্ষপাতপূর্ণ তথ্য দিয়ে প্রশিক্ষিত এআই ব্যবস্থাগুলো চাকরির নিয়োগ ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে বৈষম্যকে স্থায়ী এবং আরও তীব্র করতে পারে।

তবে ডিজিটালাইজেশন নারীদের জন্য নতুন সুযোগও সৃষ্টি করছে। দূর থেকে বা অনলাইনে কাজ এবং গিগ ইকোনমি নতুন অর্থনৈতিক পথ খুলছে, যা সময়সীমা ও পারিবারিক বাধা অতিক্রম করতে সহায়ক। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই প্রযুক্তি নারীদের অর্থনৈতিক অন্তর্ভুক্তি ও ক্ষমতায়নের সম্ভাবনাও তৈরি করছে।

উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অনেক নারী ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ও ই-কমার্সের মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছেন, তবে এখনো এক স্থায়ী ‘ডিজিটাল লিঙ্গ ব্যবধান’ অনেক নারীকে সুযোগ থেকে বঞ্চিত করছে। জাতিসংঘ সরকারগুলোকে আহ্বান জানিয়েছে, নারীদের জন্য সাশ্রয়ী ইন্টারনেট সুবিধা বাড়ানো, ডিজিটাল দক্ষতার প্রশিক্ষণ প্রদান এবং প্রযুক্তি খাতে নারীদের নেতৃত্ব ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা উচিত।

সংক্ষেপে বলা যায়, জেনারেটিভ এআই এবং ডিজিটাল রূপান্তর নারীদের জন্য বিপুল সম্ভাবনা এবং একই সঙ্গে বিপজ্জনক ঝুঁকি উভয়ই নিয়ে এসেছে। নীতিনির্ধারকরা যদি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেন, তাহলে এই প্রযুক্তি নারীর অর্থনৈতিক শক্তি বাড়াতে কার্যকর হতে পারে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments