Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeবিশেষ প্রতিবেদনযৌন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে রাজকীয় উপাধি ত্যাগ করলেন ব্রিটিশ প্রিন্স

যৌন কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে রাজকীয় উপাধি ত্যাগ করলেন ব্রিটিশ প্রিন্স

যুক্তরাজ্যের রাজপরিবারের এক প্রভাবশালী সদস্যকে এখন সবাই মূলত সেই ব্যক্তি হিসেবে মনে রাখে, যার বিরুদ্ধে কিশোরীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ আনা হয়েছিল। একসময় মা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্রিয় ছেলে হিসেবে পরিচিত এই প্রিন্স সেনা কর্মকর্তা ও সুদর্শন যুবক হিসেবে ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যক্তিগত ও আইনি সমস্যার কারণে তার ভাবমূর্তিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে।

৬৫ বছর বয়সী এই প্রিন্স প্রয়াত রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ছোট ছেলে এবং বর্তমান রাজা তৃতীয় চার্লসের ভাই। সম্প্রতি এক ব্যক্তিগত বিবৃতিতে তিনি ঘোষণা দিয়েছেন যে, তিনি ডিউক অব ইয়র্কসহ সকল রাজকীয় উপাধি থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন। এ সিদ্ধান্তের পেছনে মূল কারণ হিসেবে ধরনা দেওয়া হচ্ছে, দীর্ঘ সময় ধরে তিনি কুখ্যাত মার্কিন ধনকুবেরের সঙ্গে সম্পর্ক থাকার অভিযোগে সমালোচনার মুখে পড়ায় রাজপরিবারের ভাবমূর্তিতে কোনো ধরনের ক্ষতি এড়ানোর প্রয়াস।

প্রিন্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি ২০০১ সালে একটি কিশোরীকে যৌন নিপীড়নের শিকার করেছেন। অভিযোগকারী তখন মাত্র ১৭ বছর বয়সী ছিলেন। পরবর্তীতে এই নারীর মৃত্যু হয়, যার পরিবার দাবি করে, মানসিক চাপ ও নিপীড়নের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। এপস্টেইনের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে প্রিন্সের উপর যুক্তরাজ্য ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে চাপ সৃষ্টি হয়।

রাজকীয় উপাধি ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার সময় প্রিন্স বলেন, “রাজা, আমার নিকটাত্মীয় ও বৃহত্তর পরিবারের সঙ্গে আলোচনার পর আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি। আমার বিরুদ্ধে চলমান অভিযোগগুলো রাজপরিবারের কাজকে বিঘ্নিত করছে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, “আমি সবসময় পরিবার ও দেশের প্রতি দায়বদ্ধ ছিলাম, এ সিদ্ধান্তও একই কারণে নেওয়া।” প্রিন্স দৃঢ়ভাবে তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং জানিয়েছেন, উপাধি ছেড়ে দেওয়ার পর তিনি আর তা ব্যবহার করবেন না।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, রাজা চার্লস এবং যুবরাজ প্রিন্স অব ওয়েলসের সঙ্গে পরামর্শের পর প্রিন্স এই সিদ্ধান্ত নেন। যদিও তিনি এখনো প্রিন্স উপাধি বহন করবেন, কিন্তু ডিউক অব ইয়র্ক হিসেবে পরিচিত থাকবেন না। উল্লেখযোগ্য যে, তিনি এই উপাধি তার মা রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছ থেকে পেয়েছিলেন।

গত কয়েক বছরে প্রিন্সের নাম একাধিক কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে যৌন নিপীড়নের মামলা, আর্থিক বিষয় সংক্রান্ত প্রশ্ন এবং অভিযুক্ত চীনা গুপ্তচরের সঙ্গে সম্পর্কের অভিযোগ। প্রিন্সের সাবেক স্ত্রীও আর ডাচেস অব ইয়র্ক উপাধি বহন করবেন না, তবে তাঁদের মেয়েরা প্রিন্সেস উপাধি রাখতে পারবেন।

বর্তমানে প্রিন্স সম্ভবত উইন্ডসরে অবস্থিত ‘রয়্যাল লজে’ বাড়িতে থাকতে পারবেন। এখানে তার ব্যক্তিগতভাবে ইজারা নেওয়া অংশ রয়েছে, যার মেয়াদ ২০৭৮ সাল পর্যন্ত। প্রিন্সের ওপর নজরদারি ২০১৯ সালে এক সাক্ষাৎকারের পর আরও জোরদার হয়, যেখানে তিনি জানিয়েছিলেন, ২০১০ সালের ডিসেম্বরে এপস্টেইনের সঙ্গে তাঁর যে ছবি রয়েছে, সেটিই শেষ। তবে ই–মেইল বার্তা অনুসারে দেখা গেছে, তিনি এরপরও ব্যক্তিগতভাবে এপস্টেইনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছিলেন।

রাজপরিবারের সর্বোচ্চ মর্যাদাপূর্ণ পদ থেকে সরে আসার এই ঘটনা সমালোচক ও জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। প্রিন্সের উপাধি ত্যাগ করা, বর্তমান রাজপরিবারকে সেই বিতর্ক থেকে দূরে রাখার প্রচেষ্টা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে প্রিন্স তার ব্যক্তিগত ও রাজকীয় দায়িত্বের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করছেন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments