Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeবাংলাদেশইঞ্জিন সংকটে স্থবির ময়মনসিংহ-জারিয়া রেলপথ, ট্রেন চালুর দাবিতে যাত্রীদের আলটিমেটাম

ইঞ্জিন সংকটে স্থবির ময়মনসিংহ-জারিয়া রেলপথ, ট্রেন চালুর দাবিতে যাত্রীদের আলটিমেটাম

ময়মনসিংহ-জারিয়া রেলপথে চলাচলকারী লোকাল ট্রেনটি ইঞ্জিন সংকটের কারণে টানা ২১ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এই রুটের হাজারো সাধারণ যাত্রী, শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী মানুষ। আজ সোমবার দুপুরে ময়মনসিংহ রেলওয়ে জংশন স্টেশনে ক্ষুব্ধ যাত্রীরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। মানববন্ধনে আগামীকালকের মধ্যে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক না হলে কঠোর আন্দোলনের আলটিমেটাম দেওয়া হয়।

দুপুর পৌনে দুইটা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত এই মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারীরা হাতে বিভিন্ন ফেস্টুন ও ব্যানার নিয়ে দাঁড়ান। এসব ফেস্টুনে লেখা ছিল— “জারিয়া লোকাল ট্রেন চালু করতে হবে”, “ইঞ্জিন নিয়ে প্রতারণা মানি না”, “ট্রেন নিয়ে তালবাহানা চলবে না”, “জাগো জারিয়া লোকাল ট্রেনযাত্রী”— এমন সব দাবির স্লোগান।

রেলওয়ে ও স্থানীয় যাত্রীদের সূত্রে জানা গেছে, ময়মনসিংহ-জারিয়া রুটটি প্রায় ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ। প্রতিদিন কোনো সাপ্তাহিক বন্ধ ছাড়া লোকাল ট্রেনটি চারবার করে আপডাউন করত, মোট আটটি ট্রিপে যাত্রী পরিবহন হতো। এই রুটে অন্য কোনো আন্তঃনগর ট্রেন না থাকায় শম্ভুগঞ্জ, গৌরীপুর, শ্যামগঞ্জ ও পূর্বধলাসহ আটটি স্টেশনের মানুষের প্রধান নির্ভরতা ছিল এই লোকাল ট্রেনটি। প্রতিদিনই এই ট্রেনে উপচে পড়া ভিড় দেখা যেত।

ময়মনসিংহ মহানগরী, গৌরীপুর, ধোবাউড়া, নেত্রকোনা, পূর্বধলা, দূর্গাপুর ও কলমাকান্দা অঞ্চলের হাজার হাজার মানুষ এই ট্রেনের ওপর নির্ভর করে কর্মস্থল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়াত করতেন। ট্রেন বন্ধ থাকায় এখন বিকল্প পথে কয়েকগুণ বেশি অর্থ ব্যয় করে গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে তাঁদের। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন অফিসগামী যাত্রী, শিক্ষার্থী ও রোগীরা। চিকিৎসা, ব্যবসা ও শিক্ষা কার্যক্রমেও পড়েছে বড় প্রভাব।

গৌরীপুরের এক ব্যবসায়ী বলেন, “এই ট্রেনে অনেক শিক্ষার্থী প্রতিদিন আনন্দের সঙ্গে ময়মনসিংহ ও গৌরীপুরে আসা-যাওয়া করত। এখন ট্রেন বন্ধ থাকায় অটোরিকশার ভাড়া কয়েকগুণ বেড়েছে। মানুষ আজ দুর্ভোগে অতিষ্ঠ। আমরা চাই দ্রুত ট্রেনটি পুনরায় চালু করা হোক।”

একজন শিক্ষার্থী জানান, তিনি প্রতিদিন জারিয়া থেকে গৌরীপুরে ক্লাস করতে যেতেন এবং বিকেলে ট্রেনে বাড়ি ফিরতেন। ট্রেন বন্ধ থাকায় এখন অটোরিকশায় যাওয়া-আসা করতে হচ্ছে, খরচ হচ্ছে প্রতিদিন প্রায় ২৪০ টাকা— যেখানে আগে খরচ হতো মাত্র ৪০ টাকা। “পরিবারের সামর্থ্য নেই প্রতিদিন এত খরচ করার, তাই ক্লাসে নিয়মিত যেতে পারছি না,” বলেন তিনি।

পূর্বধলার এক ব্যবসায়ী বলেন, “আমরা আগামীকাল থেকেই বন্ধ ট্রেন চালু চাই। তা না হলে ছাত্র, ব্যবসায়ী ও কর্মজীবীরা কঠোর কর্মসূচিতে নামতে বাধ্য হব।”

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ইঞ্জিন সংকটের কারণে জারিয়া লোকাল ট্রেন চলাচল বন্ধ আছে। ময়মনসিংহ স্টেশনের এক কর্মকর্তা জানান, “আমাদের মিটারগেজ লোকাল ট্রেনের ইঞ্জিনে ত্রুটি দেখা দেয়। সেটি মেরামতের জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে, কিন্তু এখনো ফেরত আসেনি। ইঞ্জিন পাওয়া মাত্র ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করা হবে।”

এদিকে, দীর্ঘদিন ট্রেন বন্ধ থাকায় যাত্রীদের ক্ষোভ ক্রমেই বাড়ছে। অনেকেই বলছেন, এই রেলপথটি শুধু একটি যোগাযোগ মাধ্যম নয়, এটি ময়মনসিংহ-জারিয়া অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার অংশ। তাই দ্রুত ট্রেনটি চালুর দাবিতে যাত্রীদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রস্তুতি চলছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments