আমেরিকার আইওয়া অঙ্গরাজ্যে একটি বড় স্কুল ডিস্ট্রিক্টের সাবেক সুপারিনটেনডেন্টের বিরুদ্ধে নাগরিকত্ব জালিয়াতি ও অবৈধ অস্ত্র রাখার অভিযোগে মামলা হয়েছে। সম্প্রতি ফেডারেল আদালতে দাখিল করা অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, তিনি নিজেকে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে মিথ্যা দাবি করে চাকরির আবেদন করেছিলেন এবং দেশে অবৈধভাবে অবস্থান করার সময় একাধিক আগ্নেয়াস্ত্র নিজের দখলে রেখেছিলেন।
দুই দফায় অভিযোগ গঠন করা হয়েছে—একটি চাকরির জন্য মিথ্যা তথ্য দেওয়ার এবং অন্যটি অবৈধভাবে অস্ত্র রাখার অভিযোগে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ ২০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
সূত্র জানায়, অভিযুক্ত ব্যক্তি মূলত দক্ষিণ আমেরিকার একটি দেশ থেকে এসেছিলেন এবং প্রায় দুই দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন। গত সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কর্তৃপক্ষ (আইসিই) তাঁকে আটক করে। অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আটক করার সময় তিনি কর্তৃপক্ষের নজর এড়িয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। পরে রাজ্য পুলিশের সহায়তায় তাঁকে একটি বনের ভেতর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর গাড়ি থেকে মোড়ানো অবস্থায় একটি পিস্তল এবং প্রায় তিন হাজার ডলার নগদ উদ্ধার করা হয়।
প্রায় ৩০ হাজার শিক্ষার্থীর পরিচালনাধীন ওই স্কুল ডিস্ট্রিক্টে ২০২৩ সালে তাঁকে সুপারিনটেনডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। তবে আটক হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই তিনি পদত্যাগ করেন। তাঁর বার্ষিক বেতন ছিল দুই লাখ আশি হাজার ডলারেরও বেশি।
অভিযোগে বলা হয়েছে, চাকরির সময় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব যাচাইয়ের জন্য ব্যবহৃত একটি সরকারি ফর্মে তিনি নিজেকে মার্কিন নাগরিক হিসেবে মিথ্যা ঘোষণা দেন। সেই ফর্মটি ফেডারেল তদন্তের অংশ হওয়ায় বর্তমানে প্রকাশ করা হয়নি। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তিনি নিয়োগের সময় ড্রাইভিং লাইসেন্স ও সোশ্যাল সিকিউরিটি কার্ডও জমা দিয়েছিলেন।
তদন্তে জানা যায়, তিনি নব্বইয়ের দশকে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন এবং তাঁর কর্ম অনুমোদন ২০২০ সালে শেষ হয়ে যায়। এক অভিবাসন আদালত গত বছর তাঁকে দেশত্যাগের চূড়ান্ত নির্দেশ দেয়, যদিও তিনি শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন না। পরবর্তীতে তাঁর আপিল খারিজ হয়ে যায়। অভিযুক্তের আইনজীবীর দাবি, তাঁর আগের আইনজীবী ভুল তথ্য দিয়েছিলেন এবং তাঁকে বোঝানো হয়েছিল যে মামলা ইতোমধ্যে সমাধান হয়েছে।
গত ২ অক্টোবর তাঁকে ফেডারেল অস্ত্র আইনের মামলায় যুক্তরাষ্ট্র মার্শালসের হেফাজতে নেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি ৫৪ বছর বয়সে আইওয়া রাজ্যের একটি কারাগারে আটক আছেন। পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারের সময় গাড়ি থেকে পাওয়া অস্ত্র ছাড়াও তাঁর বাড়ি থেকে আরও তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়—দুটি পিস্তল, একটি রাইফেল এবং একটি শটগান।
আইন অনুযায়ী, অবৈধভাবে অস্ত্র রাখার অপরাধে সর্বোচ্চ ১৫ বছর এবং মিথ্যা তথ্য দেওয়ার অপরাধে ৫ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে।
গৃহ নিরাপত্তা বিভাগ জানিয়েছে, তাঁর অতীতে আরও কয়েকটি অস্ত্রসংক্রান্ত অভিযোগ ছিল—২০২০ সালে নিউইয়র্কে একটি অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার এবং ২০২১ সালে পেনসিলভানিয়ায় একটি ক্ষুদ্র অস্ত্র সংরক্ষণ আইন লঙ্ঘনের ঘটনা।
এই ঘটনাকে ঘিরে আইওয়ার শিক্ষা অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। স্কুল ডিস্ট্রিক্ট কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যেই একটি কনসালটিং ফার্মের বিরুদ্ধে মামলা করেছে, যারা ২০২৩ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছিল। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, প্রার্থীর ব্যাকগ্রাউন্ড যাচাই যথাযথভাবে করা হয়নি।
এদিকে, অঙ্গরাজ্যের অডিটর কার্যালয় ঘোষণা দিয়েছে যে, পুরো ডিস্ট্রিক্টের আর্থিক লেনদেন তদন্ত করা হবে। অভিযোগ উঠেছে, সাবেক সুপারিনটেনডেন্ট নিজের প্রভাব খাটিয়ে একটি প্রতিষ্ঠানকে চুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, যেখানে তিনি পূর্বে পরামর্শক হিসেবে কাজ করতেন।
ঘটনার প্রভাব রাজনীতিতেও পড়েছে। স্থানীয় শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান তাঁর সেনেট প্রচার কার্যক্রম বন্ধ করে দেন, যাতে সংকটময় সময়ে প্রতিষ্ঠানটিকে নেতৃত্ব দিতে পারেন। এদিকে, আগামী মাসে ভোটারদের কাছে ২৬৫ মিলিয়ন ডলারের এক বন্ড প্রস্তাব তোলা হচ্ছে, যা পাস হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভবন ও অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যয় হবে।



