Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeআপনার স্বাস্থ্যজয়েন্টে ব্যথা মানেই বাত নয় — জানুন অন্য সম্ভাব্য কারণগুলো

জয়েন্টে ব্যথা মানেই বাত নয় — জানুন অন্য সম্ভাব্য কারণগুলো

আমাদের শরীরের চলাফেরা, কাজকর্ম কিংবা ভারসাম্য রক্ষার ক্ষেত্রে জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধির ভূমিকা অপরিসীম। কিন্তু অনেকেই যখন জয়েন্টে ব্যথা অনুভব করেন, সঙ্গে সঙ্গেই ধরে নেন এটি “বাত” বা আর্থ্রাইটিসের লক্ষণ। বাস্তবে কিন্তু বিষয়টি সবসময় এমন নয়। জয়েন্টে ব্যথা মানেই বাত নয় — এই ব্যথার পেছনে আরও নানা কারণ থাকতে পারে।

জয়েন্ট ব্যথা সব সময় বাত নয়

‘বাত’ আসলে কোনো একক রোগ নয়, বরং এটি একাধিক রোগের একটি সাধারণ নাম। আর্থ্রাইটিস শব্দটি ব্যবহার করা হয় গাঁটে প্রদাহ বোঝাতে। এর মধ্যে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, অস্টিওআর্থ্রাইটিস, গাউট ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত। এসব রোগে সাধারণত জয়েন্টে ফোলাভাব দেখা দেয়, স্থানটি লালচে হয়ে যায়, ছুঁইলে গরম লাগে এবং নড়াচড়ায় ব্যথা বাড়ে।

অস্টিওআর্থ্রাইটিস সাধারণত বয়সজনিত কারণে দেখা দেয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জয়েন্টের হাড় ও তরুণাস্থি ক্ষয় হতে থাকে, ফলে হাড়ের ঘর্ষণ থেকে ব্যথা সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস হলো একটি অটোইমিউন রোগ, যেখানে শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভুল করে নিজের জয়েন্টকে আক্রমণ করে ফেলে। ফলে স্থায়ী প্রদাহ ও ব্যথা তৈরি হয়।


অন্যান্য সম্ভাব্য কারণ

জয়েন্ট ব্যথা শুধু বাতের কারণে নয়, অনেক সময় জয়েন্টের আশপাশের টিস্যু, টেন্ডন বা স্নায়ুতন্ত্র থেকেও ব্যথা উৎপন্ন হতে পারে।

১. টেন্ডিনাইটিস ও বার্সাইটিস:
জয়েন্টের চারপাশের টেন্ডন (যা পেশি ও হাড়কে যুক্ত রাখে) বা বার্সা (এক ধরনের তরল ভর্তি থলি)-তে প্রদাহ দেখা দিলে ব্যথা অনুভূত হয়। সাধারণত অতিরিক্ত পরিশ্রম, ভুল ভঙ্গিতে কাজ করা বা আঘাতের কারণে এসব সমস্যা হয়।

২. আঘাত বা অতিরিক্ত ব্যবহার:
খেলাধুলা, ভারী কাজ, বা একই ভঙ্গিতে বারবার কাজ করার ফলে জয়েন্টের আশপাশের পেশি ও লিগামেন্টে টান পড়ে, যা থেকে ব্যথা শুরু হতে পারে।


স্নায়ুতন্ত্র-সম্পর্কিত কারণ

অনেক সময় জয়েন্টের ব্যথা আসলে সেই জয়েন্টের নয়, বরং স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা থেকে সৃষ্ট

নার্ভ কম্প্রেশন:
যখন মেরুদণ্ড থেকে বেরিয়ে আসা কোনো স্নায়ুতে চাপ পড়ে (যেমন কোমরের ডিস্ক প্রোল্যাপস বা সায়াটিকা), তখন সেই ব্যথা পা বা হাতে থাকা জয়েন্ট পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই ব্যথাকে বলা হয় রেফার্ড পেইন। উদাহরণস্বরূপ, ঘাড়ের নার্ভে চাপ পড়লে কাঁধ বা কনুইয়ে ব্যথা অনুভূত হতে পারে।

পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি:
ডায়াবেটিসসহ কিছু রোগে হাত-পায়ের প্রান্তীয় স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে জয়েন্টের চারপাশে জ্বালাপোড়া, ঝিনঝিনি ভাব বা অসাড়তা দেখা দেয়।

ফাইব্রোমায়ালজিয়া ও অন্যান্য স্নায়বিক রোগ:
এই ধরনের রোগ শরীরের বিভিন্ন অংশে, বিশেষ করে জয়েন্টের চারপাশে, দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা সৃষ্টি করে, যা অনেক সময় বাতের ব্যথার মতো অনুভূত হয়।


করণীয়

জয়েন্টের ব্যথা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, সকালে বেশি তীব্র থাকে, জয়েন্ট ফুলে যায়, বা অসাড়তা ও ঝিনঝিনি ভাব দেখা দেয় — তাহলে নিজে থেকে ওষুধ না খেয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
বিশেষজ্ঞ পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে নির্ধারণ করতে পারেন ব্যথাটি আসলে বাতজনিত, নাকি স্নায়বিক বা পেশি–সম্পর্কিত। সঠিক নির্ণয় এবং সময়মতো চিকিৎসা নিলে জটিলতা এড়ানো সম্ভব।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments