Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeঅন্যান্যভেনেজুয়েলায় সিআইএর গোপন অভিযান: যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপে বাড়ছে বৈশ্বিক উদ্বেগ

ভেনেজুয়েলায় সিআইএর গোপন অভিযান: যুক্তরাষ্ট্রের পদক্ষেপে বাড়ছে বৈশ্বিক উদ্বেগ

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি নিশ্চিত করেছেন, তিনি দেশটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ)–কে ভেনেজুয়েলায় গোপন অভিযান পরিচালনার অনুমোদন দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক মহলে এ ঘোষণাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে তীব্র আলোচনার ঝড়। মূল উদ্দেশ্য হিসেবে ধরা হচ্ছে ভেনেজুয়েলার বর্তমান সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া।

ট্রাম্প প্রশাসনের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে ক্যারিবীয় সাগরে ভেনেজুয়েলার জাহাজে হামলা এবং ওই অঞ্চলে সেনা মোতায়েনের পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। এ ঘটনার পর ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এবং যুদ্ধের আশঙ্কা থেকে সবাইকে সতর্ক থাকার অনুরোধ করেছেন।


ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান

হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট বলেন, ভেনেজুয়েলার বিরুদ্ধে এই পদক্ষেপ নেওয়ার পেছনে দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, দেশটি নাকি তাদের কারাগারের বন্দীদের যুক্তরাষ্ট্রে পাঠাচ্ছে; দ্বিতীয়ত, মাদক পাচারের অভিযোগ। তাঁর দাবি, ভেনেজুয়েলা থেকে বিপুল পরিমাণ মাদক যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করছে—যার বেশির ভাগই সাগরপথে।

যখন সাংবাদিকেরা জানতে চান, সিআইএর মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের অনুমতি দেওয়া হয়েছে কি না, প্রেসিডেন্ট এ বিষয়ে সরাসরি উত্তর দেননি। বরং তিনি বলেন, “আমি এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে চাই না, তবে বলা যায় ভেনেজুয়েলা এখন চাপের মুখে রয়েছে।”


মার্কিন অভিযানের বাস্তব চিত্র

যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে ভেনেজুয়েলার জলসীমায় অন্তত পাঁচবার জাহাজে হামলা চালিয়েছে, যার প্রতিটিতেই প্রাণহানি ঘটেছে। সর্বশেষ হামলায় ছয়জন নিহত হন। প্রেসিডেন্টের দাবি, ওই জাহাজগুলোতে মাদক বহন করা হচ্ছিল, তবে এ সংক্রান্ত কোনো প্রমাণ এখনও প্রকাশ পায়নি।

সমালোচকেরা বলছেন, এ ধরনের হামলা আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের শামিল। কারণ, সমুদ্র আইন ও জাতিসংঘ সনদ অনুযায়ী কোনো দেশের জাহাজে এভাবে হামলা চালানো যায় না, বরং তদন্ত ও সহযোগিতার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে হয়।


আইনগত প্রশ্ন ও সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া প্রেসিডেন্ট কোনো সামরিক বা গোপন অভিযান পরিচালনা করতে পারেন না। যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান ও ১৯৭৩ সালের ‘ওয়ার পাওয়ারস রেজল্যুশন’ অনুযায়ী, কোনো সামরিক অভিযান শুরু করলে প্রেসিডেন্টকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কংগ্রেসকে জানাতে হয়।

একজন সংবিধান বিশ্লেষক বলেন, “যদি যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি আক্রমণের শিকার না হয়, তাহলে কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া প্রেসিডেন্টের পক্ষে যুদ্ধ শুরু করা বেআইনি।”

এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ভেনেজুয়েলার কিছু মাদক চক্রকে বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা করেছে—যা অনেকের মতে আইনি প্রক্রিয়ার পরিপন্থী।


ভেনেজুয়েলার প্রতিক্রিয়া

ভেনেজুয়েলা যুক্তরাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে। দেশটির সরকারের দাবি, এই অভিযান আসলে ভেনেজুয়েলায় সরকার পরিবর্তনের জন্য বৈধতা তৈরি করার কৌশল। প্রেসিডেন্ট মাদুরো প্রকাশ্যে বলেছেন, “আমরা কোনো বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপ চাই না, লাতিন আমেরিকার প্রয়োজন শান্তি, যুদ্ধ নয়।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই পরিস্থিতি মাদুরোর অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে পারে। কারণ, জনগণের সামনে তিনি আবারও নিজেকে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষাকারী হিসেবে তুলে ধরছেন।


লাতিন আমেরিকার প্রতিক্রিয়া

লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশ এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কলম্বিয়া, কিউবা, বলিভিয়া ও নিকারাগুয়া এ ধরনের পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছে। বিশেষ করে কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট সতর্ক করে বলেছেন, “যদি ভেনেজুয়েলায় সংঘাত শুরু হয়, তার প্রভাব আমাদের দেশেও পড়বে।”

এ ঘটনার পর লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে পুরো অঞ্চলে অস্থিতিশীলতা তৈরি হতে পারে।


সিআইএর ইতিহাস ও ভবিষ্যৎ ঝুঁকি

ইতিহাস বলে, লাতিন আমেরিকায় সিআইএর ভূমিকা সব সময়ই বিতর্কিত ছিল। ১৯৫০ থেকে ৮০-এর দশক পর্যন্ত তারা বহু দেশে সরকার পরিবর্তন এবং গোপন অভিযানে জড়িত ছিল। এবার ভেনেজুয়েলায় সেই ইতিহাস আবারও পুনরাবৃত্তি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যদি পরিস্থিতি যুদ্ধের দিকে গড়ায়, তবে এটি কেবল দুই দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না—বরং লাতিন আমেরিকার সামগ্রিক নিরাপত্তা, অর্থনীতি ও মানবাধিকার পরিস্থিতির ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে।

২০১৪ সাল থেকে চলমান অর্থনৈতিক সংকটে এখন পর্যন্ত প্রায় ৮০ লাখ মানুষ ভেনেজুয়েলা ছেড়ে অন্য দেশে পাড়ি জমিয়েছে। নতুন করে সংঘাত শুরু হলে এই শরণার্থী সংকট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।


উপসংহার

সিআইএর গোপন অভিযান ও যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর অবস্থান লাতিন আমেরিকায় নতুন করে অস্থিরতা তৈরি করেছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন নজর রাখছে—এই উত্তেজনা শেষ পর্যন্ত কূটনৈতিক সমাধানে পৌঁছাবে নাকি নতুন এক যুদ্ধের জন্ম দেবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments