Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeবিজনেসনেসলে ১৬ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা ঘোষণা করলো নতুন সিইও

নেসলে ১৬ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা ঘোষণা করলো নতুন সিইও

নেসলে, বিশ্বের অন্যতম প্রধান খাদ্য ও পানীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, সাম্প্রতিক এক ঘোষণা দিয়ে ১৬ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কোম্পানির নতুন প্রধান নির্বাহী (সিইও) এ পদক্ষেপের পেছনে খরচ কমানো এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধার করা মূল উদ্দেশ্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

বর্তমানে নেসলে প্রায় ২ লাখ ৭৭ হাজার কর্মী নিয়োগপ্রাপ্ত। ঘোষিত ছাঁটাইয়ের সংখ্যা মোট কর্মীবাহিনীর প্রায় ৫.৮ শতাংশের সমান। নতুন সিইও জানিয়েছেন, খরচ সাশ্রয়ের লক্ষ্য ২০২৭ সালের মধ্যে প্রায় ৩৭৭ কোটি ডলার পর্যন্ত উন্নীত করা হবে।

বিশ্ববাজারে নেসলের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি, যদিও দেশটিতে বিক্রি হওয়া বেশির ভাগ পণ্য স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত। একই সঙ্গে বিশ্বজুড়ে খাদ্য উৎপাদকরা ভোক্তাদের পরিবর্তিত আচরণ এবং স্বাস্থ্যকর খাবারের চাহিদা বৃদ্ধির মুখোমুখি। নতুন সিইও বলেন, “বিশ্ব দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে—নেসলকেও তার সাথে খাপ খাইয়ে চলতে হবে।”

নেসলে সম্প্রতি নেতৃত্বসংকটের মধ্য দিয়ে গেছে। সেপ্টেম্বর মাসে তৎকালীন প্রধান নির্বাহী গোপন সম্পর্কের অভিযোগে বরখাস্ত হন। তাঁর জায়গায় নতুন সিইও দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দুই সপ্তাহের মধ্যেই চেয়ারম্যান পদেও পরিবর্তন হয়। এসব অস্থিরতা সত্ত্বেও কোম্পানির শেয়ারমূল্য বৃহস্পতিবার প্রায় ৮ শতাংশ বেড়ে যায়।

নতুন ছাঁটাই পরিকল্পনা অনুযায়ী, আগামী দুই বছরে অফিসকর্মী হিসেবে ১২ হাজার কর্মী ছাঁটাই করা হবে। উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার সংস্কারের অংশ হিসেবে আরও ৪ হাজার কর্মী কমানো হবে। কোম্পানির লক্ষ্য মূলত কার্যকারিতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি করা।

নেসলে কিটক্যাট, নেসপ্রেসো এবং ম্যাগির মতো বিশ্বখ্যাত পণ্য তৈরি করে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিক্রির হ্রাস, ব্যয় বৃদ্ধি এবং ঋণের চাপের কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক এবং বাজার প্রতিযোগিতার চাপ কোম্পানির উপর আরও কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিশ্লেষক সংস্থাগুলো এই ছাঁটাইকে ‘অপ্রত্যাশিত কিন্তু সাহসী পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেছে।

বছরের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে নেসলের বাস্তব অভ্যন্তরীণ প্রবৃদ্ধি (আরআইজি) ছিল ১.৫ শতাংশ, যা বিশ্লেষকদের প্রত্যাশিত ০.৩ শতাংশের তুলনায় অনেক বেশি। নতুন সিইও বলেন, “আমাদের অগ্রাধিকার হলো আরআইজি–নির্ভর প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা। আমরা এমন কর্মসংস্কৃতি তৈরি করছি যেখানে দক্ষতা মূল্যায়িত হবে, বাজার হারানোর সংস্কৃতি নয়।”

কোম্পানি জানিয়েছে, তাদের পানীয়, প্রিমিয়াম বেভারেজ এবং কম মুনাফার ভিটামিন–সাপ্লিমেন্ট ব্যবসার কৌশলগত পর্যালোচনা চলছে। সুইস কোম্পানি নেসলে ২০২৫ সালের আর্থিক লক্ষ্য অপরিবর্তিত রেখেছে। অর্গানিক পণ্যের বিক্রয় ও মুনাফা বৃদ্ধি নিশ্চিত করা হবে।

নেসলে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে সুইস পণ্যের ওপর আগস্ট থেকে ৩৯ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। খরচ সাশ্রয়ের বড় অংশ ২০২৬–২৭ সালে বাস্তবায়িত হবে। তবে ২০২৫ সালের জন্যও সাশ্রয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বিক্রয়ে যে বৃদ্ধি এসেছে, তা মূলত কফি ও কনফেকশনারি পণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণে। তবে চীনের বাজারে এখনো চাহিদা প্রত্যাশার তুলনায় কম।

প্রধান অর্থ কর্মকর্তা জানান, চীনে বিতরণ বিস্তারে অতিরিক্ত মনোযোগ দেওয়া হলেও ভোক্তা চাহিদা তৈরিতে যথেষ্ট কাজ হয়নি। এখন বিতরণ ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর করার পাশাপাশি চাহিদা বৃদ্ধিতে জোর দেওয়া হচ্ছে।

নেসলের এই পদক্ষেপ একটি কঠিন বাস্তবতার প্রতিফলন, যা খরচ কমানো, কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং বিশ্ববাজারের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments