ফুটবল প্রেমীদের মধ্যে এক যুগ ধরে আলোচিত বিষয় হলো নেইমারের জাতীয় দলে ফেরার সম্ভাবনা। দুই বছর আগে ঘটে যাওয়া একটি মারাত্মক চোটের পর থেকে ব্রাজিলের এই তারকা খেলোয়াড়কে জাতীয় দলের জার্সিতে দেখা যাচ্ছে না। ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে উরুগুয়ের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে একটি ধাক্কা খেলোয়াড়ের জন্য পরিণত হলো বড় চ্যালেঞ্জে। বাঁ পায়ের লিগামেন্ট ও মিনিসকাসিস ছিঁড়ে যাওয়া এসিএল চোট নেইমারের খেলোয়াড় জীবনকে প্রভাবিত করেছে, এবং এরপর থেকে তিনি দীর্ঘ সময় মাঠের বাইরে থাকতে বাধ্য হয়েছেন।
চোটের পর থেকে নেইমার ধীরে ধীরে ক্লাব ফুটবলে ফিরেছেন। কিন্তু বারবার নতুন চোটের কারণে মাঠে নিয়মিত খেলতে পারেননি। সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত দুই বছরে ৭৩১ দিনের মধ্যে ৫২৯ দিন তিনি চোটের কারণে খেলেননি, যা ৭২ শতাংশ সময়ের সমান। এই অনুপস্থিতির কারণে তার জাতীয় দলে ফেরার প্রশ্নও জটিল হয়ে উঠেছে। ক্লাব ফুটবলে নিয়মিত মাঠে না নামা ছাড়া জাতীয় দলের জন্য বিবেচনা করা কঠিন।
বর্তমানে ব্রাজিল জাতীয় দল নেইমারের অনুপস্থিতিতেও ভালো পারফরম্যান্স করছে। ভিনিসিয়ুস, রাফিনিয়া এবং রদ্রিগো জাতীয় দলের আক্রমণ ভাগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। গোল করার দায়িত্ব একাধিক খেলোয়াড় ভাগাভাগি করে নিচ্ছেন, যা দেখাচ্ছে যে নেইমারের অভাব দলকে পুরোপুরি প্রভাবিত করতে পারেনি। এছাড়া লুকাস পাকেতা ও ব্রুনো গিমারেস মধ্যমাঠে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে গোল তৈরি করছেন।
জাতীয় দলের কোচ বারবার জানিয়েছেন নেইমারের জন্য জাতীয় দলের দরজা খোলা, তবে তিনি পুরোপুরি ফিট হতে হবে। শারীরিক সুস্থতা এক দিকে থাকলেও কৌশলগতভাবে তার খেলার প্রভাব দেখাতে পারাটাও জরুরি। শুধুমাত্র ফিট থাকা মানে নয়, বরং ম্যাচে নিজের খেলা দিয়ে প্রতিপক্ষকে প্রভাবিত করতে পারাটাও গুরুত্বপূর্ণ। নেইমারের ড্রিবলিং এবং বলের ব্যবহার জাতীয় দলে তার প্রভাবিত হওয়ায় সীমিত।
প্রতি মাসের প্রীতি ম্যাচ এবং বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচে নেইমারের অনুপস্থিতি স্পষ্ট। আগামী ২৩তম ফিফা বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য ব্রাজিলের স্কোয়াড চূড়ান্ত করার সময়ও তিনি না থাকতে পারেন। ইতালিয়ান কোচের আক্রমণ ভাগে ভিনি ও ম্যাথিয়াস কুনিয়া বিভিন্ন পজিশনে খেলে দলকে ভারসাম্যপূর্ণ রেখেছেন, যা নেইমারের জায়গা নিয়ে সন্দেহ সৃষ্টি করছে।
ক্লাব ফুটবলে সান্তোসে ফিরলেও নেইমারের খেলার ধারা এখনো সম্পূর্ণ ফিট নয়। ৩৩ বছর বয়সী এই তারকার শারীরিক অবস্থার কারণে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়মিত অংশগ্রহণ এখনো নিশ্চিত নয়। এমন অবস্থায় ২০২৬ বিশ্বকাপে নেইমারের উপস্থিতি কতটা সম্ভব, সেটি এখনও অনিশ্চিত।
শেষ পর্যন্ত, নেইমারের জাতীয় দলে ফেরার সম্ভাবনা পুরোপুরি তার শারীরিক ফিটনেস, কৌশলগত প্রভাব এবং নিয়মিত ম্যাচে অংশগ্রহণের ওপর নির্ভর করছে। তবে অনেকে মনে করছেন, দুই বছরের চোটের অভিজ্ঞতা ও বর্তমান দলের সমন্বয় নেইমারের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।



