Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeআপনার স্বাস্থ্যপেটের ওষুধ মেট্রোনিডাজল: সঠিক ব্যবহার না করলে বিপদের কারণ

পেটের ওষুধ মেট্রোনিডাজল: সঠিক ব্যবহার না করলে বিপদের কারণ

দেশে অনেকেই মেট্রোনিডাজলকে পেটের রোগের ওষুধ হিসেবে সাধারণভাবে ব্যবহার করেন। এই ওষুধটি মূলত অ্যান্টিবায়োটিক এবং অ্যান্টি-প্রোটোজোয়াল হিসেবে পরিচিত। এটি ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন সংক্রমণের চিকিৎসায়, যেমন আমাশয়, জরায়ু বা দাঁতের সংক্রমণ এবং অন্যান্য অ্যানেরোবিক ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগে। কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া বা অতিরিক্ত মাত্রায় এই ওষুধ ব্যবহার করা মারাত্মক সমস্যার কারণ হতে পারে।

অতিরিক্ত মেট্রোনিডাজল সেবন শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো স্নায়ুতন্ত্রের ওপর প্রভাব। দীর্ঘ সময় বা বেশি মাত্রায় ওষুধ নিলে পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি দেখা দিতে পারে। এর ফলে হাত-পায়ে অসাড়তা, ঝিনঝিন করা বা জ্বালাপোড়া অনুভূত হতে পারে। বিরল ক্ষেত্রে এটি মস্তিষ্কের কার্যকারিতাতেও প্রভাব ফেলে, যার ফলে দেখা দেয় ঝাপসা দৃষ্টি, মাথা ঘোরা, কাঁপুনি এবং গুরুতর ক্ষেত্রে খিঁচুনি। এই ধরনের স্নায়বিক সমস্যা সাধারণত এনসেফালোপ্যাথি নামে পরিচিত। এছাড়া ভারসাম্য বজায় রাখতে সমস্যা হতে পারে, হাঁটার সময় মাথা ঘোরা বা চক্কর দেয়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়।

অপর একটি বড় ঝুঁকি হলো অ্যান্টিবায়োটিক-প্রতিরোধ। অপ্রয়োজনীয় বা অর্ধেক সেবিত মেট্রোনিডাজল জীবাণুর মধ্যে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি করে। এর ফলে ভবিষ্যতে যখন সত্যিই ওষুধটি প্রয়োজন, তখন এটি কার্যকর হয় না। এটি শুধুমাত্র ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যের জন্য নয়, জনস্বাস্থ্যেও হুমকিস্বরূপ।

মেট্রোনিডাজলের অতিরিক্ত ব্যবহার লিভারের ওপরও চাপ ফেলে। এর ফলে লিভারের সমস্যা দেখা দিতে পারে, যা জন্ডিসের লক্ষণ হিসেবে ত্বক এবং চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যায়। লিভারের কার্যকারিতার ব্যাঘাত শরীরের অন্যান্য অংশকেও প্রভাবিত করতে পারে।

এছাড়া, এই ওষুধের সঙ্গে অ্যালকোহল গ্রহণ করলে তীব্র পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। সামান্য অ্যালকোহলও বমি বমি ভাব, বমি, তীব্র মাথাব্যথা এবং বুকে ধড়ফড়ানি সৃষ্টি করতে পারে। এমন প্রতিক্রিয়া কখনও কখনও জীবন হুমকির কারণ হতে পারে।

অতিরিক্ত ডোজে বা দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও বেড়ে যায়। যেমন, বমি বমি ভাব, ডায়রিয়া, মুখে ধাতব বা টক স্বাদ এবং তীব্র মাথাব্যথা। এই লক্ষণগুলো সাধারণ সমস্যা হলেও বেশি মাত্রায় স্বাস্থ্যঝুঁকির রূপ নিতে পারে।

চিকিৎসাবিদদের মতে, মেট্রোনিডাজল একটি জীবনরক্ষাকারী ওষুধ হলেও এটি অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবহার করতে হবে। ডোজের মাত্রা এবং ব্যবহারকাল যথাযথ হওয়া জরুরি। নিজের ইচ্ছামতো ওষুধের কোর্স শুরু বা শেষ করা গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা অতিরিক্ত মাত্রার লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

সতর্কতা এবং সঠিক ব্যবহার ছাড়া এই সাধারণ পেটের ওষুধই বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই মেট্রোনিডাজল ব্যবহার করার সময় সাবধান থাকা এবং চিকিৎসকের নির্দেশ মেনে চলা অপরিহার্য।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments