Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeঅন্যান্যগাজা যুদ্ধবিরতির পরও রয়ে গেছে ছয়টি অনুত্তরিত প্রশ্ন

গাজা যুদ্ধবিরতির পরও রয়ে গেছে ছয়টি অনুত্তরিত প্রশ্ন

গাজা যুদ্ধবিরতির পর একদিকে মুক্তি পেয়েছেন ইসরায়েলি জিম্মিরা, অন্যদিকে ফেরত আসছে নিহতদের দেহাবশেষ—যারা হয় হামাসের প্রথম হামলায় কিংবা বন্দিত্বে প্রাণ হারিয়েছিলেন। প্রায় দুই হাজার ফিলিস্তিনি বন্দীও মুক্তি পেয়েছে ইসরায়েলের কারাগার থেকে।

গত ২৯ সেপ্টেম্বর ঘোষিত ২০ দফা গাজা যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা এ পর্যন্ত এই সাফল্য অর্জন করেছে। পুনর্মিলনের আবেগঘন মুহূর্তগুলো বিশ্বের মানুষকে নাড়া দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতার কঠিন অধ্যায় এখনো শুরু হয়নি। কারণ, পরিকল্পনার বাস্তবায়ন নিয়ে সামনে এসেছে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।


হামাস কি অস্ত্র ছাড়বে?

চুক্তি অনুযায়ী গাজাকে সম্পূর্ণভাবে ‘নিরস্ত্রীকৃত অঞ্চল’ হিসেবে গড়ে তোলা হবে, যার অন্তর্ভুক্ত থাকবে হামাসের অস্ত্র ধ্বংসের বিষয়টিও—এবং তা স্বাধীন আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের তত্ত্বাবধানে।

তবে কে হবে সেই পর্যবেক্ষক, কীভাবে এই প্রক্রিয়া চলবে, কত সময় লাগবে—এখনও কিছুই স্পষ্ট নয়। হামাস বহু আগেই ঘোষণা করেছে, তারা কেবল তখনই অস্ত্র ছাড়বে যখন একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হবে।
একই সঙ্গে কঠোর সতর্কবার্তাও এসেছে—যদি হামাস নিজে থেকে অস্ত্র না ছাড়ে, তবে তাদেরকে নিরস্ত্র করা হবে বলেও জানানো হয়েছে।


গাজা কে পরিচালনা করবে?

পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, গাজার দৈনন্দিন প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালিত হবে একটি “অরাজনৈতিক, প্রযুক্তিনির্ভর ফিলিস্তিনি কমিটি”র মাধ্যমে, যা অস্থায়ী ভিত্তিতে দায়িত্ব পালন করবে। এই কমিটি তত্ত্বাবধান করবে একটি আন্তর্জাতিক পরিষদ, যার নাম দেওয়া হয়েছে “বোর্ড অব পিস।”

এই পরিষদের সভাপতি হিসেবে থাকবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং তাঁর সঙ্গে থাকবেন সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। অন্য সদস্যদের নাম এখনো প্রকাশ করা হয়নি।
পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে—হামাস কোনোভাবেই, সরাসরি বা পরোক্ষভাবে, এই প্রশাসনে অংশ নিতে পারবে না।


যুদ্ধবিরতি কতটা টিকবে?

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এটিই।
ইতিমধ্যে কিছু টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে, বিশেষ করে মৃত ইসরায়েলি নাগরিকদের দেহ ফেরত আনার গতি নিয়ে। রিপোর্ট অনুযায়ী, ইসরায়েল হামাসের বিরুদ্ধে চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ তুলে গাজায় পাঠানো সাহায্যের পরিমাণ অর্ধেকে নামিয়ে এনেছে।
অন্যদিকে, কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পরও নতুন সহিংসতায় অন্তত সাতজন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।


আঞ্চলিক চাপ কি বজায় থাকবে?

হামাসকে আলোচনার টেবিলে আনতে কাতার, তুরস্ক ও মিশরের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষত, বন্দিমুক্তি ও যুদ্ধবিরতির বিনিময় চুক্তি বাস্তবায়নে তাদের চাপই কাজ করেছে।
এখন প্রশ্ন হলো—আরব দেশগুলো কি এই চাপ অব্যাহত রাখবে? কারণ, হামাসকে নিরস্ত্রীকরণ এবং পরবর্তী ধাপগুলো সফল করতে আঞ্চলিক সমন্বয়ই সবচেয়ে বড় চাবিকাঠি।


গাজা পুনর্গঠন কে করবে এবং কিভাবে?

দীর্ঘ যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞে গাজার বড় অংশ এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী, অঞ্চলটিকে নতুনভাবে গড়ে তোলা হবে—মধ্যপ্রাচ্যের “রিভিয়েরা” বানানোর স্বপ্নও দেখানো হয়েছে।
একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা জানিয়েছে, প্রায় ৭০ বিলিয়ন ডলারের পুনর্গঠন প্রকল্প হাতে নেওয়ার আগ্রহ দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন দেশের মধ্যে। তবে শর্ত একটাই—যুদ্ধবিরতি স্থায়ী হতে হবে এবং প্রশাসনিক কাঠামো স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত কেউ বিনিয়োগে এগোবে না।


দুই রাষ্ট্র সমাধানের ভবিষ্যৎ কী?

দীর্ঘদিন ধরেই ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যে “দুই রাষ্ট্র সমাধান” নিয়ে আলোচনা চলেছে, কিন্তু বাস্তবে তা দিন দিন আরও দূরে সরে যাচ্ছে।
ইসরায়েলি বসতি সম্প্রসারণ, হামাসের অস্তিত্ব, এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের দুর্বলতা—সব মিলিয়ে এই সমাধান বাস্তবায়ন এখন আরও জটিল।

পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, গাজার পুনর্গঠন ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের সংস্কার কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হলে একসময় ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ‘বাস্তবসম্মত পথ’ তৈরি হতে পারে। অর্থাৎ, পরিকল্পনাটি তাদের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষাকে স্বীকৃতি দিলেও, স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি।


সামগ্রিকভাবে, যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের পথ এখনো কণ্টকাকীর্ণ। শান্তির সূচনা হয়েছে, কিন্তু স্থায়ী সমাধানের পথে উত্তরহীন প্রশ্নগুলোই হয়তো আগামী দিনগুলোর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments