Thursday, November 20, 2025
spot_img
Homeএডুকেশনসোশ্যাল মিডিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহার, পড়াশোনা ও স্মৃতিশক্তিতে নেতিবাচক প্রভাব

সোশ্যাল মিডিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহার, পড়াশোনা ও স্মৃতিশক্তিতে নেতিবাচক প্রভাব

নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, অল্প বয়সে সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার শিশুদের মানসিক বিকাশ ও শেখার ক্ষমতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রে পরিচালিত এই গবেষণাটি জার্নাল অব দি আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (JAMA)–এ প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে ৯ থেকে ১৩ বছর বয়সী শিশুদের ওপর তথ্য সংগ্রহ করে দেখা গেছে—যেসব শিশু প্রতিদিন বেশি সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় কাটায়, তাদের পড়া, স্মৃতি ও শব্দভান্ডার পরীক্ষায় পারফরম্যান্স তুলনামূলকভাবে কম।

গবেষণার ফলাফল প্রকাশের পর থেকেই শিক্ষাব্যবস্থা ও শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রের বহু স্কুল জেলা ইতিমধ্যে বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করেছে, অভিযোগ—তাদের প্ল্যাটফর্ম শিশুদের একাগ্রতা ও মানসিক ভারসাম্য নষ্ট করছে, যার ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে আচরণগত ও একাডেমিক সমস্যা সামলাতে অতিরিক্ত সময় ও সম্পদ ব্যয় করতে হচ্ছে।

শুধু তাই নয়, অনেক স্কুলে এখন শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা আরোপ করা হচ্ছে। অন্তত ৩১টি অঙ্গরাজ্য ও ওয়াশিংটন ডিসিতে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফোন ব্যবহার আংশিক বা পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শিক্ষা বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই পদক্ষেপ শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মানোন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

গবেষণার প্রধান গবেষক, ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির এক অধ্যাপক ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ, বলেন—“এখনও অনেক প্রশ্নের উত্তর অজানা যে, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার কীভাবে শিশুদের বিকাশমান মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে। অভিভাবক ও শিক্ষকরা জানতে চান, কত বছর বয়সে শিশুদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করা উচিত, এবং এটি তাদের শেখা ও স্মৃতিশক্তিতে কীভাবে প্রভাব ফেলে।”

গবেষণায় যুক্ত ছিল ৬,৫৫৪ শিশুর তথ্য, যাদের তিনটি পর্যায়ে (২০১৬–২০২০ সালের মধ্যে) পর্যবেক্ষণ করা হয়। শিশুদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ধরনকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়—

  • খুব কম বা প্রায় না ব্যবহার (৫৮%)

  • সামান্য বাড়তি ব্যবহার (৩৭%)

  • উচ্চমাত্রায় বাড়তি ব্যবহার (৬%)

গবেষণায় দেখা যায়, যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় বাড়িয়েছে, তারা গড়ে পড়া ও স্মৃতি পরীক্ষায় ১–৪ পয়েন্ট কম পেয়েছে। সবচেয়ে বেশি ব্যবহাকারীরা তুলনামূলকভাবে চার পয়েন্ট কম স্কোর করেছে। বয়স, লিঙ্গ, জাতিগত পটভূমি ও পারিবারিক আর্থিক অবস্থার মতো বিষয় বিবেচনায় নিয়েও এই পার্থক্য স্পষ্ট ছিল।

একজন মনোবিজ্ঞান অধ্যাপক বলেন, “এটি ছোট একটি পার্থক্য হলেও গুরুত্বপূর্ণ। সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে শিশুরা দীর্ঘ লেখালেখি বা জটিল শব্দের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ হারায়। ছোট ছোট ভিডিও বা সংক্ষিপ্ত বার্তা পড়তে পড়তে তাদের ভাষা বিকাশের গতি ধীরে যেতে পারে।”

গবেষকদল আরও মনে করেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশি সময় কাটানোর কারণে শিশুদের পড়াশোনা, ঘুম বা বিশ্রামের সময় কমে যাচ্ছে। এক অ্যাপ থেকে অন্য অ্যাপে ঘনঘন পরিবর্তন, ক্রমাগত নোটিফিকেশন ও ছোট ভিডিওর ধারাবাহিক প্রবাহ শিশুদের মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা হ্রাস করছে।

তারা সতর্ক করে বলেন, “এই গবেষণাটি মাত্র দুই বছরের পর্যবেক্ষণের ওপর ভিত্তি করে, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রভাব আরও বাড়তে পারে। কোটি কোটি শিশুর ওপর এমন প্রভাব পড়লে সেটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে।”

এই গবেষণা স্পষ্টভাবে দেখিয়েছে—সোশ্যাল মিডিয়ার ক্রমবর্ধমান ব্যবহার শিশুদের মানসিক বিকাশে এক নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে। অভিভাবক ও শিক্ষকদের এখনই সতর্ক হতে হবে এবং শিশুদের অনলাইন সময় নিয়ন্ত্রণে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -
Google search engine

Most Popular

Recent Comments